পাহাড়ের পাদদেশে প্রকৃতি যেন তার অকৃত্রিম ভালবাসায় গড়ে তুলেছে চট্টগ্রামের ভাটিয়ারী গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবটি। এখানে প্রকৃতির সব কিছুই রয়েছে পর্যটক ও খেলাপিপাসুদের জন্য। দিনের বেলায় প্রকৃতি তার পরিপূর্ণ ভালবাসা দিয়ে এ আঙ্গিনাকে যেমন প্রস্ফুটিত করে তেমনি রাতে কৃত্রিমতা যেন সাজিয়ে তোলে রঙ্গিনরূপে। একই আঙ্গিনায় উভয় প্রতিচ্ছবি দেখে অনেকে অবাক দৃষ্টিতে চেয়ে থাকেন ক্লাবের দিকে। সকালের শিশিরে যদি ক্লাবের মাঠে পা ভেজানো যায় মন্দ নয়। এমন ভেবে অনেক পেস্নয়ারই বুট খুলে আলতোভাবে শিশিরের ছোঁয়া নেন। বাস্তবতা এখানে প্রকৃতির কারণেই সার্থক হয়ে উঠেছে। তাই অনেক-সুবিশাল পাহাড়ে ঘেরা পাদদেশে এই ক্লাবের দৃষ্টিনন্দন চেহারা পথভোলা পথিককেও থমকে দাঁড়াতে বাধ্য করে। কিন্তু সুযোগ নেই সদস্য ছাড়া ভেতরে প্রবেশের।
প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যে গড়ে ওঠা ভাটিয়ারী গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাব দেশের প্রায় ১২টি গলফ ক্লাবের মধ্যে সেরা। এমন সুবিশাল আয়তনের ও প্রাকৃতিক সোন্দর্যের অধিকারী এ ক্লাবের সদস্য প্রায় ৮শ’। চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরেই ভাটিয়ারী গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবটি প্রকৃতিকে জড়িয়ে রেখেছে। ভাটিয়ারী-হাটহাজারী সড়কে মিনিট খানেক গাড়ি এগুলেই পাহাড়ীপথের শুরুটাই এমন যে তাক লাগিয়ে দেয় আগতদের। রাস্তার দু’ধারে রয়েছে জোড়া লেক। পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে ওঠা এ মাঠের দৈর্ঘ্য প্রায় সাড়ে ছয় হাজার গজ। ক্লাবের সামনেই রয়েছে এক গলফারের ভাস্কর্য।
সীতাকুণ্ডে, ভ্রমণকারীদের জন্য ভাটিয়ারী গলফ ক্লাব অন্যতম একটি আকর্ষনীয় স্থান যা প্রাকৃতিক জলাধার এবং পাহাড় দিয়ে আবৃত। এখানে বিভিন্ন ধরনের এবং বিভিন্ন জাতের গাছ, পশু এবং পাখি দেখা যায়। এ থেকেই বুঝা যায় যে এই এলাকাও প্রাকৃতিক সৌর্ন্দয্যে পরিপূর্ণ। যদিও এই এলাকা বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমীর নিয়ন্ত্রণাধীন, ভ্রমণকারীরা যথাযথ কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমতি সাপেক্ষে এ এলাকা ভ্রমণ করতে পারবেন।
আপনি এলাকায় প্রবেশ করার সময় কোন ক্যামেরা, রেকডিং ডিভাইস আনতে পারবেন না এবং আপনি এ এলাকার কোন ছবি তুলতে পারবেন না। এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং সবচেয়ে মানসম্পন্ন গলফ ক্লাব। এখানে সারা বছর ধরে নানা দেশী এবং আর্ন্তজাতিক গলফ টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। খেলা ছাড়াও এই এলাকা পিকনিক স্পট হিসেবেও ব্যবহার করা হয়, তবে এ এলাকায় পিকনিক করতে হলে কিছু নিয়মকানুন বা শর্ত মানতে হয় যা যথাযথ কর্তৃপক্ষ অনুমতি দানের সময় জানিয়ে দেন যেমন: এলাকায় রান্না করা যাবে না খাবার, খাবার পানি বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হবে এবং এ এলাকা নোংরা করা যাবে না। তাই পিকনিক করার আগেই যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হবে।
ভাটিয়ারী গলফ ক্লাব এলাকাটি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কর্তৃক সংরক্ষিত। তাই এই এলাকায় নিয়ম লঙ্ঘন করা, প্রকৃতি এবং মানুষের অনিষ্ট করার কোন অবকাশ নেই। যারা প্রকৃতিকে খুব কাছ থেকে দেখতে এবং অনুভব করতে চান তাদের অবশ্যই এই এলাকাটি ভ্রমণ করতে হবে।
যেভাবে যেতে হবে: চট্টগ্রাম শহর থেকে মাত্র ১৫ কিমি দূরেই সীতাকুণ্ড উপজেলায় ভাটিয়ারী গলফ অ্যান্ড কান্ট্রি ক্লাবটি অবস্থিত। ভাটিয়ারী-হাটহাজারী সড়কে মিনিটখানেক গাড়ি এগুলেই পৌঁছে যাওয়া যায় গলফ ক্লাবে।
কোথায় থাকবেন: তবে সীতাকুণ্ডে কোন ভাল আবাসিক হোটেল নেই, তাই রাতে থাকতে হলে চট্টগ্রাম শহরে চলে যেতে হবে। তবে সীতাকুণ্ডে ৬টি ধর্মশালা আছে যার ৩টি বাংলাদেশ রেলওয়ের, যেগুলো ব্রিটিশ সরকার তৈরি করে ছিল। অনুমতি নিয়ে এখানে থাকতে পারেন। শিবর্তুদশী মেলার সময় এই ধর্মশালাগুলো ছাড়াও কিছু সাময়িক হোটেলে আগতরা থাকতে পারে।
পাহাড়ঘেরা এই এলাকায় রাতে চলাচল অনেকটা ঝুঁকিপূর্ণ মনে হলেও চট্টগ্রাম ক্যান্টনমেন্টকেন্দ্রিক হওয়ায় ঐ সমস্যা মোটেও নেই। বিশেষ করে টুর্নামেন্টের দিনগুলোতে এ ক্লাবকে আলোকসজ্জায় সাজিয়ে তোলা হয়। রাতের কৃত্রিম দর্শনই অন্যরকম।
বিবার্তা/জিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]