শিরোনাম
ভ্রমণ নিয়ে কয়েক পঙক্তি
প্রকাশ : ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ১১:১১
ভ্রমণ নিয়ে কয়েক পঙক্তি
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রয়াত সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় লিখেছেন,


‘তিনটে চারটে ছদ্মনামে


আমার ভ্রমণ মর্ত্যধামে।’


ভ্রমণপ্রিয় মানুষ বিভিন্নরূপে বিভিন্ন নামে ভ্রমণে যেতে চান। ভ্রমণপিপাসু মানুষের এরকম আকাঙ্ক্ষাই কাম্য। সত্যি কথা বলতে কি এই আধুনিক সময়ে ভ্রমণ ভালোবাসেন না কিংবা করতে পছন্দ করেন না এমন মানুষ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া কঠিন। রসকসহীন মানুষও ভ্রমণের গন্ধ পেলে কিছুটা হলেও নড়েচড়ে বসেন। এমনকি অনেকে ফেসবুকে ইভেন্ট খুলে পঞ্চাশ ষাট জন মিলে চলে যায় আনন্দ ভ্রমণে।


কিন্তু বর্তমান ব্যস্ত সময়ে মানুষ ভ্রমণের সুখ খুব কমই পায়। তারা অনেক সময়েই দুধের স্বাদ ঘোলে মেটান। বিভিন্ন ভ্রমণকাহিনী পড়ে সময় কাটান। এদিক দিয়ে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট হচ্ছে সৈয়দ মুজতবা আলীর ‘দেশে বিদেশে’ কিংবা অন্নদাশঙ্কর রায়ের ‘পথে প্রবাসে’। এরপরেই বাংলা সাহিত্যে ভ্ একটি বিশেষ স্থান করে ফেলে। ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা ভ্রমণ করেন এবং তা লিপিবদ্ধ করে রাখতে চান যা কিনা ভ্রমণের জনপ্রিয়তারই নির্দেশক। এক্ষেত্রে পেশাদার অপেশাদার উভয় ভ্রমণকারীরাই ভ্রমণ করে এসে কাহিনী লিপিবদ্ধ করেন।


অন্নদাশঙ্কর রায় এ নিয়ে একটি সুন্দর উক্তি করে গেছেন। তিনি বলেন, ‘ভ্রমণ থেকেই হয় ভ্রমণকাহিনী। কিন্তু ভ্রমণকারীদের সকলের হাত দিয়ে নয়।’ তবু প্রতি বছর বাংলাদেশে অন্তত শ’ খানেক ভ্রমণ বই প্রকাশিত হয়। দৈনিক পত্রিকাগুলো এ নিয়ে আলাদা পাতা বের করেন। এমনকি ভ্রমণকে ভিত্তি করেই বের হয় বিভিন্ন পত্রিকা। এ সব কিছু ভ্রমণের জনপ্রিয়তারই নির্দেশক। অন্যদিকে যারা পেশাদার লেখক তাদের ভ্রমণ কাহিনীগুলো হয়ে যায় ভ্রমণবিষয়ক কালজয়ী বই।


ছোট্ট এই বাংলাদেশে ভ্রমণের জায়গা খুব কম নয়। সুন্দরবন, কক্সবাজার, সেন্টমার্টিন, কুয়াকাটা, জাফলং ইত্যাদি খুব পরিচিত জায়গা ছাড়াও এখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক ভ্রমণ জায়গা। আর এসব জায়গার দৃশ্যও অনেক মনোরম। যেমন কক্সবাজারের প্রতিটি সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত নতুন এবং সুন্দর। এজন্য কবি জীবনানন্দ দাশ বার বার এই বাংলায় ফিরে আসতে চেয়েছেন এবং ধবল বকদের ভীড়ে তাঁকে খুঁজতেও বলেছেন।



পেশাদার অপেশাদার সকল ভ্রমণকারীরাই এই ভ্রমণকে এক ধরনের বিনোদন হিসেবেই বিবেচনা করেন। পেশাদারদের কাছে আবার এটি নেশাও বটে। তারা অবসর, চাকরি বা ব্যবসাজনিত কারণে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে থাকেন যাদেরকে পর্যটকও বলা যেতে পারে। এই ঘুরে বেড়ানো জিনিসটাও আজ শিল্প হিসেবে স্বীকৃত।


বিশ্ব পর্যটন সংস্থা পর্যটনের নিম্নমুখী এবং ঊর্ধ্বমুখীতা যাচাই করে মানদণ্ড প্রণয়ন করে থাকে। এটি স্পেনের মাদ্রিদে অবস্থিত জাতিসংঘের বিশেষায়িত সংস্থা হিসেবে বিবেচিত। তারা কোন ব্যক্তিকে পর্যটকরূপে আখ্যায়িত করতে গিয়ে বলেছেন, ‘যিনি ধারাবাহিকভাবে এক বছরের কম সময়ের মধ্যে কোন স্থানে ভ্রমণ ও অবস্থানপূর্বক স্বাভাবিক পরিবেশের বাইরে দর্শনীয় স্থান পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে অবসর, বিনোদন বা ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালনাসহ অন্য বিষয়াদির সাথে জড়িত, তিনি পর্যটকের মর্যাদা উপভোগ করবেন।’


১৯৭৬ সালে ইংল্যান্ডের পর্যটন সমিতির মতে, ‘পর্যটন এক ধরনের অস্থায়ী, ব্যক্তির নির্দিষ্ট স্থানে স্বল্পকালীন চলাচলবিশেষ যা নিজস্ব আবাসস্থল, কর্মক্ষেত্রের বাইরের কর্মকাণ্ড। এছাড়াও, এতে সকল ধরনের উদ্দেশ্যমালা অন্তর্ভুক্ত থাকে।’


উন্নত বিশ্বে এই ভ্রমণ ব্যাপারটি একটি স্বাভাবিক ব্যাপার। ছুটির সময়গুলোতে তারা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। বৈচিত্র্যপূর্ণ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে জীবনকে সার্থক করে গড়ে তোলে। তাদের প্রয়োজনের চাহিদা মেটানোর জন্যে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন অবকাশ কেন্দ্র।


এগুলো বিভিন্ন ধরনের হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট ও কটেজ দ্বারা সমৃদ্ধ। তবে বাংলাদেশের ভ্রমণপিপাসুদের আছে অর্থনৈতিক বাধা। স্বচ্ছল পরিবারগুলো সাপ্তাহিক ছুটিতে ঘুরে বেড়ানো একটি ট্রেডিশনে পরিণত হয়েছে।


ঈদের ছুটিতে কক্সবাজারমুখী মানুষ এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ। কক্সবাজার, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি, চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, কুষ্টিয়া, পটুয়াখালী, গাজীপুর, টাঙ্গাইল, ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর, বগুড়া ইত্যাদি স্থান প্রাকৃতিক ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের কারণে ভ্রমণের জন্য আকর্ষণীয়।


আবার দেশের বাইরেও অনেক মানুষ প্রতিবছর অবকাশযাপনের জন্য পরিবারসহ বিদেশ ভ্রমণ করছেন। দুই ঈদের সময় বা অন্যান্য ছুটিতে বিদেশ গমনেচ্ছুদের তালিকায় যেসব দেশ অগ্রাধিকার পায় সেগুলো হল নেপাল, ভুটান, ভারত, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, তুরস্ক, মিসর, কেনিয়া, য্ক্তুরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ইত্যাদি।


বাংলাদেশে এই পর্যটনের সাথে জড়িত রয়েছে বিপুল সংখ্যক লোক। সর্বোপরি এর মাধ্যমে এক বিশাল জনসমষ্টির কর্মসংস্থান হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশ উন্নত বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com