শিরোনাম
মাথিনের কূপ এখনও শোক জাগায়
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৮:৩৩
মাথিনের কূপ এখনও শোক জাগায়
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভালবাসার প্রিয় মানুষটার জন্য দীর্ঘ সময় অপেক্ষার প্রহর গুনতে গুনতে অনিদ্রা আর অনাহারে নিজের সুন্দর জীবনকে চিরতরে বিসর্জন দিয়েছে এক রাখাইন জমিদার কন্যা নাম তার মাথিন। বিষাদের কষ্ট এবং বেদনাবিধুর প্রেমের বহুল আলোচিত সেই ঘটনার কালজয়ী সাক্ষী আজকের ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ। মাথিনের অতৃপ্ত প্রেমের ইতিহাসের নীরব সাক্ষী মাথিনের কূপ। যা এখনো আকর্ষণীয় হয়ে আছে সীমান্ত উপজেলার টেকনাফ থানা কম্পাউন্ডে।


বিশিষ্ট সাংবাদিক আবদুল কুদ্দুস রানা ১৯৯৪ সালে বাঁশের তৈরি কূপটি সংস্কারের উদ্যোগ নেন। পরবর্তীতে জেলা পরিষদ থেকে এদিকে সংস্কার করা হয়। এখন কূপটি দেখতে খুবই আকর্ষণীয়। সেখানে প্রেমের সংক্ষিপ্ত ইতিহাসও লেখা রয়েছে। ইদানীং উল্লিখিত কাহিনী অবলম্বনে স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে একটি স্বল্প দৈর্ঘ্য চলচিত্রও নির্মিত হয়েছে।


ইতিহাস: ঔপন্যাসিক ধীরাজ ভট্টাচার্য উনবিংশ শতাব্দীর প্রথমদিকে এসআই হিসাবে টেকনাফ থানায় বদলি হয়ে এসেছিলেন। টেকনাফ থানা কম্পাউন্ডে ছিল বিশাল একটি পানির কূপ। যেখানে প্রতিদিন পানি নিতে আসতো আশপাশের রাখাইন যুবতীরা। তখন টেকনাফের নাম করা রাখাইন জমিদার ওয়াংথিনের একমাত্র আদুরে কন্যা মাথিনও থানার সামনের কুয়া থেকে নিয়মিত পানি নিতে আসতো।


সকাল বিকাল পানি নিতে আসা ছিল মাথিনের সখ। পুলিশ কর্মকর্তা প্রতিদিন থানার বারান্দায় বসে বসে অপূর্ব সুন্দরী মাথিনের পানি নিতে আসা যাওয়া দেখতেন। আস্তে আস্তে ধীরাজ ভট্টাচার্যের সংগে মাথিনের চোখা চোখি এবং পরে তা প্রেমে পরিণত হয়।


সম্ভব অসম্ভব নানা জল্পনা কল্পনার স্বপ্ন জালে আবদ্ধ হয় ধীরাজ ও মাথিন। কিন্তু মন দেয়া নেয়ার কিছুদিন যেতে না যেতেই কলকাতা থেকে হঠাৎ একদিন দারোগা ধীরাজের কাছে ব্রাহ্মণ পিতার জরুরি টেলিবার্তা আসে। যেখানে তার বাবা লিখেছেন খুব জরুরিভাবে তাকে কলকাতা যেতে হবে। বাবার টেলিগ্রাম পেয়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন পুলিশ অফিসার ধীরাজ। তবে যাওয়ার আগে দ্রুত ফিরে এসে মাথিনকে বিয়ে করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে চলে যাওয়ার পর ধীরাজ আর ফিরে আসেনি।


এদিকে ভালবাসার মানুষের ফিরে আসার অধির অপেক্ষায় দিন গুনতে গুনতে অনাহার ও অনিদ্রায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে জমিদার কন্যা মাথিন। সেই থেকে পাতকুয়াটির নামকরণ হয় ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ।


এদিকে ১৯৩০ সালে ধীরাজ ভট্টাচার্যের ব্যক্তিগত জীবনী নিয়ে লেখা ‘যখন পুলিশ ছিলাম’ গ্রন্থে তারই ভালবাসার স্মৃতি আদরিনী মাথিনের কথাও লিখেছেন। লাহোরের ওবাইদুলাহ রোডের জিলানী ইউনিক প্রেস থেকে ১৯৩০ সালের ১ আষাড় বইটি প্রকাশিত হয়। ওই বইয়ের বিখ্যাত চরিত্রে মাথিনের কূপ সংশিষ্ট কাহিনীটি রচিত রয়েছে।


তবে ভালবাসার জন্য রাখাইন জমিদার কন্যা মাথিনের এই জীবন বিসর্জন কাহিনী কোন ভাবেই মানতে রাজি নন টেকনাফের রাখাইনরা। তাদের দাবী, মাথিন কূপের এই প্রেমকাহিনী সাহিত্যিক পুলিশ অফিসার ধীরাজের লেখা উপন্যাসের কল্পিত চরিত্রের ইতিহাস মাত্র।



বর্তমানে প্রতি বছর দেশ-বিদেশের হাজার হাজার নারী-পুরুষ পর্যটক টেকনাফের ঐতিহাসিক মাথিনের কূপটি পরিদর্শনের জন্য ভিড় জমাতে দেখা যায়। যেখান থেকে এই সময়ের প্রেমিক প্রেমিকারা মাথিন ও ধীরাজের অমর প্রেম কাহিনী নিদর্শনের মধ্য দিয়ে তারা যে যার মত নিজেদের পবিত্র প্রেম-ভালবাসাকে মিলিয়ে নিচ্ছেন।


এক তথ্যে জানা গেছে, ২০০৮ সালে প্রায় ২৫ লাখ টাকা ব্যায়ে মাথিনের কূপটি আধুনিকায়ন করা হয়েছে। টেকনাফ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক মাথিনের কূপ পুলিশ কর্মকর্তা ধীরাজের অমর প্রেমকাহিনী ও তার স্মৃতি বিজড়িত। তাই থানা কম্পাউন্ডের ঐতিহাসিক এই কূপটির সৌন্দর্য্য রক্ষার্থে প্রশাসনিক ভাবে ব্যাপক নজরদারী রাখা হয়।


কীভাবে যাবেন: টেকনাফ শহরের প্রাণকেন্দ্রে নাফ নদীর পাশে টেকনাফ পুলিশ ফাঁড়ির চত্তরে এই মাথিনের কূপ। কক্সবাজার থেকে অনেকগুলো বাস সার্ভিস আছে, ভাড়ায় পাওয়া যাবে রেন্ট-এ-কার এর গাড়ি। ১ ঘন্টা ৩০ মিনিট থেকে ২ ঘণ্টার ভিতরে আপনি চলে আসবেন সবুজ পাহাড়ে ঘেরা টেকনাফে।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com