শিরোনাম
ঘুরে আসুন কুতুবদিয়া বাতিঘর
প্রকাশ : ২৫ ডিসেম্বর ২০১৬, ০৮:১৩
ঘুরে আসুন কুতুবদিয়া বাতিঘর
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

প্রাচীনকাল থেকে চট্টগ্রাম ছিল একটি সমুদ্রবন্দর। খ্রিষ্টীয় নয় শতক থেকে আরব বণিকগন চট্টগ্রামের সঙ্গে বাণিজ্যিক যোগাযোগ স্থাপন করে। বাংলায় মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠার পর (চৌদ্দ শতক) থেকে চট্টগ্রাম বন্দর একটি ব্যস্ত আন্তর্জাতিক বন্দরে পরিণত হয়। সেকালে সামুদ্রিক জাহাজে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি ছিল না, অভিজ্ঞ নাবিকরা প্রাচীন প্রচলিত পদ্ধতিতে সাগর-মহাসাগর পাড়ি দিতেন। ব্রিটিশ শাসনামলে বন্দরের শ্রীবৃদ্ধি ঘটলেও সমুদ্রে জাহাজ পরিচালনায় কোন সুনির্দিষ্ট নির্দেশনার ব্যবস্থা ছিল না।


১৮২২ সালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস উপকূলভাগ বিধ্বস্ত করে দেয়। প্লাবনের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর এলাকায় সমুদ্রবক্ষে পলি জমে সৃষ্টি হয় অনেক চর। বিস্তীর্ণ এলাকায় নতুন নতুন চর জেগে ওঠার ফলে চট্টগ্রাম বন্দরে দেশী-বিদেশি জাহাজ চলাচলে সমস্যা দেখা দেয়। নির্বিঘ্নে জাহাজ চলাচলের স্বার্থে ব্রিটিশ সরকার বাতিঘর স্থাপনের জন্য জরিপ কাজ পরিচালনা করে এবং চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রায় ২৫ মাইল দক্ষিণে তিনদিকে বঙ্গোপসাগর পরিবেষ্টিত কুতুবদিয়ায় একটি সুউচ্চ বাতিঘর স্থাপন করার সিদ্ধান্ত নেয়।


বঙ্গোপসাগরে চলাচলরত জাহাজকে সংকেত দেখানোর জন্য চট্টগ্রাম বন্দর ও সামুদ্রিক এলাকায় বিভিন্ন সময় সেন্ট মার্টিনস, কক্সবাজার, নরম্যান্স পয়েন্ট, পতেঙ্গা ও কুতুবদিয়ায় বাতিঘর স্থাপন করা হয়। এসব বাতিঘরের বিচ্ছুরিত আলো ২৫-৩৫ কি.মি গভীর সমুদ্র থেকে দেখা যায়। সবচেয়ে প্রাচীন বাতিঘর স্থাপিত হয় কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ায়।


কুতুবদিয়া বাতিঘরের নির্মাণকাল ১৮৪৬ সাল এবং ঘূর্ণায়মান বাতি স্থাপিত হয় ১৮৯২ সালে। পাথরের ভিতের উপর নির্মিত কুতুবদিয়া বাতিঘরটির উচ্চতা ছিল প্রায় ৪০ মিটার। এর ছয়টি কামরায় পাটাতন ও সিঁড়ি ছিল কাঠের। সর্বোচ্চ কামরায় আট ফিতার ল্যাম্প বসানো হয়েছিল। ল্যাম্পের জ্বালানি ছিল নারিকেল তেল। বাতিঘরের নিচতলা ছিল মাটির নিচে এবং এর দেয়াল ছিল খুবই পুরু। এ বাতিঘর নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছিল ৪,৪২৮ টাকা।



আট তলা এ বাতিঘরের প্রতি তলার উচ্চতা ছিল প্রায় ৫ মিটার। প্রতি কক্ষে ছিল কাচের জানালা। সর্বোচ্চ কক্ষের জ্বালানো হত বাতি। একটি কাঠের ফ্রেমে রাখা বাতিটি প্রতিদিন সূর্যাস্তের আগে জ্বালানো হত। ব্রিটিশ ক্যাপ্টেন হেয়ারের তত্ত্বাবধানে ও ইঞ্জিনিয়ার জে এইচ টুগুডের নির্দেশনায় কুতুবদিয়ার বাতিঘরটি নির্মিত হয়।


দক্ষিণ ধুরং ইউনিয়নের আলী ফকির ভেইলে পশ্চিম সমুদ্র উপকূলে নির্মিত এ বাতিঘরটি ১৮৯৭ সালের প্রচন্ড ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সমগ্র লাইট হাউজ নড়বড়ে হয়ে যায়। লাইট হাউজের রক্ষকের বাসভবন বিধ্বস্ত হয়। ভবনের কাঠের মেঝে বাতাসের তীব্রতায় প্রায় ৭০ মিটার দূরে ছিটকে পড়ে।


ভবনের টিনের তৈরি ছাদ আশপাশের মাঠে গিয়ে আছড়ে পড়ে। স্তূপীকৃত বড় বড় পাথর পর্যন্ত ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। ১৯৬০ সালের ঘূর্ণিঝড় ও সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাসে স্থায়ী ভাঙ্গনে বিলীন হবার পূর্ব পর্যন্ত এ বাতিঘর বিরামহীন আলো দেখিয়ে সমুদ্রগামী জাহাজের নাবিকদের প্রায় ৩৫ কি.মি দূর থেকে দিকনির্দেশনা দিত।


পুরনো সেই বাতিঘর সমুদ্রে বিলীন হয়েছে বহু আগে। তবে এখনও ভাটার সময় সেই বাতিঘরের ধ্বংসাবশেষ কখনও কখনও জেগে উঠতে দেখা যায়।বাতিঘর এলাকায় পরে যে বাতিঘর তৈরী করা হয়েছিল সেটিই এখন নাবিকদের পথ দেখায়। বড়ঘোপ বাজার থেকে সমুদ্র সৈকত ধরে উত্তর দিকে কিছু দূরে গেলেই বর্তমান বাতিঘরের অবস্থান।


কক্সবাজারের এই বাতিঘর পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় একটি স্থান। তাই প্রতিদিনই এখানে পর্যটকদের ভীর লেগেই থাকে।


কীভাবে যাবেন: কুতুবদিয়া যেতে হবে কক্সবাজারের বাসে। ঢাকা থেকে সরসরি কক্সবাজার যায় সোহাগ পরিবহন, টি আর ট্রাভেলস, গ্রীন লাইন পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজ, সেন্টমার্টিন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহনের এসি বাস। ভাড়া ১৭০০ থেকে ২৫০০ টাকা।এছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, শ্যামলী, ইউনিক, ঈগল ইত্যাদি পরিবহনের নন এসি বাসে ভাড়া সাড়ে ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা।


এসব বাসে চড়ে নামতে হবে চট্টগ্রাম কক্সবাজারের পথে যাত্রা বিরতি স্থল ইনানী রিসোর্টের এক কিলোমিটার সামনে বড়ইতলি মোড়ে। সেখান থেকে সিএনজি চালিত বেবিটেক্সিতে যেতে হবে মাগনামা ঘাট। জনপ্রতি ভাড়া ৩৫ টাকা। রিজার্ভ নিলে ২০০ টাকা। মাগনামা ঘাট থেকে কুতুবদিয়া চ্যানেল পার হতে হবে ইঞ্জিন নৌকা অথবা স্পিড বোটে। ইঞ্জিন নৌকায় সময় লাগে ২০ থেকে ২৫ মিনিট, ভাড়া ১৫ থেকে ২০ টাকা। আর স্পিডবোটে লাগে ১০ মিনিট, ভাড়া ৬০ টাকা। চ্যানেল পার হলে কুতুবদিয়া।


বড়ঘোপ বাজার রিকশায় যেতে লাগবে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। এছাড়া চট্টগ্রামের তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর পূর্ব প্রান্ত থেকে ও কক্সবাজার বাসস্টান্ড থেকে সরাসরি এস আলমের বাস যায় মাগনামা ঘাটে। ভাড়া চট্টগ্রাম থেকে ১৬০ টাকা, কক্সবাজার থেকে ৯০ টাকা।


কোথায় থাকবেন: কুতুবদিয়া দ্বীপে পর্যটকদের থাকার জন্য মানসম্মত একমাত্র আবাসন ব্যবস্থা হল হোটেল সমুদ্র বিলাস। সমুদ্র লাগোয়া এই হোটেলে বসে উপভোগ করা যায় সমুদ্রের সৌন্দর্য। হোটেলের দুই জনের নন এসি কক্ষ ভাড়া ৮০০ টাকা তিন জনের ১০০০ টাকা এবং চার জনের কক্ষ ভাড়া ১২০০ টাকা।


যোগাযোগ: হোটেল সমুদ্র বিলাস, বড়ঘোপ বাজার, কুতুবদিয়া। মোবাইল ০১৮১৯৬৪৭৩৫৫, ০১৭২২০৮৬৮৪৭।


প্রয়োজনীয় তথ্য: কুতুবদিয়া দ্বীপে বিদ্যুৎ সংযোগ নেই। জেনারেটর ও সৌর বিদ্যুৎ দিয়ে এখানকার বৈদ্যুতিক চাহিদা মেটানো হয়ে থাকে। সৈকতে জোয়ার ভাটা চিহ্নিত করার কোনো ব্যবস্থা নেই। তাই নিজ দায়িত্বে জোয়ার-ভাটার সময় জেনে সমুদ্র স্নানে নামতে। ভাটার সময় সমুদ্রে নামা বিপজ্জনক।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com