ইতিহাসনির্ভর চলচ্চিত্র 'মাইক' বাঙালির সম্পদে পরিণত হবে
প্রকাশ : ১২ আগস্ট ২০২৩, ২৩:১৩
ইতিহাসনির্ভর চলচ্চিত্র 'মাইক' বাঙালির সম্পদে পরিণত হবে
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

ইতিহাসনির্ভর চলচ্চিত্র 'মাইক' বাঙালি জাতির সম্পদে পরিণত হবে। দেশের সীমানা ছাড়িয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে এর কাহিনি, চিত্রায়ন ও নির্মাণশৈলীর মাধুর্য। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যার পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে যে অন্ধকার অধ্যায়ের সূচনা হয়- সেই ইতিহাসের বয়ান নিয়ে এই চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি এই প্রজন্মের শিশু-কিশোর, তরুণদের বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে


'মাইক' সিনেমায় শিশুশিল্পীদের দুঃসাহসিক অভিযান ও দ্রোহের অভিনয়ের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশনা ও অবদান ফুটে উঠেছে। পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান ‘জয় বাংলা’ স্লোগান নিষিদ্ধ করেছিল, ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সকল কাজ করেছিল। এর আগে মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর অনেক সিনেমা তৈরি হলেও ’৭৫ পরবর্তী দুঃসময় নিয়ে তেমন সিনেমা হয়নি। অনেক দিন পর ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য হলেও এই ধরনের সিনেমা তৈরি হয়েছে



‘মাইক’ চলচ্চিত্র মাইকের মতো করে চারিদিকে ছড়িয়ে যাক, এই প্রত্যাশা রইলো। কথাগুলো বলেছেন বিশিষ্টজনেরা। সম্প্রতি ‘মাইক’ চলচ্চিত্রটি দেখে প্রতিক্রিয়ায় তারা এসব কথা বলেন।



সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে উপজীব্য করে বাংলাদেশ সরকারের অনুদানে নির্মিত পূর্ণদৈর্ঘ্য শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘মাইক’ মুক্তি পেয়েছে গতকাল। এরই মধ্যে সিনেমাটি শিশু থেকে শুরু করে সব বয়সী দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছে। ৭৫ পরবর্তী নিষিদ্ধ সময়ের প্রেক্ষাপটে নির্মিত ইতিহাসনির্ভর সিনেমাটি নানাভাবেই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।


লেখক, কলামিস্ট, সংগঠক ও জাগরণ আইপি টিভির কর্ণধার এফ এম শাহীনের প্রযোজনায় চলচ্চিত্রটি যৌথভাবে পরিচালনা করছেন এফ এম শাহীন ও হাসান জাফরুল বিপুল।


বাবা-মা’র সাথে ‘মাইক’ সিনেমা দেখতে এসেছে পাঁচ বছর বয়সী রাফায়েত নিশান। তিনি বিবার্তাকে বলেন, সিনেমাটি আমার খুব ভালো লেগেছে। জঙ্গলের ভেতর মাইক লাগাইছে- সেখানে বঙ্গবন্ধু ভাষণ শুনছি। ওরা সবাইকে ধরে ফেলছিল। পরে অনেক মানুষ আগুন নিয়ে এসে বাঁচাইছে।


ভিকারুননিসা নূন স্কুল এন্ড কলেজ শিক্ষার্থী সাদিয়া জান্নাত বিবার্তাকে বলেন, মাইক সিনেমাটিতে তখনকার সময়ে বাংলাদেশের ইতিহাসের প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে। যা দেখে আমার অনেক অবাক লেগেছে যে, তখন বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল। তখন যে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ নিষিদ্ধ ছিল তা আজ মাইক সিনেমা দেখে জানতে পেরেছি। বিশেষ করে ছোটদের অভিনয় অনেক ভালো লেগেছে। ওরা গুপ্তধন খুঁজতে গিয়ে অনেক কিছু আবিষ্কার করে ফেলেছে।


মাইক চলচ্চিত্রের শিশুশিল্পী আলী আবদুল্লাহ দাইয়ান ভূঁইয়া বিবার্তাকে বলেন, এই সিনেমায় অভিনয় করতে পেরে আমি গর্বিত। এটা আমার জীবনে স্মৃতি হয়ে থাকবে। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি ইতিহাসনির্ভর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সঠিক ইতিহাস জানতে আমি আশা করব সবাই যাতে ছবিটি দেখতে আসে।


গ্রিন লাইফ মেডিকেল কলেজের প্রতিষ্ঠাকালীন ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তাহমিদুর রহমান অর্ণব বিবার্তাকে বলেন, একসময় জয় বাংলা, ৭ই মার্চের ভাষণ সবই মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছিল। কিন্তু সম্ভব হয়নি। জননেত্রী শেখ হাসিনা রাষ্ট্রক্ষমতায় আসার পর আমরা পুনরায় সেই হারানো অধিকার ফিরে পেয়েছি। চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা স্বচ্ছ হয়ে উঠার পেছনে ‘মাইক’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


অভিনেত্রী তানভীন সুইটি বিবার্তাকে বলেন, 'মাইক' সিনেমাটিতে ’৭৫ পরবর্তী সময়ের গল্প তুলে ধরা হয়েছে। যাতে একদল শিশু অসাধারণ অভিনয়ের মাধ্যমে সেই ঘটনা ফুটিয়ে তুলেছে। আমরা আমাদের পরের প্রজন্মের কাছে এই অজানা ঘটনাগুলো ‘মাইক’ সিনেমায় তুলে এনেছি। মূলত ৭ই মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে সিনেমাটি তৈরি করা হয়েছে। যে ভাষণ শুনে লাখো বাঙালি যুদ্ধে করে জয় ছিনিয়ে এনেছিল। তাই সবার প্রতি আমার আহ্বান, মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানার জন্য পরিবারের সবাইকে নিয়ে মাইক সিনেমাটি দেখবেন।


প্রধানমন্ত্রীর সহকারী প্রেস সচিব গুলশাহানা ঊর্মি বিবার্তাকে বলেন, পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে যারা ক্ষমতায় এসেছিলে তারা ছিল মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী। তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা লালন করেনি, দেশকে ভালোবাসেনি। তারা বঙ্গবন্ধু, বাঙালি ও মুক্তিযুদ্ধকে সামনে নিয়ে আসতে ভয় পেয়েছিল। কারণ তাদের ভেতর বোধশক্তি ছিল না। শুধু তাই নয়, তারা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ মুছে ফেলতে চেয়েছিল। অথচ এই ভাষণের উপর ভিত্তি করে এই দেশ স্বাধীন হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণকে কেন্দ্র করে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘মাইক’ এক অনবদ্য সৃষ্টি।


বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) মফিজুল হক সরকার বিবার্তাকে বলেন, ‘মাইক’ চলচ্চিত্রটি বাঙালি জাতির সম্পদে পরিণত হবে। সীমান্ত ছাড়িয়ে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কম চলচ্চিত্র হয়েছে। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাংলাদেশের মানুষের কাছে সবচাইতে মূল্যবান। ১৯৭১ সালে চাপিয়ে দেয়া অসম পশু শক্তির বিরুদ্ধে কৃষক, শ্রমিক ছাত্ররা যুদ্ধ করে স্বাধীনতা অর্জন করেছে। ৩০ লাখ মানুষ রক্ত দিয়েছে, মা-বোনেরা সম্ভ্রম দিয়েছিল। এই অর্জন আমাদের কাছে সম্পদ।


অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বিবার্তাকে বলেন, মাইক মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ের উপর ভিত্তি করে নির্মিত চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি দেখে আমি মুগ্ধ হয়েছি। কাজেই আশা করছি, এ চলচ্চিত্রের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাসসহ জাতির পিতার বিশ্ব কাঁপানো ভাষণ সম্পর্কে জানতে পারবে। তাই সবাইকে বিশেষ করে শিশু, তরুণদের ছবিটি দেখার আহ্বান জানাচ্ছি। মাইক সিনেমার সাথে নির্মাতা ও কলাকৌশলীদের ধন্যবাদ জানাই- দেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা উপহার দেওয়ার জন্য।


আওয়ামী যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যক্ষ মো. নবী নেওয়াজ বিবার্তাকে বলেন, মাইক সিনেমাটি দারুণ হয়েছে। নির্মাতা কলাকৌশলীরা সফল হয়েছে। বিশেষ করে সিনেমার অর্ধেক থেকে শেষ পর্যন্ত যা দেখেছি আসলে তা চিন্তা করা যায় না। বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস তুলে ধরতে খুবই প্রয়োজন ছিল এ সিনেমাটির। মাইক সিনেমার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সিনেমা উপহার দেওয়ার জন্য।


বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য এডভোকেট সানজিদা খানম বলেন, স্বাধীনতার পর শিশুদের জন্য ইতিহাস জানার এরকম ছবি আর হয়নি। 'মাইক' সিনেমাটি স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাসের স্মারক হয়ে থাকবে। পচাঁত্তর পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর কথা বলা যেত না, স্বাধীনতার কথা বলা যেত না, ৭ই মার্চের ভাষণের কথা বলা যেত না। আমাদের নতুন প্রজন্মকে জানবার জন্য 'মাইক' চলচ্চিত্রটি প্রতিটি স্কুলে স্কুলে দেখানোর ব্যবস্থা করা দরকার, যা শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের সঠিক ইতিহাস জানতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।


আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি বলেন, 'মাইক' একটি অসাধারণ চলচ্চিত্র। আমাদের মুক্তিযুদ্ধ এবং পঁচাত্তর পরবর্তী ইতিহাসের সাথে জড়িত এই চলচ্চিত্র। আমাদের তরুণ প্রজন্মকে ইতিহাস জানতে চলচ্চিত্রটি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।


তিনি বলেন, 'মাইক' সিনেমা দেখে খুবই মুগ্ধ হয়েছি। এটি ইতিহাসনির্ভর সিনেমা। এই সিনেমার শিশুশিল্পীদের অভিনয়ের মধ্য দিয়ে একদিকে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর অবদান ফুটে উঠেছে। এর পাশাপাশি পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে যারা ক্ষমতা দখল করেছিল- বিশেষ করে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে জিয়াউর রহমানের যে অবস্থান ছিল সেটা ফুটে উঠেছে।


হানিফ আরো বলেন, পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর জিয়াউর রহমান জয় বাংলা স্লোগান ও ৭ মার্চের ভাষণ নিষিদ্ধ করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী সকল কাজ করেছিল। রাজাকারদের পুনর্বাসনের মধ্য দিয়ে এ দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার মূল্যবোধকে ধ্বংস করে দেশকে পেছন দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। সেটা মাইক চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে অনেকটা ফুটে উঠেছে।


উল্লেখ্য, স্বাধীনতার মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণকে উপজীব্য করে নির্মিত প্রথম শিশুতোষ চলচ্চিত্র ‘মাইক’ সারাদেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে শুক্রবার (১১ আগস্ট)। গত ২৯ মে আনকাট সেন্সর ছাড়পত্র পেয়েছিল সিনেমাটি। সেসময় ‘মাইক’ চলচ্চিত্রটি দেখে সেন্সরবোর্ডের সদস্যরা ভূয়সী প্রশংসা করেন। ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণকে কেন্দ্র করে এ ধরনের সিনেমা নির্মাণকে তারা সাধুবাদ জানান।


এ সিনেমার মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় একসঙ্গে দেখা গেল জনপ্রিয় চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ ও নন্দিত অভিনেত্রী তানভীন সুইটিকে। এতে আরো অভিনয় করেছেন শক্তিমান অভিনেতা তারিক আনাম খান, অভিনেতা নাদের চৌধুরী, ঝুনা চৌধুরী, জয়িতা মহলানবিশ, সংগীতা চৌধুরী, রহিম সুমন, ইকবাল হোসাইন, শিশুশিল্পী সানজিদ রহমান খান, আলী আবদুল্লাহ দাইয়ান ভূঁইয়া, খোন্দকার মেঘদূত জলিল, মীর্জা ত্বাবীব ওয়াসিত প্রমুখ।


মুক্তির আগে ২৮ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) অডিটরিয়ামে চলচ্চিত্রটির বিশেষ প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়।


বিবার্তা/রিয়াদ/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com