শিরোনাম
জুলাই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৭৩
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৩, ১৬:১৭
জুলাই মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৫৭৩
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

চলতি বছরের জুলাই মাসে দেশে ৫১১টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৫৭৩ জন নিহত হয়েছেন। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ১ হাজার ২৫৬ জন। নিহতের মধ্যে ৯৪ জন নারী এবং ৭৬ জন শিশু। দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি সবচেয়ে বেশি হয়েছে ঢাকা বিভাগে। এর মধ্যে রাজধানীতে ৩২টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত এবং ৩৭ জন আহত হয়েছে।


৭ আগস্ট, সোমবার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে রোড সেফটি ফাউন্ডেশন। ৯টি জাতীয় দৈনিক, ৭টি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং ইলেক্ট্রনিক গণমাধ্যমের তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে বলে জানায় সংগঠনটি।


বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গত জুলাই মাসে দেশে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে ৫১১টি। নিহত ৫৭৩ জন এবং আহত ১২৫৬ জন। নিহতের মধ্যে নারী ৯৪, শিশু ৭৬। ১৮৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৮৩ জন, যা মোট নিহতের ৩১.৯৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৬.৭৯ শতাংশ। দুর্ঘটনায় ১৪৬ জন পথচারী নিহত হয়েছে, যা মোট নিহতের ২৫.৪৭ শতাংশ। যানবাহনের চালক ও সহকারী নিহত হয়েছেন ৭৮ জন, অর্থাৎ ১৩.৬১ শতাংশ। এ সময়ে ১৪টি নৌ-দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, ২৩ জন আহত এবং ১১ জন নিখোঁজ রয়েছেন। ৩৩টি রেলপথ দুর্ঘটনায় ৩২ জন নিহত এবং ১২ জন আহত হয়েছে।



দুর্ঘটনায় যানবাহনভিত্তিক নিহতের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মোটরসাইকেল চালক ও আরোহী ১৮৩ জন (৩১.৯৩%), বাস যাত্রী ৪৯ জন (৮.৫৫%), ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি আরোহী ৩৬ জন (৬.২৮%), প্রাইভেটকার-মাইক্রোবাস-অ্যাম্বুলেন্স-জীপ আরোহী ২৩ জন (৪%), থ্রি-হুইলার যাত্রী (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-ম্যাক্সি-লেগুনা) ১০৩ জন (১৭.৯৭%), স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহনের যাত্রী (নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র-লাটাহাম্বা) ২২ জন (৩.৮৩%) এবং বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান আরোহী ১১ জন (১.৯১%) নিহত হয়েছে।


রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের পর্যবেক্ষণ ও বিশ্লেষণ বলছে, দুর্ঘটনাগুলোর মধ্যে ২০৮টি (৪০.৭০%) জাতীয় মহাসড়কে, ১৯৬টি (৩৮.৩৫%) আঞ্চলিক সড়কে, ৬১টি (১১.৯৩%) গ্রামীণ সড়কে, ৪২টি (৮.২১%) শহরের সড়কে এবং অন্যান্য স্থানে ৪টি (০.৭৮%) সংঘটিত হয়েছে।


দুর্ঘটনাসমূহের ৯৮টি (১৯.১৭%) মুখোমুখি সংঘর্ষ, ২১৭টি (৪২.৪৬%) নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১৪৪টি (২৮.১৮%) পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেয়া, ৩৩টি (৬.৪৫%) যানবাহনের পেছনে আঘাত করা এবং ১৯টি (৩.৭১%) অন্যান্য কারণে ঘটেছে।


দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের মধ্যে রয়েছে- ট্রাক-কাভার্ডভ্যান-পিকআপ-ট্রাক্টর-ট্রলি-লরি-ড্রামট্রাক-ফায়ার ব্রিগেড গাড়ি-লং ভেহিক্যাল-রোলার মেশিন গাড়ি ২৭.১৭%, মাইক্রোবাস-প্রাইভেটকার-অ্যাম্বুলেন্স-পাজেরো-জীপ ৪.৭৩%, যাত্রীবাহী বাস ১৯.৬১%, মোটরসাইকেল ২২.২০%, থ্রি-হুইলার (ইজিবাইক-সিএনজি-অটোরিকশা-অটোভ্যান-লেগুনা-টেম্পু-ম্যাক্সি-মিশুক) ১৮.১৫%, স্থানীয়ভাবে তৈরি যানবাহন (নসিমন-ভটভটি-টমটম-মাহিন্দ্র-লাটাহাম্বা) ৩.৭২%, বাইসাইকেল-প্যাডেল রিকশা-রিকশাভ্যান ২.৩৬% এবং অজ্ঞাত গাড়ি ২.০২%।


সময় বিশ্লেষণে দেখা যায়, দুর্ঘটনা সমূহ ঘটেছে ভোরে ৩.৭১%, সকালে ২৪.২৬%, দুপুরে ২৬.০২%, বিকালে ১৯.৩৭%, সন্ধ্যায় ৬.৬৫% এবং রাতে ১৯.৯৬%।


দুর্ঘটনার বিভাগ অনুযায়ী পরিসংখ্যান বলছে, ঢাকা বিভাগে দুর্ঘটনা ৩৪.০৫%, প্রাণহানি ২৯.৬৬%, রাজশাহী বিভাগে দুর্ঘটনা ১৪.৪৮%, প্রাণহানি ১৩.৭৮%, চট্টগ্রাম বিভাগে দুর্ঘটনা ১৫.২৬%, প্রাণহানি ১৪.৬৫%, খুলনা বিভাগে দুর্ঘটনা ৮.৮০%, প্রাণহানি ৯.৯৪%, বরিশাল বিভাগে দুর্ঘটনা ৪.৮৯%, প্রাণহানি ৭.৫০%, সিলেট বিভাগে দুর্ঘটনা ৩.৯১%, প্রাণহানি ৫.৪১%, রংপুর বিভাগে দুর্ঘটনা ১২.১৩%, প্রাণহানি ১২.৫৬% এবং ময়মনসিংহ বিভাগে দুর্ঘটনা ৬.৪৫%, প্রাণহানি ৬.৪৫% ঘটেছে।


ঢাকা বিভাগে সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটেছে। ১৭৪টি দুর্ঘটনায় ১৭০ জন নিহত। সিলেট বিভাগে সবচেয়ে কম ২০টি দুর্ঘটনায় ৩১ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। একক জেলা হিসেবে ঢাকা জেলা’য় সবচেয়ে বেশি ৪২টি দুর্ঘটনায় ৪০ জন নিহত হয়েছে। সবচেয়ে কম দুর্ঘটনা ঘটেছে শরীয়তপুর ও বান্দরবান জেলায়। এই ২টি জেলায় সামান্য মাত্রার ৫ টি দুর্ঘটনা ঘটলেও কোনো প্রাণহানি ঘটেনি। রাজধানী ঢাকায় ৩২টি দুর্ঘটনায় ২৯ জন নিহত এবং ৩৭ জন আহত হয়েছে।


প্রতিবেদনে সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণসমূহ উল্লেখ করা হয়েছে।


কারণগুলো হলো-


১. ত্রুটিপূর্ণ যানবাহন;
২. বেপরোয়া গতি;
৩. চালকদের বেপরোয়া মানসিকতা, অদক্ষতা ও শারীরিক-মানসিক অসুস্থতা;
৪. বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকা;
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন চলাচল;
৬. তরুণ-যুবদের বেপরোয়া মোটরসাইকেল চালানো;
৭. জনসাধারণের মধ্যে ট্রাফিক আইন না জানা ও না মানার প্রবণতা;
৮. দুর্বল ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা;
৯. বিআরটিএ’র সক্ষমতার ঘাটতি;
১০. গণপরিবহন খাতে চাঁদাবাজি।


দুর্ঘটনার প্রতিরোধে সংগঠনের পক্ষ থেকে কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছে।


সুপারিশসমূহের মধ্যে রয়েছে-


১. দক্ষ চালক তৈরির উদ্যোগ বৃদ্ধি করতে হবে;
২. চালকদের বেতন-কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট করতে হবে;
৩. বিআরটিএ’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে;
৪. পরিবহন মালিক-শ্রমিক, যাত্রী ও পথচারীদের প্রতি ট্রাফিক আইনের বাধাহীন প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে;
৫. মহাসড়কে স্বল্পগতির যানবাহন বন্ধ করে এগুলোর জন্য আলাদা সার্ভিস রোড তৈরি করতে হবে;
৬. পর্যায়ক্রমে সকল মহাসড়কে রোড ডিভাইডার নির্মাণ করতে হবে;
৭. গণপরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে; ৮. রেল ও নৌ-পথ সংস্কার করে সড়ক পথের উপর চাপ কমাতে হবে;
৯. টেকসই পরিবহন কৌশল প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে;
১০. ‌‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ বাধাহীনভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে।


বিবার্তা/রিয়াদ/জবা

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com