গ্যাস সিলিন্ডারে সয়লাব অলিগলি, দেখার কেউ নেই
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৩, ২২:৫৮
গ্যাস সিলিন্ডারে সয়লাব অলিগলি, দেখার কেউ নেই
সানজিদা আক্তার
প্রিন্ট অ-অ+

দেশের সব অলিগলিতে খুচরা ব্যবসায়ীরা লাইসেন্স ছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি করলেও তদারকি করার কেউ নেই। প্রশাসনের তদারকি না থাকায় এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের অনুমোদনহীন ব্যবসা দিন দিন বেড়েই চলেছে।


তদারকিতে বিস্ফোরক পরিদফতরের লোকবল সংকটের কথাই বলছেন কর্মকর্তারা। বিস্ফোরক পরিদফতরে ৩১ জন প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা রয়েছেন। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে একজন করে বিস্ফোরক পরিদর্শক রয়েছেন। এ ছাড়া ঢাকায় প্রধান কার্যালয়ে প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক এবং দুজন উপপ্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক রয়েছেন।


পরিদফতর জানায়, বিস্ফোরক পরিদফতরে এক জায়গায় পাওয়া যাবে সব সেবা। এ জন্য বাড়ছে লোকবল। ১০৪ জনের বিস্ফোরক পরিদফতরে এখন লোকবল হবে ১৫৯ জন। অর্গনোগ্রাম চূড়ান্ত করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এরপর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পেলেই অর্গনোগ্রামটি চূড়ান্ত করা হবে।


আবাসিক এলাকায় যত্রতত্র বিপদজনক দাহ্য পদার্থ পেট্রোলিয়াম এলপি গ্যাসের গুদাম গড়ে উঠেছে। এক শ্রেণির ঘর মালিক অধিক ভাড়ার লোভে এলপি গ্যাস ডিলারদের কাছে গুদাম ভাড়া দিচ্ছেন। এমনিক অনেকে আবাসিক বাসা-বাড়ির কিছু ইউনিট বা কক্ষ গ্যাস সিলিন্ডারের গুদাম হিসেবে ভাড়া দিচ্ছেন। এসব গুদামে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি না থাকায় আবাসিক এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বেড়েই চলছে।


এছাড়া বিস্ফোরক পরিদফতরের লাইসেন্স ও নকশা নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করা কথা থাকলেও এসব বিষয়ে আগ্রহ নেই খুচরা ব্যবসায়ীদের।


ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় বিবার্তা প্রতিবেদক ঘুরে দেখেছেন। মুদি দোকান থেকে শুরু করে ফার্মেসি ও কাপড়ের দোকানেও বিক্রি করা হচ্ছে এই গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার। অনেক খুচরা পেট্রোল বিক্রেতাদের দোকানেও গ্যাস ভর্তি সিলিন্ডার বিক্রি করতে দেখা যায়। লাইসেন্সবিহীন এই ব্যবসা অবাধে চলছে।


খুচরা ব্যবসায়ী আলামিন মালিবাগের বিভিন্ন বাসা-বাড়িতে সিলিন্ডার গ্যাস সরবরাহ করেন। ব্যবসা করার জন্য সকল নিয়ম মেনে চলছেন কিনা এমন প্রশ্ন করা হলে ব্যবসায়ী আলামিন বিবার্তাকে বলেন, আমাদের ছোট দোকান, আমরা শুধু সাপ্লাইয়ের কাজ করি। লাইসেন্স নিয়ে ডিলাররা ব্যবসা করছেন। আমরা শুধু এলাকাভিত্তিক এগুলো পৌঁছে দেই।


নিয়ম অনুযায়ী, যারা খুচরা ব্যবসায়ী আছেন তারা বিস্ফোরক পরিদফতরের লাইসেন্স ছাড়া ন্যূনতম ১০টি সিলিন্ডার বিক্রি করতে পারবেন। ১০ এর বেশি সিলিন্ডার মজুত বা বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশও ব্যবস্থা নিতে পারবে।


খুচরা ব্যবসায়ীর পাশাপাশি কথা হয় এসব গ্যাস ব্যবহারকারীর সাথেও। ব্যবহারকারীদের মাঝেও দেখা গেছে অসচেতনতা৷ কেনার সময় বেশিরভাগই যাচাই করার চেষ্টা করেন না।


সিলিন্ডার গ্যাস ব্যবহারকারী শামসুদ্দিন উদ্দিন খান বিবার্তাকে বলেন, আসলে এসব গ্যাস সিলিন্ডার তো বাসা বাড়িতেই দিয়ে যায়৷ ওইভাবে আমরা যাচাই করে দেখি না। শুধু ফুরিয়ে গেলে তাদেরকে জানাই।


যেসব এলাকায় গ্যাস সংযোগ নেই তাদের একমাত্র ভরসা সিলিন্ডার গ্যাস। কিন্তু এই সিলিন্ডার গ্যাস সুবিধা দিলেও এর ভয়াবহতা কিন্তু কম নয়। গত কয়েক বছরে অসংখ্য প্রাণ গেছে শুধু এই গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে। গ্যাসের সিলিন্ডার বিস্ফোরণ হওয়ার অন্যতম প্রধান কারণ মেয়াদ উত্তীর্ণ সিলিন্ডারের ব্যবহার। প্রত্যেকটি সিলিন্ডারের একটি নির্দিষ্ট মেয়াদ আছে এবং এই মেয়াদ সীমা শেষ হয়ে গেলে সিলিন্ডার তার চাপ ক্ষমতা হারায়।


এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বিবার্তাকে বলেন, গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রি, পরিবহন, মজুদ ও ব্যবহারে সচেতনতার অভাব ও বিধিমালা মেনে চলছেন না অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা। বিস্ফোরণ রোধে মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডার পুনঃপরীক্ষা বাধ্যতামূলক করবার বিধি থাকলেও সেটার প্রয়োগ তেমন একটা নেই। বিস্ফোরক আইনের শর্ত লঙ্ঘন করে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সিলিন্ডার মজুদ করা হচ্ছে এবং অনুমোদন ছাড়াই ঝুঁকিপূর্ণভাবে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে।


তিনি বলেন, ভবনের সার্বিক বসবাসজনিত নিরাপত্তা ও অগ্নিঝুঁকি কমাতে পরিকল্পনা জমাদানের সিদ্ধান্ত নগরের বাসযোগ্যতা বাড়াতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে এক্ষেত্রে উপযুক্ত পেশাজীবীদের সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করতে হবে এবং একইসাথে নাগরিকরা যেন কোন ভোগান্তির শিকার না হয় সেদিকে কর্তৃপক্ষের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে।


বিস্ফোরক অধিদফতরসহ যাদের এসব বিষয় সরেজমিনে তদারকি করার কথা তারাও জনবল সঙ্কটের অজুহাতে অধিকাংশ সময়েই তাদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাচ্ছে। বিস্ফোরক অধিদফতর জানায়, গ্যাস সিলিন্ডারের যারা ডিলার বা সাব-ডিলার রয়েছেন, তাদের অবশ্যই বিস্ফোরক অধিদফতরের লাইসেন্স নিতে হবে।


গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালায় যা আছে:


‘গ্যাস সিলিন্ডার বিধিমালা ১৯৯১’-তে বলা হয়েছে—‘গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রয়ের জন্য কমপক্ষে পাকা ফ্লোরসহ আধা পাকা ঘর থাকতে হবে। ফায়ার সার্ভিসের অগ্নিনির্বাপণ সক্ষমতা সংক্রান্ত লাইসেন্স ও ছাড়পত্রসহ অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র এক্সস্টিংগুইশার (Extinguisher), মজবুত এবং ঝুঁকিমুক্ত সংরক্ষণাগার থাকতে হবে।


সিলিন্ডার আমদানির বিষয়ে বিধির তৃতীয় পরিচ্ছেদে বলা আছে—লাইসেন্স ছাড়া সিলিন্ডার আমদানি নিষিদ্ধ। কোনও ব্যক্তি বিনা লাইসেন্সে গ্যাস পূর্ণ বা খালি সিলিন্ডার আমদানি করতে পারবেন না।


সিলিন্ডার পরিবহনের বিষয়ে বিধিমালার চতুর্থ পরিচ্ছেদে বলা আছে—গ্যাস পূর্ণ সিলিন্ডার কোনও দ্বিচক্রযানে (মোটরসাইকেল, সাইকেল) পরিবহন করা যাবে না। কোনও যানে সিলিন্ডার পরিবহনের ক্ষেত্রে সিলিন্ডারের কোনও অংশ উক্ত যানের বাইরে থাকা চলবে না। যানের যে অংশে সিলিন্ডার রাখা হয়, সে অংশে কোনও ধারালো বস্তু থাকবে না।


বিধিমালার সপ্তম পরিচ্ছদে সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি ও গ্যাস পূর্ণ সিলিন্ডার মজুত রাখার বিষয়ে বলা আছে—লাইসেন্স ব্যতীত সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি ও সংরক্ষণ নিষিদ্ধ। বিধি-৪১ এর বিধান অনুযায়ী কোনও ব্যক্তি বিনা লাইসেন্সে সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি করতে পারবেন না, অথবা গ্যাস পূর্ণ কোনও সিলিন্ডার তার অধিকারে (মজুত) রাখতে পারবেন না।


বিবার্তা/সানজিদা/রোমেল/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com