চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য আর কত অপেক্ষা?
প্রকাশ : ২৪ জুন ২০২৩, ১২:১৩
চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির চূড়ান্ত নিয়োগের জন্য আর কত অপেক্ষা?
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ) চলতি বছরের রবিবার, ১২ মার্চ রাতে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফলাফল প্রকাশ করেছে। এতে প্রাথমিকভাবে ৩২ হাজার ৪৩৮ জন প্রার্থীকে নির্বাচন করা হয়েছে। এরপর পেরিয়ে গেছে ৩ মাসের অধিক সময়। এরপরেও প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের চূড়ান্ত সুপারিশ করতে পারেনি এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষ।



এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রাথমিকভাবে সুপারিশকৃত শিক্ষকরা বলছেন, চূড়ান্ত সুপারিশের দাবিতে তারা দফায় দফায় এনটিআরসিএ কার্যালয়ে গিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু সেখানে তারা আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই পাননি। এদিকে এই বিষয়ে এনটিআরসিএ বলছে, এই শিক্ষকদের চূড়ান্ত সুপারিশকরণে তাদের কাজ চলমান রয়েছে। আগত ঈদের পরই তাদের চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাওয়া হবে।



জানা যায়, ২০২২ সালের ২২ ডিসেম্বর ৬৮ হাজার ৩৯০ জন শিক্ষক নিয়োগের লক্ষ্যে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে এনটিআরসিএ। এর মধ্যে স্কুল ও কলেজ পর্যায়ে ৩১ হাজার ৫০৮ জন এবং মাদরাসা, ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা ও কারিগরি স্কুল-কলেজে ৩৬ হাজার ৮৮২ জন নিয়োগ দেয়ার কথা জানানো হয়। এরপর এই গণবিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষক হতে মোট ১ লাখের বেশি চাকরিপ্রার্থী আবেদন করেন। যার মধ্যে ৩২ হাজার ৪৩৮ জন প্রার্থীকে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করেছে এনটিআরসিএ।



তবে তাদের প্রকাশিত এই ফলাফল নিয়ে উঠেছে অভিযোগও। কারো মেরিট পজিশন ভালো অবস্থানে থেকেও বাদ পড়া, এদিকে মেরিটে পিছিয়ে থাকা অনেকের সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়া, আবার কারো রোল ইনডেক্সধারীদের রোলের সাথে মিল থাকায় ব্লক হয়ে বাদ পড়া, আবার কেউ কেউ ৩৫ বছর ঊর্ধ্ব হয়ে গেলেও সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়াসহ নানা অভিযোগ এনেছিল চাকরি প্রত্যাশীরা। পরে এসব অভিযোগ তারা এনটিআরসিএ কর্তৃপক্ষসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়েও জমা দিয়েছে। এই বিষয়ে এনটিআরসিএ বলছে, ভুল হয়ে থাকলে সেটি অবশ্যই সংশোধন করে দেয়া হবে।



তথ্য বিশ্লেষণে আরও জানা যায়, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফল প্রকাশের প্রায় দেড় মাস পর অর্থাৎ গত ২৭ এপ্রিল থেকে ৩১ মে পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে সুপারিশকৃতদের চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য প্রথমবারের মতো অনলাইনে ভি-রোল ফরম পূরণের নির্দেশ দেয় এনটিআরসিএ। এরপর আরও দুই দফায় ফরম পূরণের সময় বাড়িয়ে ২৬ জুন করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে ৬ থেকে ১১তম নিবন্ধনধারী প্রাথমিক সুপারিশপ্রাপ্ত প্রার্থীদের সরাসরি এনটিআরসিএ অফিসে সার্টিফিকেটের হার্ডকপি জমা দিতে হবে। এসব নানা কারণে ৩ মাসের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও প্রাথমিকভাবে নির্বাচিতদের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়নি।


তবে এভাবে দফায় দফায় সময় বাড়ানোকে নেতিবাচকভাবে দেখছে প্রাথমিকভাবে সুপারিশকৃতরা। তারা বলছেন, একবার এক সেক্টরের জন্য সময় বাড়ানো হয়, আবার অন্য আরেক সেক্টরের জন্য সময় বাড়ানো হয়, এভাবে তো সময়ের কালক্ষেপন হচ্ছে! ফলে চূড়ান্ত সুপারিশও আটকে আছে। কাজেই কর্তৃপক্ষ চাইলে তো সবার জন্য একসাথে একটা নির্ধারিত সময় বেঁধে দিতে পারে। কিন্তু তারা সেটি কেন করছে না? ফলে বুঝা যায় যে, এই বিষয়ে তাদের সদিচ্ছার অভাব রয়েছে।


এই বিষয়ে চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিকভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক আশিকুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, এই গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে শিক্ষক হয়েছি- এটা পরিবার, সমাজ, আত্মীয়স্বজনসহ সবাই জেনেছে। কিন্তু এখনো আমি চূড়ান্ত সুপারিশের মাধ্যমে জয়েন করতে না পারায় আমাকে নিয়ে সবার-ই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। আর এটা হওয়াটাই তো স্বাভাবিক। কেননা, সবাই তো আমাকে কর্মক্ষেত্রে দেখতে চাই। এদিকে চাকরির বয়সও শেষ। তাই শেষ ভরসা ছিল এই চাকরি। কিন্ত এখানেও যে, এতো গড়িমসি সেটা দেখে খুবই খারাপ লাগছে।


এই চাকরিপ্রার্থী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আসলে সত্যি বলতে আমাদের বেকারদের নিয়ে ভাবার যেন কেউ নেই? নির্ধারিত দায়িত্ব দেওয়া থাকলেও সবাই যেন নিজের ব্যক্তিগত কাজে ব্যস্ত। একজন বেকারের একটা চাকরির সাথে তার পরিবারসহ কত কিছু জড়িত সেটা ভাবকে কে?


চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে প্রাথমিকভাবে সুপারিশপ্রাপ্ত শিক্ষক আরাফাতুল ইসলাম আরাফাত বিবার্তাকে বলেন, কতটা ত্যাগ -তিতিক্ষা আর কষ্টের পর এই যুগে এখন একটা চাকরি মেলে, সেটা কেবল এই পথে যারা হেঁটেছেন তারাই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু এরপরেও কেউ যদি চাকরি পেয়ে নানা ভোগান্তি পোহাতে হয়, সেটা কি মেনে নেওয়া যায় ? এটা খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষক সংকটের শেষ নেই। যার কারণে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। এই বিষয়টা কার না জানা? কিন্তু এরপরেও আমাদের প্রাথমিকভাবে সুপারিশের পর ৩ মাসের অধিক সময় পেরিয়ে গেলেও চূড়ান্ত সুপারিশের খবর নেই!


ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, চাকরি পেয়েও চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিকভাবে সুপারিশকৃতরা হতাশায় দিনাতিপাত করছে। এর দায়ভার কার? আমরা চাই সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে অবিলম্বে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হোক। তাহলে তা শিক্ষাব্যবস্থাসহ সবার জন্য মঙ্গলজনক হবে।


ইসরার জাহান রুম্পা নামের প্রাথমিকভাবে সুপারিশকৃত এক শিক্ষক বিবার্তাকে বলেন, চূড়ান্ত সুপারিশে বেশি সময় লাগার কথা না। তবে এক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষের আন্তরিক চেষ্টা আছে কি-না সেটা একটা বড় বিষয়। আর যেহেতু তৃতীয় গণবিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ ভেরিফিকেশন চলমান রেখে নিয়োগের চূড়ান্ত সুপারিশ করা হয়েছে, কাজেই চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতেও এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করা যেতে পারে। এই বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষও কথা বলেছে। কিন্তু এটার বাস্তবায়ন কবে হবে, সেটা তো জানি না।


চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে প্রাথমিকভাবে সুপারিশকৃতদের অভিযোগের বিষয়ে এনটিআরসিএ বলছে, একদিকে প্রার্থীদের অনলাইন ভেরেফিকেশন ফরমে ভুল তথ্য থাকা, অন্যদিকে অনেকে তথ্য পূরণ না করার কারণে এই কাজে দেরী হচ্ছে। তবে তারা দ্রুততার সাথে কাজটি করার চেষ্টা করছেন। চলতি মাসের ২৬ জুনের মধ্যে ফরম পূরণ শেষ হলে ঈদের পর চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চাওয়া হবে।


চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তিতে চূড়ান্ত সুপারিশে দেরি হওয়ার বিষয়ে অবগত করে মন্তব্য জানতে চাইলে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ এর (এনটিআরসিএ) সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বিবার্তাকে বলেন, দেখুন- এই বিষয়ে আমাদের কাজ চলমান রয়েছে। পুলিশ ভেরিফিকেশনের আবেদন শেষ হয়নি এখন পর্যন্ত। আবার অনেকে আবেদনে ভুল করছে। ফলে সেগুলোও যাচাই করতে হচ্ছে। আর এসব কারণে আমরা ২৬ জুন পর্যন্ত আবেদনের সময় বাড়িয়েছি। ঈদের পর চূড়ান্ত সুপারিশের জন্য আমরা মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চাইব। অনুমতি পেয়ে গেলে চূড়ান্ত সুপারিশ করা হতে পারে।


গণবিজ্ঞপ্তির ফলাফল নিয়ে অসঙ্গতির অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, চতুর্থ গণবিজ্ঞপ্তির ফলাফল নিয়ে যাদের অসঙ্গতির অভিযোগ রয়েছে, তাদের অভিযোগপত্র দিতে বলেন। আমরা ভেরিফাই করে দেখবো। কোন সমস্যা থাকলে আমরা অবশ্যই দেখবো। দুই একটা ভুল হতে পারে। কিন্তু অসঙ্গতি বলতে মানুষ যেটা বোঝাচ্ছে, সেটা আসলেই না। আমরা তো মিলিয়ে দেখছি। আমরা একটা একটা করে যেগুলো আবেদন পাচ্ছি, সেগুলোকে মিলাচ্ছি। কাজেই যাদের অভিযোগ রয়েছে, তারা আবেদন দিলে আমরা ফাইনাল সুপারিশের আগে তথ্য দিয়ে দেবো।


সার্বিক বিষয়ে অবগত করে মন্তব্য জানতে চাইলে এনটিআরসিএ চেয়ারম্যান মো. এনামুল কাদের খান বিবার্তাকে বলেন, প্রাথমিকভাবে সুপারিশকৃত অনেকে ভি রোলের ফরমে ভুল করেছে। ফলে সেই সব আবেদন ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এদিকে আবার অনেকে এখনো তথ্য সাবমিট করেনি। এসব কারণে লেট হচ্ছে। তবে এখন শিক্ষকদের পুলিশ ভেরিফিকেশনের পাশাপাশি সনদও যাচাই করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই চূড়ান্ত ফল দিতে পারবো। আর সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে।


বিবার্তা/রাসেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com