আওয়ামী লীগের ৭৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ
'দেশের মানুষের আস্থা ও ভরসার জায়গায় পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ'
প্রকাশ : ২৩ জুন ২০২৩, ০৯:৫৮
'দেশের মানুষের আস্থা ও ভরসার জায়গায় পরিণত হয়েছে আওয়ামী লীগ'
সোহেল আহমদ
প্রিন্ট অ-অ+

১৯৪৯ সালের ২৩ জুন পুরান ঢাকার রোজ গার্ডেনে গঠিত হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। প্রতিষ্ঠাকালীন সময়ে ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ নাম থাকলেও ১৯৫৫ সালে দলটি ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করে। ১৯৫৫ সালে অনুষ্ঠিত আওয়ামী মুসলিম লীগের কাউন্সিলে দলের নাম থেকে মুসলিম শব্দটি বাদ দিয়ে নামকরণ করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ’। এরপর থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে জাতি গঠনের সোপানে- স্বাধিকার আন্দোলনের প্রতিটি ধাপে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে ঐতিহ্যবাহী এ রাজনৈতিক দলটি।


১৯৪৭ সালে পৃথক দু’টি ভূখণ্ড নিয়ে প্রতিষ্ঠা পায় পাকিস্তান। এর একটি ভূ-খণ্ড ছিল পূর্ব পাকিস্তান। পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে এই অংশের ছিলো ভাষা ও সংস্কৃতির কোন মিল ছিল না। ওই সময়ে তখনকার যুবনেতা শেখ মুজিবুর রহমান বুঝতে পেরেছিলেন এই রাষ্ট্রটি বাঙালি জাতির জন্য প্রতিষ্ঠা পায়নি। বাঙালি জাতির জন্য প্রয়োজন স্বাধীন, সার্বভৌম রাষ্ট্র। আর এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে শুরু হয় পশ্চিম পাকিস্তানের শাসন-শোষণ থেকে মুক্তির লড়াই।


দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে আওয়ামী লীগের হাত ধরে স্বাধীন বাংলাদেশ পায় নতুন মানচিত্র, নতুন পতাকা ও জাতীয় সংগীত। যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশকে অর্থনৈতিক মুক্তির পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার নির্মমভাবে হত্যা করে একাত্তরের পরাজিত শক্তি। এরপর অনেকটা অস্তিত্ব সংকটে পড়ে আওয়ামী লীগ। দলের ভেতরে শুরু হয় ভাঙন। তবে সেই সংকট খুব দ্রুতই কাটিয়ে ওঠে দলটি। ১৯৮১ সালে দলের সভাপতি নির্বাচিত হন বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনা। নানা বাধা-বিপত্ত উপেক্ষা করে দলকে সুসংগঠিত করতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে যান। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনে তাঁর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা তীব্র গণআন্দোলনের তৈরি করে। দীর্ঘ ২১ বছর লড়াই সংগ্রামের পর ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ।



২০০১ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয় দলটি। এরপর ২০০৪ সালে গ্রেনেড হামলা হয় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর। তিনি প্রাণে বেঁচে গেলেও প্রাণ হারান দলের ২৪ জন নেতা-কর্মী। ২০০৭ সালে দেশের রাজনীতি থেকে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। তবে সেই ষড়যন্ত্রের পথ মাড়িয়ে ২০০৮ সালের নির্বাচনে আবারো রাষ্ট্রপরিচালনার সুযোগ পায় স্বাধীনতাযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দলটি। এরপর থেকে টানা তিন মেয়াদে সরকারে রয়েছে আওয়ামী লীগ।



৭৩ বছরের পথপরিক্রমায় দেশের বৃহত্তম ও প্রাচীন রাজনৈতিক দলটিকে অনেক চড়াই-উৎরাই পেরুতে হয়েছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের নেতারা বলছেন, বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আওয়ামী লীগ গঠন করেছিলেন এবং আওয়ামী লীগের নেতৃত্বেই দেশ স্বাধীন হয়েছে। স্বাধীন বাংলাদেশের যা কিছু অর্জন তার সবকিছুই আওয়ামী লীগের হাত ধরে হয়েছে। স্বাধীনতা, মানচিত্র, পতাকা, জাতীয় সংগীত সবই আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অর্জিত হয়েছে। দেশের মানুষকে অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আর বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগের দায়িত্ব নিয়ে সেই স্বপ্ন পূরণে কাজ করে চলেছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা।


দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, নির্যাতন ও শোষণের বিরুদ্ধে লড়াই-সংগ্রাম করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বারবার মৃত্যুমুখ থেকে ফিরে আসা শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছেন। অন্ধকারে নিপতিত দেশকে আলোয় উদ্ভাসিত করেছেন। খাদ্য ঘাটতির দেশকে খাদ্য উদ্বৃত্তের দেশে পরিণত করেছেন। আওয়ামী লীগের শাসনামলে স্যাটেলাইটভুক্ত দেশ হয়েছে বাংলাদেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশে থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। পোড় খাওয়া দল আওয়ামী লীগ কখনো ভয় পায় না।



আওয়ামী লীগ শুধু রাজনৈতিক দল নয়; অনুভূতির নাম: হানিফ



আওয়ামী লীগের দেশের সবচেয়ে বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন। বাঙালি জাতির অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য, জাতির মুক্তির জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হাত ধরে সংগঠনটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু ছিলেন ভিশনারি লিডার। ১৯৪৭ সালের দেশ ভাগে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই রাষ্ট্র বাঙালিদের জন্য নয়। তাই তখন থেকেই তিনি বাঙালি জাতির জন্য একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখেছিলেন এবং সে স্বপ্ন পূরণের জন্য আওয়ামী লীগ গঠন করেন।


আওয়ামী লীগের এ সিনিয়র নেতা বলেন, বাঙালির মুক্তি আন্দোলন-সংগ্রামের নেতৃত্ব দিতে গিয়ে তিনি বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ জনগণের নিরঙ্কুশ ম্যান্ডেট নিয়ে বিজয়ী হলে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ষড়যন্ত্র শুরু করে। এরপর তিনি জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করে স্বাধীনতার ডাক দেন। তাঁর নেতৃত্বে আমরা মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ি। নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি। এরপর আবার আওয়ামী লীগের নতুন করে পথচলা শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের নতুন মানচিত্র, পতাকা, জাতীয় সংগীত সবই আওয়ামী লীগের হাত ধরে এসেছে।


মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির জন্য কাজ শুরু করেন- তার সাড়ে তিন বছরের মাথায় একাত্তরের পরাজিত শক্তি তাকে স্বপরিবার হত্যা করে। আর এর মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতির অর্থনৈতিক মুক্তির স্বপ্নকে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর নতুন করে দলের হাল ধরেন। বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে লড়াই-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেন। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে তাঁর নেতৃত্বে সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। ২০০১ সালের নির্বাচনে ষড়যন্ত্রের কাছে পরাজিত হলেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারো সরকার গঠন করে আওয়ামী লীগ। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে উন্নয়েনের রোল মডেলে পরিণত করেছেন। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের আস্থা, ভরসার জায়গায় পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগ শুধু একটি রাজনৈতিক দল নয়, আওয়ামী লীগ এখন অনুভূতির নাম।


মাহবুবউল আলম হানিফ এমপি


যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ



মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে: নাছিম



আমাদের মহান স্বাধীনতা অর্জন আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে হয়েছে। দেশের প্রাচীন রাজনৈতিক এই সংগঠনের মাধ্যমেই বাঙালির শৌর্য-বীর্যের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় অর্জন হয়েছে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শ্রম, ঘাম ও মেধায় আওয়ামী লীগ বিকাশ লাভ করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দশকের বেশি সময় ধরে দলের নেতৃত্বে আছেন। আন্দোলন, সংগ্রাম করে তিনি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। এর পাশাপাশি বাংলাদেশকে উন্নয়ন-অগ্রযাত্রায় এগিয়ে নিচ্ছেন।


বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিলো আধুনিক বাংলাদেশ। একসময় বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে আমরা যে স্বপ্ন দেখেছিলাম- আর আজ তাঁরই কন্যা রাষ্ট্র পরিচালনা করে সেই স্বপ্ন পূরণ করে চলেছেন। উন্নয়ন-অগ্রগতিতে বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। উন্নয়ন, সমৃদ্ধি অভিযাত্রায় দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের পাশে আছে। মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।


আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম


যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ



জন্মলগ্ন থেকেই আ. লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করছে: আমিন



সাধারণ মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছে। জন্মলগ্ন থেকেই আ.লীগ জনগণের কল্যাণে কাজ করছে। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর একাত্তরের পরাজিত শক্তি দেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা তা হতে দেয়নি। দীর্ঘ পথচলায় চড়াই-উৎরাই পার হতে গিয়ে অনেক প্রাণ হারাতে হয়েছে, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরকে ত্যাগ-তিতিক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে।


অনেক ঘাত-প্রতিঘাত পেরিয়ে আজকের আওয়ামী লীগের অবস্থান। আওয়ামী লীগ টানা ক্ষমতায় আছে বলে আজ বাংলাদেশ বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। চরম দারিদ্রের দেশ আজ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ডিজিটাল বাংলাদেশ, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে কাজ চলছে। স্বাধীনতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে।


আমিনুল ইসলাম আমিন


ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।


বিবার্তা/সোহেল/রোমেল

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com