অগ্নিঝুঁকিতে পুরান ঢাকা : কেমিক্যাল গোডাউন স্থানান্তরে গড়িমসি
প্রকাশ : ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১৪:৩৩
অগ্নিঝুঁকিতে পুরান ঢাকা : কেমিক্যাল গোডাউন স্থানান্তরে গড়িমসি
সানজিদা আক্তার
প্রিন্ট অ-অ+

পুরান ঢাকার ভবনগুলো সর্বোচ্চ অগ্নিঝুঁকিতে থাকলেও শত চেষ্টায় সরানো যায়নি কেমিক্যাল গোডাউনগুলি। ইতোমধ্যে এক যুগের বেশি সময় পার হয়েছে নিমতলীতে স্মরণকালের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটনার।


২০১০ সালের ৩ জুন রাজধানীর পুরান ঢাকার নবাবকাটরার নিমতলীর ৪৩ নম্বর বাড়িতে রাত ৯টায় রাসায়নিকের গুদামে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ওই অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জনের মৃত্যু হয়। পাশাপাশি ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন মারা যান।


এরপর পুরান ঢাকার ঘিঞ্জি এলাকাগুলো থেকে রাসায়নিক গোডাউন সরানোর উদ্যোগ নেয় সরকার। এজন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস রাসায়নিক ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রিপরিষদে উপস্থাপন করে।


ওই সময় সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস যৌথভাবে ১৯২৪ জন ব্যবসায়ীর তালিকা করে মন্ত্রিপরিষদ গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটির কাছে হস্তান্তরও করে। পরে ওই কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্থায়ীভাবে মুন্সীগঞ্জ সিরাজদিখানের তুলসীখালীতে কেমিক্যাল পার্ক নির্মাণ করার দায়িত্ব দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিসিককে।



ওইসময় আপৎকালীন সুরক্ষা ব্যবস্থা করার জন্য পোস্তগোলায় একটি রাসায়নিক গোডাউন নির্মাণ করার জন্য বিসিআইসিকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে বিসিআইসি এখনও ওই গোডাউন নির্মাণ করতে না পারায় পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক গুদাম সরানো সম্ভব হয়নি।



২০১১ সালের ২০ এপ্রিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে ঢাকা মহানগরের আবাসিক এলাকা থেকে অবৈধ রাসায়নিক কারখানা ও গুদামগুলো কামরাঙ্গীরচর ও কেরাণীগঞ্জে সরানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। 



২০১৪ সালের ৩ জুন শিল্পসচিব বলেছিলেন  কেমিক্যাল পল্লিতে সাততলা ১৭টি ভবন তৈরি করে গুদাম সরানো হবে। পরের বছর ২ ফেব্রুয়ারি কেরাণীগঞ্জে ২০ একর জায়গায় পল্লী স্হাপন করার কথা বলেন তিনি। জায়গায় পরিমাণ বেড়ে এখন ৩১০ একর হয়েছে। 



বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুরান ঢাকায় আগুনের আঁচ পেলেই জ্বলে ওঠে ২৯ ধরনের কেমিক্যাল। পুরান ঢাকায় ২ হাজার ব্যবসায়ী কেমিক্যাল ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আট শতাধিক ধরনের কেমিক্যাল বিক্রি করেন তারা। এসব কেমিক্যাল গোডাউনে মজুত রাখা হয়। এসব গোডাউনে রয়েছে সোডিয়াম আনহাইড্রোজ, সোডিয়াম থায়োসালফেট, হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড, মিথাইল ইথাইল কাইটন, থিনার, আইসোপ্রোপাইল ও টলুইনের মতো ২৯ ধরনের কেমিক্যাল।



সম্প্রতি প্রকাশিত ফায়ার সার্ভিসের একটি প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকার প্রায় ৫৪ শতাংশ ভবন। এর মধ্যে আবাসিক, বাণিজ্যিক, শিল্প, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারি ও বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান রয়েছে। 


২০২২ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর সারা দেশে ভবনগুলোর অগ্নিনিরাপত্তার বিভিন্ন বিষয় পরিদর্শন করে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। প্রতিবেদনটি তৈরি করতে ৫ হাজার ৮৬৯টি ভবন পরিদর্শন করে ফায়ার সার্ভিস। এতে ২ হাজার ২২৩টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে। এর মধ্যে অতিঝুঁকিপূর্ণ ৬৭১টি এবং ১ হাজার ৬০৬টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন রয়েছে। একই সঙ্গে অগ্নিনিরাপত্তায় ৩ হাজার ৯৬টি ভবনে সন্তোষজনক ফলাফল পাওয়া গেছে। 


সবচেয়ে বেশি ঢাকায় ৫৪ দশমিক ৬৭ শতাংশ ভবন অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকায় সরকারি-বেসরকারি ১ হাজার ১৬২টি ভবন পরিদর্শন করে ৬৩৫টি ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ফায়ার সার্ভিস। যার মধ্যে ১৩৬টি ভবন অতিঝুঁকিপূর্ণ এবং ৪৯৯টি ঝুঁকিপূর্ণ। আর ৫২৭টি ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা সন্তোষজনক।


ফায়ার সার্ভিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিদর্শনের সময় ভবনের মাটির নিচের জলাধারের ধারণক্ষমতা, অবস্থানকারীর সংখ্যা, প্রবেশদ্বারের প্রশস্ততা, ধোঁয়া ও তাপ শনাক্তকরণ যন্ত্রের উপস্থিতি, মেঝের আয়তন, জরুরি নির্গমন সিঁড়ি, লিফট ইত্যাদি খতিয়ে দেখে ভবনগুলোকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ ও ‘অতিঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।


এর আগে ঢাকায় বড় কয়েকটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর ২০১৭ সালে ভবনগুলোর ওপর বিশেষ জরিপ চালায় ফায়ার সার্ভিস। হাসপাতাল, মার্কেট, আবাসিক হোটেল ও উঁচু ভবনগুলোর অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। সেখানে দেখা যায় ঢাকার অধিকাংশ ভবনই অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। ওই রিপোর্টের তথ্য অনুযায়ী ঢাকার ৯৬ শতাংশ বিপণিবিতান, ৯৮ শতাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ৯৮ শতাংশ হাসপাতাল-ক্লিনিক অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে।



ভবনের অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে সতর্ক করা হলেও সরকারি কিংবা বেসরকারি কর্তৃপক্ষ কেউই আমলে নেয় না। ফায়ার সার্ভিসের কাছে আইনি ক্ষমতা না থাকায় কোনো ধরনের ব্যবস্থাও নিতে পারে না তারা। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিস বিবার্তাকে জানান, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করে মালিকদের চিঠি দেয়া হয়েছে। 



'আমাদের কাজ সমস্যা চিহ্নিত করা, মানুষকে সচেতন করা। আইন প্রয়োগ করার জন্য অন্য সংস্থা রয়েছে,' নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বিবার্তাকে বলেন।


জানতে চাইলে ইনস্টিটিউট ফর প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান বিবার্তাকে বলেন, ‘অগ্নিনিরাপত্তার সঙ্গে অনেকগুলো সংস্থা জড়িত। এসব সেবা-সংস্থার মধ্যে আন্তঃযোগাযোগের ঘাটতি আছে। যথাযথ সমন্বয় ও আইনের প্রয়োগ না থাকায় অনেকেই অগ্নিনিরাপত্তা নিয়ে উদাসীন। তবে মানুষের জীবনের নিরাপত্তার প্রশ্নে সরকারের কঠোর হতে হবে।’ 



তিনি বলেন, ‘সংস্থাগুলোর মধ্যেও অনেক সময় ভীতি কাজ করে। কেননা বহুতল ভবনগুলোর মালিক সবাই প্রভাবশালী। কখন কার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে গিয়ে কী হয়ে যায়, তাদের ভেতর এমন এক ধরনের চাপ কাজ করে।’


বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ মেহেদী আহসান বলেন, ‘সরকারি ভবনের চেয়ে ব্যাক্তিমালিকানাধীন ভবনে অগ্নি ঝুঁকি বেশি। সরকারি ভবনগুলোতে অনেকাংশেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা থাকে। তাই নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ভবন মালিকদের নিজ থেকে উদ্যোগী হতে হবে। তারা নিজেরা ভবনের অগ্নিনির্বাপক ব্যাবস্থা নিশ্চিত না করলে ফায়ার সার্ভিসসহ সরকারের সংস্থাগুলোকে জননিরাপত্তার বিষয় চিন্তা করে কঠোর হতে হবে।’


গত বছরের ৪ জুন চট্টগ্রামের বিএম ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত হন ৫১ জন। ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি পুরান ঢাকার চুড়িহাট্টায় অগ্নিকাণ্ডে ৭১ জন মারা যান। একই বছর ২৮ মার্চ বনানীর এফআর টাওয়ারে আগুন লেগে ২৬ জনের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় ৭০ জন আহত হন। ২০১০ সালে পুরান ঢাকার নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডে ১২৪ জন মানুষ প্রাণ হারান। 


ফায়ার সার্ভিসের ওই প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২২ সালে সারা দেশে ২৪ হাজার ১০২টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৯৮ জন এবং আহত হয়েছেন ৪০৭ জন। নিহতদের মধ্যে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছেন ১৩ জন।


প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে সারা দেশে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ৩৪২ কোটি ৫৮ লাখ ৫১ হাজার ৩৮৯ টাকা। আর উদ্ধার করা মালামালের আনুমানিক মূল্য ১ হাজার ৮০৮ কোটি ৩২ লাখ ৬৪ হাজার ৬৬০ টাকা। এ ছাড়া ৯ হাজার ৫১৭টি অগ্নিকাণ্ডের অপারেশনে যাওয়ার আগে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।


২০১৯ সালের নগরভবনে সমন্বিত সভায় এক মাসের মধ্যে পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক কারখানা ও গুদাম সরানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। 


সভায় পুরান ঢাকাকে নিরাপদ করতে দুটি টাস্কফোর্স গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। অন্যদিকে অগ্নিকাণ্ড পরবর্তী করণীয় সভায় শিল্পমন্ত্রী ঘোষণা ছয় মাসের মধ্যে পুরান ঢাকার কেমিক্যাল গোডাউন সরানোর জন্য জায়গা প্রস্তুত ও বরাদ্দ দেয়ার দিয়েছিলেন । প্রশাসনের সব সিদ্ধান্ত মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ব্যবসায়ীরা।


মন্ত্রী বলেন, এ ক্ষেত্রে প্রচলিত প্রকল্প বাস্তবায়নের নীতিমালা অনুসরণ করা হবে না। বরং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরামর্শ অনুযায়ী জরুরী ভিত্তিতে এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের প্রতিনিধি, কেমিক্যাল ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত হয়ে তাদের মতামত তুলে ধরেন।


তখন শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন আরও বলেছিলেন, ঢাকা শহরের আবাসিক এলাকাগুলোর মধ্যে কোন কেমিক্যাল গোডাউন থাকবে না। প্রচলিত নীতিমালাগুলোর বাইরে গিয়ে হলেও যত দ্রুত সম্ভব এ সমস্যার সমাধান করা হবে।


নিমতলীর অগ্নিকাণ্ডে শতাধিক মৃত্যুর ঘটনার পর আওয়াজ ওঠে পুরানো ঢাকা থেকে কেমিক্যালসহ সব ধরনের ঝুঁকিপূর্ণ শিল্প সরিয়ে নেয়ার। সে সময় সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সংস্থা নানা তৎপরতা শুরু করে। তবে সে পদক্ষেপ আর বেশি দূর এগোয়নি।


চকবাজারের চুড়িহাট্টা ট্র্যাজেডির পর সব মহল থেকে দাবি উঠেছে পুরান ঢাকাকে নিরাপদ করার। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে পুরান ঢাকাকে নিরাপদ করতে উদ্যোগ নিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে  সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে নিয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন মেয়র সাঈদ খোকন। এ সময় সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে উঠে আসে নানা পরামর্শ।



কেমিক্যাল পল্লী স্থাপনে দেরি হওয়ায় তৈরি করা হচ্ছে ৫৪ টি কেমিক্যাল গোডাউন। ঢাকার কদমতলীর শ্যামপুরে এসব গুদাম নির্মাণের লক্ষ্যে 'অস্থায়ী ভিত্তিতে রাসায়নিক দ্রব্য সংরক্ষণের জন্য গুদাম নির্মাণ' নামের একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। বাস্তবায়নে খরচ ধরা হয়েছে ৭৯ কোটি ৪১ লাখ টাকা।  আর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিসিআইসি। 


কেমিক্যাল গোডাউন স্থানান্তর সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে ঢাদসিক মেয়র ব্যারিস্টার শেখ তাপস বিবার্তাকে বলেন, 'কেমিক্যাল গোডাউন স্থানান্তরে শিল্প মন্ত্রণালয় থেকে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। আমাদেরকে জানানো হয়েছিল যে, ডিসেম্বরের মধ্যেই এসব গোডাউন স্থানান্তর করা হবে। কিন্তু এখন জানুয়ারিও পার হয়ে গেলো। এখানো স্থানান্তরিত হয় নাই। আমি আশা করব যে, এই ফেব্রুয়ারিতেই স্থানান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে। শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলে সেজন্য ঘর/গুদাম করা হয়েছে। সেখানে প্রাথমিকভাবে স্থানান্তর হওয়ার কথা। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে এসব গোডাউন স্থানান্তরে চাপ দিচ্ছি। সেটি হলে পুরাতন ঢাকার বিপদজনক কেমিক্যাল গোডাউনের বিপদ থেকে ঢাকাবাসী মুক্তি পাবে।'


দায়িত্বপ্রাপ্ত  সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতায় সরছে না গুদাম :


শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন (বিসিক) নির্ধারিত সময় কেমিক্যাল পার্ক ও বিসিআইসি শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলে অস্থায়ী গুদাম নির্মাণ করতে না পারায় এখনো যথাস্থানে রয়েছে রাসায়নিকের গুদাম। তাই আতঙ্ক নিয়েই বসবাস করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। এখনও ওই এলাকার অলিগলিতে রাসায়নিকের গুদাম থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিমতলী, নবাবকাটরা, আগামসি লেনের বাসিন্দারাসহ সবাই।


সরেজমিনে দেখা যায়, এখনো নবাবকাটরা, আগামসি লেন, নাজিরাবাজার, মিটফোর্ড, কায়েতটুলীসহ আশপাশের অনেক বাড়িতে গোপনে রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে। 


সিটি করপোরেশন ও অন্য সংস্থার তৎপরতায় এখন আর কোনো বাড়িওয়ালা রাসায়নিকের গুদাম হিসাবে বাড়ি ভাড়া দেয় না। যদিও অনেকেই গোপনে রাসায়নিকে গুদাম হিসাবে বাড়ি ভাড়া দিচ্ছে। এমন বাড়ির মালিকের সংখ্যাও কম না। 


নতুন করে পুরান ঢাকায় গুদাম স্থাপন করে কাউকে রাসায়নিকের ব্যবসা করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না বলে বিবার্তাকে জানান ফায়ার সার্ভিস। পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে রাসায়নিকের গুদাম শনাক্ত করে তা সরানোর কাজ চলছে।



চুড়িহাট্টা ট্রাজেডির পর প্রথমে কেরানীগঞ্জে কেমিক্যাল পল্লী গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হয়। পরে তা মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে স্থানান্তর করা হয়। ২০১৮ সালের জুলাই থেকে জুন ২০২১ মেয়াদের একটি প্রকল্প নেয় সরকার। পরে আরো এক বছর বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত প্রকল্পের মেয়াদ কাল ধার্য করা হয়।  সর্বশেষ প্রকল্পের মেয়াদ আরো ২ বছর বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে৷ তবে কাজের বাস্তবতা বলছে অন্য কথা। মাটি ভরাটের কাজই শেষ হয়নি।বায়াকয়েকজন ন প্রকল্প বাস্তবায়ন সংশ্লিষ্ট কয়েকজন বিবার্তাকে জানান,  বেঁধে দেয়া সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব নয়।  তবে  প্রকল্প পরিচালক মোঃ হাফিজুর রহমান ২০২৪ সালের মধ্যে কাজ শেষ হবার কথা জানিয়েছে বিবার্তাকে।



এছাড়া শ্যামপুর ও মুন্সীগঞ্জে দ্রুত অবকাঠামোর উন্নয়ন করা সম্ভব হলে স্বল্প সময়ের মধ্যেই রাসায়নিকের গুদাম ও প্লাস্টিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান সরে যাবে বলে জানান মন্ত্রনালয়।


পাশাপাশি রাসায়নিক গুদামে আগুন লাগলে তার ভয়াবহ পরিণতি এবং ক্ষতিকর দিক তুলে ধরে ফায়ার সার্ভিস ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়ানোর কাজ চলছে বলে অবগত করেন স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। 


পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান জানান, কেমিক্যাল পল্লী আরও বড় পরিসরে এবং তুলনামূলক কম জনবহুল এলাকায় স্থাপনের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়ায় অনুমোদিত বিসিক কেমিক্যাল পল্লীটি ঢাকার কেরাণীগঞ্জ এলাকায় ৫০ একর জমিতে স্থাপনের পরিবর্তে মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে ৩১০ একর জমিতে করা সিধান্ত হয়েছে। কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত অস্থায়ী থাকতে হবে।


বিবার্তা/সানজিদা/রোমেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com