শিরোনাম
২৫ বছর ধরে নির্দোষ দাবির পর অবশেষে মুক্তি!
প্রকাশ : ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭, ২৩:৩৯
২৫ বছর ধরে নির্দোষ দাবির পর অবশেষে মুক্তি!
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

নাম মো. বাবুল। বাড়ি কুমিল্লায়। ১৯৯২ সালে তাকে ডাকাতির মামলায় গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে যে অপরাধ, তার সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছর। তাও আবার অপরাধ প্রমাণিত হলে। তার অপরাধ প্রমাণ হওয়ার আগেই ২৫ বছর জেলে। জেলে জীবন-যৌবন নষ্ট হলো তার। ২৫ বছর পরে মুক্ত বাতাসের শ্বাস নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে প্রশ্ন, কী অপরাধে ২৫ বছর জেলে আমি(বাবুল)। ২৫ বছর আগের দাবি আমি নির্দোষ। আমি কোনো দোষ করিনি। আজও একই দাবি। আজই হয়ত আমার নির্দোষ দাবির কথা আদালতে পৌঁছাল।


২৫ বছর পরে বুধবার ঢাকার একটি আদালত তাকে বেকসুর খালাস দিয়েছেন। খালাস পাওয়া ওই ব্যক্তির।


খালাস আদেশের পর বাবুল বলেন, ২৫ বছর আগে ১৯৯২ সালে ডেমরা থেকে সিআইডি পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। তখন তার বয়স ছিল ১৫ বছর। তখন তিনি পুলিশকে বলেছিলেন, তিনি নির্দোষ। এরপর থেকে বারবারই পুলিশ, আইনজীবী ও আদালতকে বলেছিলেন, তিনি নির্দোষ। তার কথা কেউ শোনেননি। আজ প্রমাণিত হলো, তার কথাই ঠিক ছিল।


বাবুল যখন তার জীবনের কাহিনি শোনাচ্ছিলেন, তখন তার চোখে ছিল পানি। বাবুল বললেন, আমার জীবন শেষ হয়ে গেছে। কেউ কি আমার যৌবন ফিরিয়ে দিতে পারবে?


আজ বাবুলসহ পাঁচজনকে খালাস দিয়েছেন ঢাকার ৫ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মো. আখতারুজ্জামান। মামলার নথিতে দেখা গেছে, ১৯৯২ সালের ২১ আগস্ট রাত সাড়ে আটটার দিকে গুলিস্তান থেকে কুমিল্লাগামী একটি বাস ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানারপাড়ে পৌঁছালে তিন সদস্যের অজ্ঞাত ডাকাতদল বাসে ডাকাতি করে। যাত্রীদের কাছে থেকে নয় হাজার টাকা ডাকাতি করে পালিয়ে যায়। এ ঘটনায় ওই বাসের কর্মচারী নজরুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলা করেন। তদন্ত করে ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর বাবুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেন ডেমরা থানার এসআই আশরাফ আলী সিকদার। আদালত অভিযোগপত্রটি আমলে নিয়ে বাবুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ১৯৯৩ সালের ৪ জুলাই বিচার শুরু করেন। বিচার শুরুর ২৪ বছরে মামলার ১১ জন সাক্ষীর মধ্যে মাত্র চারজন সাক্ষী আদালতে হাজির করে পুলিশ। তবে মামলার বাদী নজরুল কিংবা তদন্ত কর্মকর্তা আশরাফ কখনই আদালতে হাজির হননি। মামলার তিনজন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করেন তৎকালীন মহানগর হাকিম ফারুক আহমেদ খান। তার বিরুদ্ধে আদালত গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করলেও তাকেও আদালতে হাজির করেনি পুলিশ।


আদালত বাবুলের খালাসের রায়ে বলেছেন, মামলার বাদী, আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ডকারী বিচারকসহ অন্য সাক্ষীদের আদালতে হাজির করানোর জন্য আদেশের কপি পুলিশের মহাপরিদর্শক এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু কোনো পক্ষই মামলার বাদী, তদন্ত কর্মকর্তা ও জবানবন্দি রেকর্ডকারী বিচারককে আদালতে হাজির করানোর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি।


বাবুলসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে ডাকাতির অভিযোগ রাষ্ট্রপক্ষ প্রমাণ করতে পারেনি বলে আদালত তার রায়ে উল্লেখ করেছেন।


বাবুল তাকে গ্রেফতারের কাহিনি তুলে ধরে বললেন, মা-বাবার সঙ্গে তিনি থাকতেন ডেমরার দোলাইরপাড় (এখন যাত্রাবাড়ী থানার মধ্যে) এলাকায়। সেদিন তিনি ফতুল্লায় যাচ্ছিলেন বন্ধুর কাছে। ডেমরা সেতুর ওপর ট্যাক্সির ভেতরে ছিলেন। হঠাৎ পুলিশ তাকে ধরে। পরে রিমান্ডেও নিয়েছিল পুলিশ। গ্রেফতারের পর প্রথম প্রথম মা-বাবা তার সঙ্গে দেখা করতে কারাগারে আসতেন। এরপর থেকে যোগাযোগ বন্ধ করে দেন তারা।


বাবুলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার বাঞ্ছারামপুরের বাহার নগর গ্রামে। তার বাবার নাম আনোয়ার হোসেন। মা নিলুফা বেগম। তারা সাত ভাই ও দুই বোন।


বাবুলের ভাষ্য, তার বাবা বিমানবাহিনীতে চাকরি করতেন। তার গ্রেফতারের পর সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান বাবা। ১৯৯৫ সালে মারা যান মা। এরপর থেকে আর কোনো দিন ভাই কিংবা বোনকে দেখেননি তিনি। বাবুল ঘুরেফিরে তার মা-বাবার গল্পই বলছিলেন।


বাবুলের বয়স ৪৫ বছর হতে চলল। বিয়ে করেননি। জীবনে কোনো দিন কোনো অপরাধ করেননি দাবি করে বাবুল বললেন, আর কারও জীবন যেন তার মতো না হয়। মিথ্যা মামলায় যেন যুগের পর যুগ বিনা বিচারে কারাগারে না থাকতে হয়। বহুবার তিনি বলেছেন, তিনি নির্দোষ।


বাবুলের ব্যাপারে পিপি শওকত আলী বললেন, রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতা অস্বীকার করছি না। সাক্ষীদের আদালতে হাজির করা হয়নি। আগে যদি সাক্ষী আসত, তাহলে মামলা অনেক আগেই শেষ হয়ে যেত। যে কারণে ২৫ বছর ধরে কারাগারে থাকতে হচ্ছে বাবুলকে।


বিবার্তা/আকবর/হোসেন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com