ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের তাণ্ডবে চেন্নাইয়ে ১২ জনের মৃত্যু
প্রকাশ : ০৫ ডিসেম্বর ২০২৩, ২২:৩৫
ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের তাণ্ডবে চেন্নাইয়ে ১২ জনের মৃত্যু
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে প্রবল ঘূর্ণিঝড় মিগজাউমের তাণ্ডব চলছে। এখন অন্ধ্রপ্রদেশের বাপাটলাতে আছড়ে পড়েছে ঘূর্ণিঝড়টি। এছাড়া তামিলনাডু, অন্ধ্র প্রদেশে ও ওড়িশায় প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত ঘূর্ণিঝড়টির আঘাতে চেন্নাইতে ১২ জন মারা গেছে।


দুপুর আড়াইটা নাগাদ ঘূর্ণিঝড় মিগজাউম স্থলভূমিতে প্রবেশ করে। ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিতে হাওয়া বইতে থাকে। সমুদ্রের পানিতে বড় বড় ঢেউ উঠতে থাকে। অন্ধ্রের উপকূল পেরোতে এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের সময় লাগে দুই ঘণ্টা। ঘূর্ণিঝড় এবার শক্তি হারাতে থাকবে এবং সাধারণ ঝড়ে পরিণত হবে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। এর প্রভাবে ভারতের বেশ কয়েকটি রাজ্যে বৃষ্টি হবে বলে জানানো হয়েছে।


এখন ঝড়ের সঙ্গে শুরু হয়েছে প্রবল বৃষ্টি। সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হচ্ছে অন্ধ্রপ্রদেশে। তামিলনাড়ুতেও বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, অন্ধ্রে কিছু জায়গায় প্রবল বৃষ্টি হবে। তামিলনাড়ুতে মাঝারি থেকে হালকা বৃষ্টি হবে। কিছু জায়গায় প্রবল বৃষ্টিও হতে পারে।


অন্ধ্রপ্রদেশের বাপটালাতে ঘূর্ণিঝড় চলার সময় সমুদ্রে বিশাল ঢেউ উঠতে থাকে। তবে এর ফলে কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে কিনা তা এখনও জানা যায়নি। অন্ধ্র, তামিলনাড়ু থেকে কোনো খবর এখনও আসেনি। তবে ভারতের সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঝড়-বৃষ্টির ফলে শস্যের ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে।


চেন্নাইের মৃত ১২


ঘূর্ণিঝড় আসার আগেই চেন্নাইতে সোমবার ভোর থেকে প্রবল বৃষ্টি হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে বৃষ্টি থামলেও এখনও শহরজুড়ে রাস্তায় পানি জমে আছে। হাসপাতালের ভিতরে পানি ঢুকে গেছে। নিচু এলাকার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। শহরের অনেক জায়গায় বিদ্যুৎ নেই। বিশুদ্ধ খাবার পানির সমস্যাও শুরু হয়ে গেছে। আসলে সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় শহর থেকে পানি বের হতে পারছে না।


এই প্রবল বৃষ্টিতে দেওয়াল ভেঙে পড়েছে, গাড়ি ভেসে গেছে, রাস্তা ভেঙে গেছে, প্রচুর বাড়িতে পানি ঢুকেছে। সব মিলিয়ে মারা গেছেন ১২ জন। আহত হয়েছেন ১১ জন।


শহরের নিচু এলাকা থেকে প্রচুর মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীর কর্মীরা রবার বোট নিয়ে মানুষকে উদ্ধার করছেন। তাছাড়া ট্রাক্টর, মাছ ধরার নৌকাতে করেও উদ্ধার করা হচ্ছে।


রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী স্টালিন জানিয়েছেন, প্রায় ৬২ হাজার ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। ১১ লাখ দুধের প্যাকেট বিলি করা হয়েছে।


চেন্নাই পৌরসভা আশপাশের এলাকা থেকে পাঁচ হাজার কর্মী নিয়ে এসেছে দুর্গতদের সাহায্য করার জন্য। তারা মানুষকে নিরাপদ জাগায় নিয়ে যাচ্ছে।


জলাবদ্ধতার ফলে চেন্নাইয়ের পরিবহন ব্যবস্থা সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে পড়েছে। রাস্তায় গাড়ি, বাস ইত্যাদি যেমন আটকে আছে, তেমনই একাধিক সুড়ঙ্গ পথও বন্ধ করে দিতে হয়েছে। বাতিল করা হয়েছে অন্তত দেড়শোটি ট্রেন।


চেন্নাই বিমানবন্দর সোমবার বন্ধ করে দিতে হয়েছিল। তবে মঙ্গলবার সকাল থেকে চেন্নাইতে বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে, বিমানবন্দর আবারও চালু হয়েছে।


কিন্তু শহরের সিংহভাগ অঞ্চল এখনও পানির নিচে ডুবে রয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে পাওয়া খবরে জানা যাচ্ছে যে কিছু এলাকা থেকে পানি নামতে শুরু করেছে।


রয়টার্স জানিয়েছে যে চেন্নাই ও তার আশেপাশের ইলেকট্রনিক্স শিল্প বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।


পৌর প্রশাসন বিষয়ক মন্ত্রী কে এন নেহরু সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, চেন্নাইয়ে বসবাসকারী প্রায় তিন লাখ মানুষ বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সেখানকার লোকেরা বাইরে বের হতে পারছেন না। সেখানে খাবার পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা করছে সরকার।


জেলা প্রশাসন এবং চেন্নাই কর্পোরেশন নিচু এলাকার মানুষকে নিকটবর্তী ত্রাণ কেন্দ্রে সরিয়ে নিয়েছে। অনেককেই নৌকা করে উদ্ধার করতে হচ্ছে। চেন্নাই কর্পোরেশন, দমকল বিভাগ এবং পুলিশ রাস্তায় পড়ে থাকা গাছগুলো সরানোর কাজ চালাচ্ছে।


বিবার্তা/লিমন

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com