
হার্ট অ্যাটাক সম্বন্ধে আমাদের সবারই কম বেশী ধারণা আছে। হার্ট অ্যাটাক এক নীরব ঘাতক। যে কেউ যেকোনো সময় এর শিকার হতে পারেন। শরীরচর্চা না করা, অস্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণ ও জীবনযাপনে অনিয়ম হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়। অকস্মাৎ হার্ট অ্যাটাক আর তাতেই শেষ হয়ে যেতে পারে জীবন৷ এখন প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটছে৷
পরিবারে বয়স্ক ব্যক্তি, উচ্চ রক্তচাপের রোগী, ওজন খুব বেশী এমন কেউ হঠাৎ বুকে তীব্র ব্যথার কথা বললে আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই হার্ট অ্যাটাক হল কিনা। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া যে জরুরী সেটিও সবারই জানা। কিন্তু যেটি আমাদের সবার জানা নেই তা হল হার্ট অ্যাটাক মানেই যে বুকে ব্যথা হবে তা নয়। বিশেষ করে ডায়াবেটিক রোগীদের প্রায়ই হার্ট অ্যাটাক হয়ে থাকে তেমন একটা লক্ষণ প্রকাশ পাওয়া ছাড়াই। ব্যথা কম হয় বলে এসব অ্যাটাক কম মারাত্মক নয়, বরং এক্ষেত্রে মৃত্যুর আশংকা আরো বেশী থাকে।
ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের সম্পর্ক নিবিড়। দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস রোগীদের হৃদপিণ্ডের নিজস্ব রক্তনালীতে চর্বি জমে সরু হয়ে গিয়ে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটে- ফলে হৃদপিণ্ডের পেশী অক্সিজেন কম পায়। আর এই চিকন হয়ে যাওয়া রক্তনালী যদি হতাৎ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে এই রক্তনালী দ্বারা হৃৎপিণ্ডের যে পেশী রক্ত সরবরাহ পেত তারা রক্তবাহিত অক্সিজেনের অভাবে মরে যেতে থাকে। এটিই হল হার্ট অ্যাটাক।
ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে যে বিশেষ সমস্যাটি হয় সেটা হল এই হার্টঅ্যাটাকের ব্যাথা বুঝতে না পারা। অনিয়ন্ত্রিত কিংবা অনেকদিন ধরে ডায়াবেটিসে ভুগতে থাকা রোগীদের ব্যথাড় অনুভূতিবাহী স্নায়ুগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যায়, ফলে তারা স্বাভাবিক ব্যথার অনুভূতি পরিবহন করতে পারে না। তাই সাধারণত হার্ট অ্যাটাকের যে লক্ষণগুলো আমরা শুনে থাকি অর্থাৎ বুকে প্রচন্ড ব্যথা যা বাম কাঁধ হয়ে হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে যায়, এরকমটা একজন ডায়াবেটিক রোগী নাও টের পেতে পারেন। তিনি হয়তো হালকা ব্যথা অনুভব করবেন যা এসিডিটি বা বদহজমে ভেবে নিজে নিজে সেরে যাবার অপেক্ষায় থাকেন অথবা যথেষ্ট গুরুত্ব দেন না। কিন্তু এমনটা করলেই বিপদ। যথাযথ চিকিৎসা সময়মত করতে যত দেরী হবে, হৃদপিণ্ডের পেশী তত বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হবে এবং মৃত্যুর আশংকা বাড়বে।
তাই আপনি যদি ডায়াবেটিক রোগী হন, বা আপনার কোন আপনজনের যদি ডায়াবেটিস থাকে- এই বহুমুখী রোগটির সম্ভাব্য সব বিপদ সম্পর্কে সচেতন হোন। নিয়মিত সব পরীক্ষা করান এবং হার্টের অবস্থা ভালো আছে কিনা জানুন। পাশাপাশি হৃদরোগের অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থা যেমন উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা ইত্যাদিতে যাতে আক্রান্ত না হয়ে পড়েন সেজন্য স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল অনুসরণ করুন। কখনো বুকে সামান্য ব্যথা বা অস্বস্তি বোধ করলেও অবহেলা না করে দ্রুত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
হার্ট অ্যাটাক হৃদযন্ত্রেরর একটি ভয়ংকর জটিলতা। এটি একজন রোগীকে জীবন এবং মৃত্যুর মাঝে মাত্র এক থেকে দুই ঘন্টার ব্যবধানে এনে দাঁড় করায়। এই সময়টুকুর উপযুক্ত ব্যবহার হয়তো কাউকে বাঁচিয়ে দিতে পারে। তাই দেরী না করে আজই নীরবে ঘটে যাওয়া হার্ট অ্যাটাক সম্পর্কে সচেতন হোন।
তবে খেয়াল রাখবেন স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাক সম্পূর্ণ ভিন্ন রোগ। অনেকেই এ সম্পর্কে ভুল ধারণা পোষণ করে থাকেন। শিক্ষিত মানুষের মধ্যেও এই বিষয়ে ভুল ধারণা রয়েছে। এই ভুল ধারণার কারণেই অনেক সময় স্ট্রোক হলে রোগীকে সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এতে মূল্যবান সময় এবং অর্থের অপচয় হয়। চিকিৎসা শুরু হতে দেরি হওয়ার কারণে অনেক সময় খারাপ কিছুও হয়ে যায় ।
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]