মানুষ সামাজিক জীব। একে অন্যের ওপর নির্ভর করেই মানুষ জীবনযাপন করে। এ সামাজিকতার মাঝেই গড়ে ওঠে মানুষের বিভিন্ন সম্পর্ক। আমরা সবাই চাই সামাজিক জীবন সব সময়ই সুন্দর ও আনন্দময় হোক, কিন্তু আপনি কি জানেন সামাজিক জীবন মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ?
দীর্ঘদিন সমাজবিচ্ছিন্ন অবস্থায় থাকা আপনার মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বিচ্ছিন্ন কারা
সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতার অনেক কারণ থাকতে পারে, হয়ত কেউ তার চারপাশের মানুষের সঙ্গে মিশতে পারছে না। হয়তো তাদের জীবনযাত্রায় মিল নেই। তবে বয়স হওয়ার কারণেই একা হয়ে পড়েন বেশিরভাগ মানুষ।
অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডেলেইড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক অধ্যাপক ডেবি ফকনার বলছেন, "সবারই একা লাগতে পারে এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন মনে হতে পারে, কিন্তু বয়স্কদের বেলায় এটি বেশি দেখা যায়।”
‘এই সময়টা জীবনে অনেক বড় ধরনের পরিবর্তন আসে, এই পরিবর্তনের ফলে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় মানুষ।’
সামাজিক একাকীত্বের ফলে স্বাস্থ্যঝুঁকি
সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা শারীরিক এবং মানসিক - দুভাবেই নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। যেমন:
হতাশা, উদ্বিগ্নতা এবং অল্পতেই আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি।
সহজে ঘুম না আসা কিংবা অতিরিক্ত ঘুমানো।
হঠাৎ ওজন কমে যাওয়া কিংবা বেড়ে যাওয়া।
মাদকাসক্তি।
অল্পতেই ক্লান্তি কিংবা অনুপ্রেরণার অভাব।
সামাজিক একাকীত্বের নেতিবাচক প্রভাবগুলো নিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে বিস্তর গবেষণা। অবাক করার মত বিষয় হলো একাকীত্বের ফলাফল হতে পারে আরও খারাপ কিছু। ডেবি জানান, বিশ্বব্যাপী ১০০টি গবেষণার প্রতিবেদন যাচাই করে দেখা গেছে একাকীত্বের প্রভাব কতটা নেতিবাচক হতে পারে।
তিনি বলেন, "নিঃসঙ্গতার ক্ষতিকর প্রভাবকে তুলনা করা যেতে পারে ১ দিনে ১৫ টি সিগারেট খাওয়া কিংবা ৬ ধরনের মদ্যপান করার সঙ্গে। ব্যায়াম না করার ফলে শরীরের যে ক্ষতি হয়, তার থেকেও বেশি ক্ষতিকর একাকীত্ব। স্থুলকাতার ফলে দেখা দেয়া স্বাস্থ্য সমস্যার চেয়ে দ্বিগুণ সমস্যা তৈরি করে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্নতা।"
সুস্বাস্থ্যের চাবিকাঠি বন্ধুত্ব
কাজের খাতিরে আজকাল অনেকেই পরিবারের কাছ থেকে দূরে থাকেন, সারাদিনের ব্যস্ততা শেষে নিঃসঙ্গতা হয়ে পড়ে একমাত্র সঙ্গী। যদি আপনি একাকী বোধ করা শুরু করেন কিংবা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন, তাহলে বুঝতে হবে আপনি সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। এক্ষেত্রে আপনি যা করতে পারেন:
আত্মীয়স্বজন এবং বন্ধুদের ফোন করুন
কাছে পিঠে থাকা আত্মীয় কিংবা বন্ধুদের ফোন করে কথা বলুন, দেখা করার প্ল্যান তৈরি করে ফেলুন। তাদের ফোনের জন্য অপেক্ষা করার চেয়ে আগ বাড়িয়ে নিজেই করুন কাজটি, যোগাযোগ দুপক্ষের ইচ্ছা থেকেই হয়।
চারপাশের লোকজনের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠুন
এলাকার লোকজনের সঙ্গে আড্ডা দিন কিংবা কেনাকাটার সময় টুকটাক কথা বলে পরিচয় করে নিন।
স্বেচ্ছাসেবা
বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে বা মানবসেবামূলক আয়োজনে স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে যোগ দিন। নতুন নতুন মানুষের সঙ্গে পরিচয়ের সুযোগ ঘটবে।
ঘুরে বেড়ান
এলাকার বাজার থেকে সবজি কিনুন, চায়ের দোকানে একটু বসুন কিংবা আশেপাশে পার্কে হাঁটতে যান। এরই ফাঁকে পরিচয় হয়ে যাবে স্থানীয় অনেকের সঙ্গে।
বিবার্তা/শারমিন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]