শিরোনাম
খেজুর কোনো মতেই উপেক্ষার নয়
প্রকাশ : ২৩ জুলাই ২০১৭, ০৭:৪৩
খেজুর কোনো মতেই উপেক্ষার নয়
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

খেজুর সাধারণত মরুঅঞ্চলের ফল। এটি খুবই পুষ্টিকর ফল। পুষ্টিমানে যেমন এটি সমৃদ্ধ, তেমনি অসাধারণ এর ঔষধিগুণ। যৌনশক্তির সাথে খোরমা ও খেজুরের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। খোরমা খেজুর চুষলে পিপাসা দমন হয়। অনেকে হালুয়া তৈরিতে এ কারণে খোরমা ব্যবহার করেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানে অনেক জায়গায় খোরমা খেজুরের ব্যবহার যৌনশক্তির জন্য উপকারী বলা হয়েছে। সারা বছর খেজুর খাওয়া স্বাস্থের জন্য খুবই উপকারী। এছাড়াও এই ফলটিতে রয়েছে প্রাণঘাতী রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা।


অনেকে মনে করে শুধু রোজাতেই মনে হয় খেজুর খেতে হয়। কিন্তু খেজুরের মধ্যে যে কত গুণ তা হয়ত আমরা অনেকে জানি না। রোজা রাখার সাথে খেজুরের একটি সম্পর্ক রয়েছে বলে বছরের অন্যান্য সময়ে আমরা অনেকেই খেজুর খাই না। আর এই জন্য আমাদের ঘরে সাধারণত খেজুর জিনিসটি একটু কম আনা হয়। সেই কারণে রমজান মাস বাদে আমাদের খেজুর খাওয়ার অভ্যাসটা একটু কমই হয়ে থাকে। কিন্তু অসাধারণ পুষ্টিগুণে ভরপুর এই খেজুর আমাদের শারীরিক নানা সমস্যা দূর করতে বিশেষভাবে কার্যকরী। একেকটি শারীরিক সমস্যার জন্য একেকটি পরিমাণের খেজুর প্রতিদিন খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো। আর তাই গড়ে প্রত্যেকের দিনে ৫টি খেজুর খাওয়ার অভ্যাস রাখা উচিত। তাহলে হাজারো ধরনের শারীরিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন নিমিষে। তাহলে আসুন জেনে নেই খেজুরের কত গুণ।


বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে খেজুরের গুণ:


❏ হৃদপিণ্ডের সমস্যা দূর করতে প্রতিদিন খেজুর খাওয়া অত্যন্ত জরুরী। গবেষণায় দেখা যায় পুরোরাত খেজুর পানিতে ভিজিয়ে সকালে পিষে খাওয়ার অভ্যাস হার্টের রোগীর সুস্থতায় কাজ করে।


❏ খুব দুর্বল লাগছে অথবা দেহে এনার্জির অভাব হচ্ছে? তাহলে ঝটপট খেয়ে নিন খেজুর। তাৎক্ষণিকভাবে দেহে এনার্জি সরবরাহের ক্ষেত্রে খেজুরের তুলনা নেই।


❏ রুচি বাড়াতেও খেজুরের কোন তুলনা হই না। অনেক শিশুরা তেমন একটা খেতে চাই না, তাদেরকে নিয়মিত খেজুর খেতে দিলে রুচি ফিরে আসবে।


❏ খেজুর বিভিন্ন ক্যান্সার থেকে শরীরকে সুস্থ রাখতে অনেক ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন খেজুর লাংস ও ক্যাভিটি ক্যান্সার থেকে শরীরকে দূরে রাখতে সাহায্য করে।


❏ নারীদের শ্বেতপ্রদর ও শিশুর রিকেট নিরাময়ে খেজুরের কার্যকারিতা অনেক। এই ক্ষেত্রে খেজুরের অবদান বলে শেষ করা যায় না।


❏ তুলনামূলকভাবে শক্ত খেজুরকে পানিতে ভিজিয়ে (সারা রাত) সেই পানি খালি পেটে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। তাজা খেজুর নরম এবং মাংসল যা সহজেই হজম হয়।


❏ খেজুরে আছে ডায়েটরই ফাইবার যা কলেস্টোরল থেকে মুক্তি দেয়। ফলে ওজন বেশি বাড়ে না, সঠিক ওজনে দেহকে সুন্দর রাখা যায়।


❏ ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ এই ফল দৃষ্টিশক্তির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ও মিনারেল বিদ্যমান থাকায় অনেক রোগ নিরাময় করা সমভাব। সাথে সাথে আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটাতে সহায়তা করে।


❏ খেজুরের মধ্যে অনেক গুন রয়েছে। যা ত্বকের জন্য খুবই ভালো। খেজুর নিয়মিত খেলে ত্বকে উজ্জলতা ভাব ফিরে আসে।


❏ আজওয়া খেজুর বিষের মহৌষধ। কিন্তু আমাদের আজওয়া খেজুর সবসময় তো পাওয়া সমভাব নয়। তারপরও যেইটা পাওয়া যায় সেটাতেও অনেক গুন আছে।


❏ গবেষণায় দেখা যায় প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস আমাদের দেহের ইন্টেস্টাইনের ভেতর স্বাস্থ্যের জন্য ভালো প্যাথলজিক্যাল অর্গানিজমের উৎপাদন বৃদ্ধি করে যা ইন্টেস্টাইনের নানা সমস্যা দূর করে।


❏ খেজুর ল্যাক্সাটিভ ধরণের খাবার। যাদের কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা রয়েছে তারা খুব সহজেই কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন। প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাসের মাধ্যমেই এই সমস্যা সমাধান সম্ভব।


❏ পেটের ভেতরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্যানসারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে খেজুর। এছাড়াও মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধেও এই ফল বেশ কার্যকরী। গবেষণায় দেখা যায় অ্যাবডোমিনাল ক্যান্সারের হাত থেকে রক্ষা করার ক্ষমতা রয়েছে খেজুরের।


❏ খেজুরের মধ্যে রয়েছে স্যলুবল এবং ইনস্যলুবল ফাইবার ও বিভিন্ন ধরণের অ্যামিনো অ্যাসিড যা সহজে খাবার হজমে সহায়তা করে। এতে করে খাবার হজম সংক্রান্ত সমস্যা থেকে রেহাই পাওয়া যায়।


❏ খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম এবং খুব অল্প পরিমাণে সোডিয়াম। এতে করে প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস দেহের খারাপ কলেস্টোরল কমায় এবং ভালো কলেস্টোরলের মাত্রা বৃদ্ধি করে। অর্থাৎ প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা কমায়।


❏ খেজুর দৃষ্টিশক্তি উন্নত করতে বিশেষভাবে সহায়ক। এবং প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস রাতকানা রোগ ভালো করতেও সাহায্য করে থাকে।


❏ মুখের অর্ধাঙ্গ রোগ, পক্ষঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য উপকারী। খেজুর বিচিত্র রোগ নিরাময়ে বিশেষ ভূমিকা রাখে।


❏ পাতলা পায়খানা বন্ধ হয় খেজুরের খাওয়ার ফলে।


❏ খেজুরের চূর্ণ মাজন হিসেবে ব্যবহার করলে দাঁত পরিষ্কার হয়।


❏ খেজুর পেটের গ্যাস, শ্লেষ্মা, কফ দূর করে, শুষ্ক কাশি এবং অ্যাজমায় উপকারী।


❏ সারাদিন রোজা রাখার পর পেট খালি থাকে বলে শরীরে গ্লুকোজের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। খেজুর সেটা দ্রুত পূরণে সাহায্য করে।


❏ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। পক্ষঘাত এবং সব ধরনের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ অবশকারী রোগের জন্য খেজুর খুবই উপকারী।


❏ ৭/৮ মাস সময় থেকে গর্ভবতী মায়েদের জন্য খেজুর একটি উৎকৃষ্ট খাদ্য। এসময় গর্ভবতী মায়েদের শরীরে অনেক দুর্বলতা কাজ করে। তখন খেজুর মায়েদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।


❏ মুখের লালাকে ভালোভাবে খাবারের সঙ্গে মিশতে সাহায্য করে খেজুর। ফলে বদহজম দূর হয়। হৃদরোগ কমাতেও খেজুর বেশ উপকারী।


❏ খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস দেহের আয়রনের অভাব পূরণ করে এবং রক্তস্বল্পতা রোগের হাত থেকে রক্ষা করে। যাদের এই রক্তস্বল্পতার সমস্যা রয়েছে তাদের প্রতিদিন খেজুর খাওর অভ্যাস করা উচিত। তাই রক্তস্বল্পতা ও শরীরের ক্ষয়রোধ করতে খেজুরের রয়েছে বিশেষ গুণ।


❏ একটি গবেষণায় দেখা যায় প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার অভ্যাস মাত্র ৪ সপ্তাহের মধ্যে লিপিডের কোয়ালিটি উন্নত করতে সহায়তা করে দেহের সুগারের মাত্রা বাড়ানো ছাড়াই।



❏ উচ্চমাত্রার শর্করা, ক্যালরি ও ফ্যাট সম্পন্ন খেজুর জ্বর, মূত্রথলির ইনফেকশন, যৌনরোগ, গনোরিয়া, কণ্ঠনালির ব্যথা বা ঠান্ডাজনিত সমস্যা, শ্বাসকষ্ট প্রতিরোধে বেশ কার্যকরী।


❏ নেশাগ্রস্তদের অঙ্গক্ষয় প্রতিরোধ করে খেজুর। স্বাস্থ্য ভালো করতে বাড়িতে তৈরি ঘিয়ে ভাজা খেজুর ভাতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।


❏ খেজুর মস্তিষ্ককে প্রাণবন্ত রাখে। খেজুর বা খোরমা মাথাকে একেবারে চিন্তামুক্ত করে দেয়।


❏ ক্লান্ত শরীরে যথেষ্ট পরিমাণ শক্তির যোগান দেয় খেজুর। সুতরাং খেজুর আমাদের প্রতেকের খাওয়া উচিত।


❏ সুস্থ হৃদপিণ্ডে দেহযন্ত্রে স্বাচ্ছন্দ এবং সতেজ বিধান করে এমন শক্তিদায়ক বা বলবর্ধক ঔষধ হিসেবে খেজুরের জুড়ি নেই।


❏ ফুসফুসের সুরক্ষার পাশাপাশি মুখগহ্বরের ক্যান্সার রোধ করে এই খেজুর।


❏ অন্তঃসত্ত্বা নারীর সন্তান জন্মের সময় খেজুর খেলে জরায়ুর মাংসপেশির দ্রুত সংকোচন-প্রসারণ ঘটিয়ে, প্রসব হতে সাহায্য করে।


❏ দুর্বলতা কাটাতে অনেক সাহায্য করে এবং ডেলিভারির পর মায়েদের অতিরিক্ত রক্তপাত বন্ধ করতে ও খেজুর সহায়ক ভূমিকা পালন করে এবং পরবর্তী সময়ে শিশুর প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য মায়ের বুকের দুধ বৃদ্ধিতে খেজুর কার্যকর ভূমিকা পালন করে।


❏ দেহকে সচল ও কার্যক্ষম রাখতে শক্তির প্রয়োজন। এর অভাবে দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়,শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে এবং মানসিক অবসাদ সৃষ্টি হয়। এসব ক্ষেত্রে শর্করা জাতীয় খাদ্য শক্তির উৎস হিসেবে কাজ করে।আর এই শর্করা জাতীয় খাদ্য হিসেবে খেজুর খাদ্য শক্তির উল্লেখযোগ্য উৎস হিসেবে কাজ করে।


❏ খনিজ পদার্থ দৈহিক পুষ্টিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়াম হাড় ও দাঁতের অন্যতম উপাদান হিসেবে কাজ করে। খেজুর দেহে ক্যালসিয়াম সরবরাহ করে।


❏ খেজুর লৌহসমৃদ্ধ ফল হিসেবে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। রক্তে লৌহিত কণিকার প্রধান উপাদানের অভাবে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়। খেজুর লৌহসমৃদ্ধ বলে এই রক্তশূন্যতা দূরীকরণে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।


❏ খেজুরের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম বিদ্যমান যা আমাদের শরীরের নার্ভ সিস্টেমকে সচল রাখার জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, খেজুরের মধ্যে প্রায় ৪০০ মিলিগ্রাম পটাসিয়াম বিদ্যমান থাকে যা মানুষের ষ্ট্রোক হওয়ার ভয়াবহতাকে ৪০% কমিয়ে দেয়।


❏ খেজুর হৃদরোগ, জ্বর ও পেটের পীড়ায় উপকারী এবং বলবর্ধক ঔষধ হিসেবে কাজ করে । বিশেষহৃদরোগীদের জন্য খেজুর বেশ উপকারী।


❏ প্রতি ১০০ গ্রাম খেজুরে ৩২৪ মিলিগ্রাম ক্যালরি থাকে। ক্যালরির পরিমাণ বেশি থাকে, তাই খেজুর শিশুদের জন্যও অনেক উপকারী একটি ফল।


❏ খেজুরে রয়েছে ৭৭.৫% কার্বহাইড্রেট, যা অন্যান্য খাদ্যের বিকল্প শক্তি হিসেবে কাজ করে।


❏ ক্ষুধা নিবারণের বিকল্প খাদ্য হিসেবে আমরা ২-৪টি খেজুর খেয়ে এক গ্লাস পানি পান করতে পারি।


❏ খেজুরে রয়েছে ৬৩ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম ও ৭.৩ মিলিগ্রাম লৌহ, যা হাড়, দাঁত, নখ, ত্বক, চুল ভালো রাখতে সহয়তা করে।


❏ স্নায়ুবিক শক্তিবৃদ্ধিতে খেজুর উপকারী। এইজন্য শিশুদের খেজুর খেতে দিতে হয়।


৪৫) খেজুর রক্ত তৈরিতে বড় একটি কারখানা। সুতরাং খেজুর খাওয়াটা প্রয়োজন। খেজুর রক্ত উৎপাদনকারী হিসেবে পরিচিত।


❏ খেজুরের প্রচুর খাদ্য উপাদান রয়েছে। যার ফলে দেহের অনেক রোগ নিরাময়ের সাথে সাথে সবলতাও ফিরে আসে।


বিবার্তা/জিয়া


সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com