
‘ভাইজান খবর একখান খবর একখান দেরি হইয়া যায় একটা হইলো রমজানের ঈদ আরেকটা কোরবান...’ টেলিভিশনের পর্দায় বিজ্ঞাপন জানান দিচ্ছে ঘনিয়ে আসছে কোরবানির ঈদ। শুধু টেলিভিশনের বিজ্ঞাপন নয়, বাজারের মসলার দামও জানান দিচ্ছে আসছে কোরবানির ঈদ। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মসলার বাজারে ব্যতিক্রম হয়নি। ঈদের এখনো দুই সপ্তাহের বেশি বাকি থাকলেও বাড়তি চাহিদাকে কেন্দ্র করে বেড়েছে প্রায় সব ধরনের মসলার দাম। এমন দাম বৃদ্ধিকে ক্রেতারা ‘আগুনের’সঙ্গে তুলনা করলেও ডলারের দাম বৃদ্ধিকেই দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবখানেই বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে আদা, রসুন, জিরা, এলাচ, গোলমরিচ, লবঙ্গসহ বেশ ধরনের মশলাপণ্যের। সবচেয়ে বেশি দাম বেড়েছে এলাচের। এক মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এলাচের দাম বেড়েছে ৪০ শতাংশের বেশি। অন্যান্য মসলার মধ্যে জিরা, দারুচিনি, লবঙ্গের দাম গত বছরের তুলনায় কেজিপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আমদানি করা এলাচ এখন মানভেদে প্রতি কেজি ৩ থেকে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও দাম ছিল ২ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা।
পাইকারিতে প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে দেড় হাজার টাকায়। এক মাস আগে ছিল ১ হাজার ২০০ টাকা। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়। কেজিতে ১০০-২০০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি গোল মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ ও সাদা গোলা মরিচ ১ হাজার ১০০ টাকায়। জিরা এক মাসে ৫৮০-৬২০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন প্রতি কেজি ৭৫০-৯২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধনের কেজি এখন ২০০ থেকে ২৪০ টাকা আর তেজপাতা ১৫০-২০০ টাকা।
অপর দিকে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে মসলা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপে জানা যায়, আমদানি কম হলেও চাক্তাই-খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারের আড়তগুলোতে কোরবানির অত্যাবশ্যকীয় এ উপকরণগুলোর জোগান রয়েছে। গত বছরের তুলনায় জিরা ও লবঙ্গের দাম কম থাকলেও বেড়েছে এলাচ ও দারুচিনির দাম। দেশি মসলার মধ্যে মরিচ, ধনিয়া, হলুদের দাম আগের বছরের তুলনায় চড়া।
জানা যায়, গরম মসলার ৯০ শতাংশই আমদানি করে চাহিদা মেটাতে হয়। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি এলাচ আমদানি হয় গুয়েতেমালা থেকে। ভারত থেকেও কিছু এলাচ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে আসে। গরম মসলার মধ্যে অন্যতম লবঙ্গ আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। মাদাগাস্কার থেকে অল্প পরিমাণে লবঙ্গ আমদানি হয়। বাজারে দারুচিনি আমদানি হয় চায়না ও ভিয়েতনাম থেকে।
বাংলাদেশে বেশি জিরা আমদানি হয় ভারত ও আফগানিস্তান থেকে। সিরিয়া, চায়না থেকেও জিরা আমদানি হয়। তবে ভালো মানের কারণে আফগানিস্তান ও ভারতীয় জিরার দাম বেশি থাকে। সরকারিভাবে ডিউটি বাড়ানোর কারণে কয়েকটি মসলার দাম বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
বর্তমানে বাজারে সবচেয়ে বেশি অস্থির এলাচের দাম। ডিও সিন্ডিকেটের কাছে ভালোমানের এলাচের চেয়ে মধ্যমমানের এলাচের দাম বেশি। তবে যারা বাজার থেকে এলাচ কিনছেন, একই এলাচ ট্রেডিংয়ের চেয়ে প্রতি কেজিতে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা কম। ভালোমানের এলাচের মধ্যে রয়েছে ‘আরএস’ ও ‘আরএস জাম্বো’। এসব এলাচের দাম বর্তমানে ৩৬শ থেকে ৩৭শ টাকা। একমাস আগেও এসব এলাচের দাম কেজিতে ৩শ টাকা কম ছিল। বাজারে মধ্যমমানের ‘ওয়াইএম-টু’ ‘ওয়াইএম’ ‘এলএমজি’ নামের এলাচ বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ২৫০ টাকা।
কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহার করে ২০২৩ সালে দারুচিনি, লবঙ্গ ও জিরা বেশি আমদানি হয়েছে। শুধু এলাচ আমদানি কমেছে। ২০২২ সালের চেয়ে গত বছর (২০২৩ সালে) ৫৬৭ টন ৩৯৬ কেজি লবঙ্গ বেশি আমদানি হয়। গত বছর লবঙ্গ আমদানি হয় ১৫শ ৫ টন। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৪ মে পর্যন্ত আমদানি হয়েছে ১ হাজার ৮০ টন ৫শ কেজি।
একমাস আগে একই এলাচের দাম ছিল ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ১শ টাকা। অপেক্ষাকৃত কমমানের ‘এসএমজি’ ‘এসএসবি’ নামের এলাচ বিক্রি হচ্ছে কেজি ২ হাজার ৮শ টাকা। গত বছর কোরবানির আগেও এসব এলাচের দাম মানভেদে এক হাজার থেকে ১ হাজার ৩শ টাকা দাম কম ছিল।
বাজারে মসলার দাম বৃদ্ধির বিষয়ে কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) ভাইস চেয়ারম্যান এস এম নাজের হোসাইন বলেন, ‘বাজারে সরকারের কোনো তদারকি নাই। যার ফলে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অজুহাত সামনে এনে তাদের মতো করে দাম বাড়াচ্ছে। অতি মুনাফালোভী কিছু ব্যবসায়ীর কারণে বাজারটা আজ সরকারের নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’
তিনি আরও বলেন, বাজারে কোনো পণ্যের সংকট নাই। আমি বলব সরকারের অবহেলার কারণে বাজারের আজ এই পরিস্থিতি। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকারকে শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে।’
বিবার্তা/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]