
উত্তরের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি এবং একটানা ভারী বৃষ্টিপাতে বেড়ে গেছে নদ-নদীর পানি। এতে রাণীনগর এবং আত্রাই উপজেলার নিন্মাঞ্চলে মাঠের রোপনকৃত প্রায় তিন হাজার বিঘা (৩৩শতকে এক বিঘা) জমির আমন ধান পানির নিচে ডুবে গেছে।
এর মধ্যে আত্রাই উপজেলায় দেড় হাজার বিঘা এবং রাণীনগর উপজেলায় দেড় হাজার বিঘা জমির ধান পানিতে ডুবে গেছে।
কৃষকরা বলছেন,২/১দিনের মধ্যে মাঠ থেকে পানি নামা শুরু হলে হয়তো খুব বেশি ক্ষতি হবেনা। কিন্তু সংশ্লিষ্ঠরা বলছেন,দ্রুতই পানি নেমে যাওয়ার সম্ভবনা কম। বরং বৃষ্টিপাত হলে পানি আরো বাড়তে পারে। ফলে আমন আবাদে চরম ক্ষতির মুখে পরেছেন এই দুই উপজেলার কৃষকরা।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি দপ্তর সুত্র জানায়, চলতি আমন মৌসুমে উপজেলায় ১৮হাজার ৯১০হেক্টর জমিতে কৃষকরা আমন ধান রোপন করেছেন। ইতি মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় ধান রোপন শেষে অনেকেই সারপ্রয়োগ শুরু করেছেন। এরই মধ্যে অতি বৃষ্টিপাতের কারনে উত্তরের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানি নদীতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এতে মাঠেও পানি বাড়তে থাকে। ফলে নদীর পানি বাড়তে থাকায় মাঠের পানি নদীতে আর নামতে পারছেনা। বরং নদী থেকে পানি মাঠে প্রবেশ করছে। এতে মিরাট,গোনা,রাণীনগর সদর,একডালা এবং পারইল ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠের ধান পানিতে ডুবে গেছে।
রাণীনগর উপজেলার হরিশপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল আহাদ জানান,তিনি দুই বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেছিলেন,পানিতে সবগুলো ধান ডুবে গেছে।
উপজেলার গোনা গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন,তিনি প্রায় ৩৭বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেছিলেন। পানিতে সবগুলো ধান ডুবে যাওয়ায় প্রায় দেড় লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বলেন,এই মৌসুমে উপজেলায় ১৮হাজার ৯১০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ভারীবৃষ্টিপাত এবং উত্তরের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমির ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এছাড়া অর্ধ নিমজ্জিত হয়ে আছে প্রায় ১হাজার ৬০১বিঘা জমির ধান।
অপর দিকে আত্রাই উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রসেনজিৎ কুমার বলেন,চলতি মৌসুমে এই উপজেলায় ৬হাজার ৪৯৫হেক্টর জমিতে আমন ধান রোপন করেছেন কৃষকরা। এর মধ্যে ভারী বৃষ্টিপাতে এবং উত্তরের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে মনিয়ারী,বিশা ও ভোঁপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন মাঠ প্লাবিত হয়েছে। শনিবার পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমির আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। যদি ২/১দিনের মধ্যে পানি কমতে থাকে তাহলে কিছুটা ধান হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
আত্রাই উপজেলার মনিয়ারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সম্রাট হোসেন বলেন,তিনি এই মৌসুমে প্রায় ৯০বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেছেন। কিন্তু নদী থেকে মাঠে পানি প্রবেশ করায় এবং একটানা ভারী বৃষ্টিপাতে সবগুলো ধান ডুবে গেছে। এসব ধান পানির নিচে পঁচন ধরেছে। ফলে পানি নেমে গেলেও ধান হওয়ার সম্ভবনা নেই। এতে প্রায় ৬লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
মনিয়ারী গ্রামের কৃষক আ: আলিম জানান,তিনি এবার প্রায় ১০বিঘা জমি বর্গা নিয়ে ধান রোপন করেছেন। পানিতে সবগুলো জমির ধান ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে।এতে প্রায় ৬০হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। তিনি ক্ষতিগ্রস্থ্য কৃষকদের পূর্নবাসনের দাবি জানান।
এদিকে নওগাঁ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার পাল বলেন,একটানা ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে উত্তরের উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে নদ-নদীতে বৃদ্ধি পাচ্ছে। শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ আত্রাই রেলওয়ে ষ্টেশন এলাকা পয়েন্টে বিপদ সিমার ৬২ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছিল। যদি আর বৃষ্টিপাত না হয় তাহলে ২/১দিনের মধ্যে পানি কমা শুরু হবে। আর যদি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকে তাহলে নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
বিবার্তা/সাহাজুল/এসএস
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]