শিরোনাম
মহারানী মৌসুমীর গল্প...
প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০১৭, ২০:১৯
মহারানী মৌসুমীর গল্প...
অভি মঈনুদ্দীন
প্রিন্ট অ-অ+

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ১৯৯৩ সালে যে মৌসুমী অধ্যায় রচিত হয়েছিলো, সেই অধ্যায়ের শুভ সূচনার পর তা যেন আজও অব্যাহত আছে আগের চেয়ে আরো বহু জনপ্রিয়তা নিয়ে। এক মৌসুমীই আমাদের চলচ্চিত্রের গর্বিত অধ্যায়। চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট অনেকেই বলেন অভিনয়, ব্যক্তিত্ব, আচার ব্যবহার এবং সর্বোপরি আন্তরিকতা দিয়ে শাবানার পর যে নায়িকা তার নিজের অবস্থানকে উজ্জ্বল করে রেখেছেন চলচ্চিত্রের আকাশে তিনি মৌসুমী। চলচ্চিত্রের মহারানীখ্যাত এই অভিনেত্রীকে নিয়ে লিখেছেন অভি মঈনুদ্দীন।


কী এক পরম মায়ার জালে নিজের অজান্তেই মৌসুমী আটকে ফেলেন তারসঙ্গে পরিচিত হওয়া যে কোনো মানুষকে। মৌসুমী তার মিষ্টি হাসি দিয়ে নুতন পুরনো পরিচিত জনকে বরণ করে নিতে জানেন বলেই তার সমসাময়িক কালের অনেকের চেয়ে ভক্ত, সহকর্মী কিংবা অন্য অনেকের কাছে মৌসুমী অধিক প্রিয়।


১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহানের নির্দেশনায় ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের মধ্যদিয়ে আমাদের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে নতুন এক মৌসুমী অধ্যায়েরই শুভ সূচনা হয়। আর তারপর থেকেই সেই অধ্যায়ে নুতন নতুন সাফল্য দিয়ে মৌসুমী তার চলার পথকে করেছেন অলংকৃত। মৌসুমীর অলংকৃত সেই পৃথিবী আরো আলোকিত করে রাখেন তার স্বামী ওমরসানী, দুই সন্তান ফারদিন ও ফাইজাহ। চারজনের এই পৃথিবীটাই যেন অনেকের কাছে অনুকরণীয়, অনেকের কাছে আদর্শের। অনেকেই ইচ্ছে, অনিচ্ছেতে নায়িকা হয়েছেন। কিন্তু সবমিলিয়ে সাফল্য ক’জনই বা পেয়েছেন। দেশের কোটি কোটি মানুষের ভালোবাসা, স্বামীর প্রিয় মানুষে পরিণত হওয়া, সন্তানদের অনেক ভালোবাসার মা’তে পরিণত হওয়া একজন নায়িকার জন্য কঠিনই বৈকি। কারণ নায়িকা যখন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তায় থাকেন তখন অনেককিছুই তাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে। মৌসুমীকেও ডেকেছিলো। কিন্তু মৌসুমী চেয়েছিলেন সার্বিকভাবে ভালো থাকতে। মানুষ যা স্বপ্ন দেখে, মানুষ চাইলেই তা পূরণ করতে পারেন। সবার চোখে খুব সহজ সরল, সদা হাস্যোজ্জ্বল একজন মানুষ মৌসুমী।


কখনো কী রাগ করেন না মৌসুমী? এমন প্রশ্ন করি মনতাজুর রহমান আকবর পরিচালিত সাভারে ডিপজলের শ্যুটিং বাড়ির মেকাপ রুমে বসে। মৌসুমী মৃদু হাসি দিয়ে বলেন, আমি সবসময়ই খুব সাধারণ একজন মানুষ হয়ে থাকতে চেয়েছি। এই যে আমি এখানে শ্যুটিং করছি, সবসময়ই সাধারণ একটি মেয়ের মতো এসে মেকাপ নিয়ে , শ্যুটিং করে চলে যাচ্ছি। চেষ্টা করি কোনো কারণেই তেমন রাগ না করতে। কারণ আমাকে নিয়ে যারা কাজ করেন, তারা ভুল করতেই পারেন। এটা কোনো বিষয় নয়। তবে এটা সত্যি, আমার খুব জেদ আছে। জেদ আছে বলেই আমি আজ মৌসুমী হতে পেরেছি। সত্যি বলতে কী একজন মানুষের জীবনে লক্ষ্য থাকতে হয়। তা না হলে জীবন নির্দিষ্ট পথে এগিয়ে যায়না। অনেক সাধনা করেই আমি আমার অবস্থানে এসেছি।


মনতাজুর রহমান আকবরের ‘দুলাভাই জিন্দাবাদ’, একে সোহেলের ‘পবিত্র ভালোবাসা’ এই দুটি চলচ্চিত্রের শ্যুটিং নিয়ে ব্যস্ত মৌসুমী। ব্যস্ত তার স্বামী ওমরসানীর নির্বাচনী প্রচারণা নিয়েও। গেলো ৫ মার্চ মৌসুমী ও ওমরসানীর যৌথ প্রয়াসে বেশ সফলভাবেই সম্পন্ন হলো শিল্পী সমিতির পিকনিক। মৌসুমী এবং ওমরসানীর আহ্বানে পিকনিকে অনেক তারকার উপস্থিতি ছিলো চোখে পড়ার মতো।


মৌসুমী বলেন, ভালোলাগা এখানেই যে আমি এবং সানী দু’জন মিলে বিগত একটি সফল পিকনিক করতে পেরেছি। যারা পিকনিকে এসেছিলেন তাদের প্রতি আন্তরিকভাবে কৃতজ্ঞ। আমি, সানী আমরা দু’জন মিলেই চেয়েছি সুন্দরভাবে সব শিল্পীদের সঙ্গে নিয়ে পিকনিক করতে। সবার কাছ থেকেই আমরা সাড়া পেয়েছি। আগামী ৫ মে অনুষ্ঠিতব্য চলচ্চিত্রের শিল্পী সমিতির নির্বাচনে মৌসুমীর স্বামী ওমরসানী সভাপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।


মৌসুমী বলেন, এর আগে আমি আমার সহকর্মীদের জন্য নির্বাচনে কাজ করেছি, ভোট চেয়েছি। সানীও আমার সহকর্মী, কিন্তু তিনি আমার স্বামীও। তাই এবার আমি ভোট চাইছি এমন মানুষের জন্য যিনি একজন যোগ্য প্রার্থী, আমার স্বামী এবং আমার সহকর্মী। আমি চাই একজন যোগ্য মানুষ যেন সভাপতি পদে জয়লাভ করেন যাকে শিল্পীরা সবসময় কাছে পাবেন, যার কাছে সব দুঃখ শেয়ার করতে পারেন, যার মাধ্যমে সত্যিই শিল্পী সমিতির উন্নয়ন সম্ভব, সহ-সভাপতি হিসেবে যার প্রমাণ রেখেছেনও তিনি।


মেকাপ রুমে গল্পে গল্পে পেছনে ফিরে যান মৌসুমী। মৌসুমী তার বাবার আদর্শে বড় হয়েছেন। আর তাই বাবার মতোই সবসময় তার সহকর্মীদের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন সবসময়।


মৌসুমী বলেন, আমার যা আছে আল্লাহর রহমতে তা নিয়ে সন্তুষ্ট আমি। আমার যা অর্জন তাও আমি পেয়েছি ভক্তদের কাছ থেকে, রাষ্ট্রের কাছ থেকে। কিন্তু আমি অনুভব করছি আমার সঙ্গে যারা কাজ করেন তাদের জন্য এমনকিছু করা যারা সবসময় ধারাবাহিকভাবেই যেন কাজের মধ্যে সম্পৃক্ত থাকতে পারেন। যাতে তারা নিজেদের সংসার চালাতে গিয়ে হিমশিম না খান।


মৌসুমী এমনই একজন চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব যিনি তার চলার পথে নিজের আর্থিক লাভের দিকে তাকাননি। যে কারণে দেখা গেছে যে ইউনিটে কাজ করলে অনেক সহকর্মী, সহশিল্পী কলাকুশলীদের অর্থ আয়ের একটি ব্যবস্থা হয় মৌসুমী সেই কাজটিই করেছেন নিজের আর্থিক ক্ষতির কথা বিবেচনা না করেই। সবাই তা ভাবেন না, সবাই তা করেন না। মৌসুমীর দূরদর্শিতা প্রখর বলেই তিনি সবার জন্য ভেবে কাজ করেছিলেন। দূরদর্শিতা প্রখর বলেই চলচ্চিত্র নিয়ে অনেক সময় অনেক আলোচনায় মৌসুমী যা আগে থেকেই ইঙ্গিত করেন তাই যেন প্রতীয়মান হয়েছে পরবর্তীতে। আঁধারে কিংবা আলোতে মৌসুমী সবসময়ই উজ্জ্বল তার কর্ম দিয়ে। আর বিধাতার দেয়া তার সুন্দর মুখশ্রীতে মুগ্ধ সবাই। এমন সুন্দর মুখের উপস্থিতি বহুদিন দেখা মিলেনা আমাদের চলচ্চিত্রে। তাই মৌসুমী যেমন অনেক সাধনার, অনেকের আরাধনারও মৌসুমী।


বিবার্তা/মোহসীন/অভি/আকবর

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com