শিরোনাম
জাল টাকা তৈরির কারিগর
প্রকাশ : ২৮ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৮:১৯
জাল টাকা তৈরির কারিগর
সহযোগীসহ আটক লিয়াকত
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা ছগির মাস্টার। তিনি শেয়ার বাজার ব্যবসায়ী ছিলেন। কিন্তু ১৯৯৬ সালের শেয়ার বাজারে ধসের পর আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ভেঙে পড়েন হতাশায়। এক পর্যায়ে শুরু করেন জাল টাকার ব্যবসা। তৈরি করেন অবৈধ জাল টাকার ব্যবসার সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের অন্যতম ছিল লিয়াকত আলী (৩৫)। অবশেষে বুধবার রাতে তাকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।


র‌্যাব জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে একশ্রেণীর সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র দেশী বিদেশি অবৈধ জাল মুদ্রা তৈরি করে সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করে আসছে। এমন সংবাদের ভিত্তিতে র‌্যাব অনুসন্ধানে মাঠে নামে। এক পর্যায়ে রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ এলাকায় সংঘবদ্ধ চক্রের সন্ধান পায় তারা। সেই সূত্র ধরের বুধবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন শুভাঢ্যা উত্তরপাড়া বি ব্লকের ২৩ নম্বর বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।


ওই অভিযানে অবৈধ জাল টাকা চক্রের সিন্ডিকেটের অন্যতম হোতা লিয়াকত আলীকে গ্রেফতার করা হয়। লিয়াকতের গ্রামের বাড়ি বাগেরহাট জেলার কচুয়া উপজেলার নাটইখালীর ছিটাবাড়ী গ্রামে। সে দীর্ঘ দিন থেকে ঢাকায় বসবাস করে এবং প্রায় ১৫ বছর ধরে জাল ব্যবসা করে আসছে।


শুধু জাল ব্যবসা নয়, তার বাসায় গড়ে তুলেছে অবৈধ জাল টাকা তৈরির কারখানাও। দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের বি ব্লকের ২৩ নম্বর বাসার তৃতীয় তালায় একটি রুমে সে জাল ভারতীয় রুপিসহ বিদেশি জাল টাকা তৈরি করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে দিত। আর এ কাজে তার অন্যতম সহযোগী জাঙ্গাহীর আলম (৪০) নামের আরেক ব্যক্তি। তবে লিয়াকতের দেয়া তথ্য মতে রাজধানীর খিলগাঁও থেকে জাহাঙ্গীর আলমকেও গ্রেফতার করেছে র‌্যাব।


র‌্যাব জানায়, লিয়াকত আলী ছগির মাস্টারের কাছ থেকে জাল ব্যবসায় দীক্ষা নেয়। পরে ছগির মাস্টারের সহযোগী (সরবরাহকারী) হিসেবে কাজ শুরু করে। এক পর্যায়ে লিয়াকত নিজেই অবৈধ জাল মুদ্রা তৈরির সিন্ডিকেট গড়ে তোলে।


র‌্যাব জানায়, লিয়াকত মূলত তার বাসায় অবৈধ জাল মুদ্রা তৈরি করতো এবং সহযোগী দিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকায় ভারতীয় জাল মুদ্রা সরবরাহ করত। এক লাখ টাকার জাল ভারতীয় রুপির প্রতি বান্ডেল বাংলাদেশী ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করা করত সে। পরবর্তীতে তার সরবরাহকারীরা তাদের স্থানীয় দালালদের দিয়ে রাজধানী ঢাকার মানি এক্সচেঞ্জসহ সীমান্তবর্তী জেলায় বাজারজাত করত।


র‌্যাব আরো জানায়, বাংলাদেশী জাল মুদ্রা স্থানীয় বাজারে বাজারজাতকরণ ঝুঁকিপূর্ণ এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার সমূহ আশঙ্কা থাকায় সে ভারতীয় জাল মুদ্রা তৈরিতে নিজেকে সম্পৃক্ত করে।


এদিকে, জাল টাকা ব্যবসার দায়ে লিয়াকত একাধিক বার গ্রেফতারও হয়েছিল। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৫টি মামলাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল ইমরানুল হাসান।


বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কাওরানবাজারস্থ র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের ওই কর্মকর্তা বলেন, লিয়াকতের অন্যতম সহযোগী জাহাঙ্গীর আলম অবৈধ জাল মুদ্রা তৈরির কাজে ব্যবহৃত উন্নতমানের বিদেশি প্রিন্টারের রঙিন কালি এবং অন্যান্য সরঞ্জামাদি সরবরাহ করত।



জাল টাকা তৈরির সরঞ্জম


তিনি জানান, আসামিদের কারখানা থেকে ১০ লাখ জাল রুপি, ভারতীয় জাল রুপি তৈরির কাজে ব্যবহৃত ল্যাপটপ একটি, ভারতীয় মুদ্রায় ব্যবহৃত স্কিন ডাইস ছয়টি, ডাইস প্লেট দু’টি, স্ক্যানার কাম প্রিন্টার দু’টি, প্রিন্টার চারটি, ভারতীয় জাল রুপির নিরাপত্তা সুতা সাত বান্ডেল, ফয়েল মেশিন একটি, জাল রুপি কাটার কাজে ব্যবহৃত কাটার মেশিন চারটি, কাটার ব্লেড সাত বক্স, জাল রুপি ছাপানোর কাজে ব্যবহৃত স্কিন রাবার পাঁচটি, বিদেশি উন্নতমানের রঙিন কালী ১২০টি, অন্যান্য কালী সাত কৌটা, জাল টাকা তৈরির কাজে ব্যবহৃত সাদা রং এক লিটার, কাচ তিন পিস, সুপার গ্রু একটি, রুপি বান্ডেল করার রাবার এক প্যাকেট, খাকি খাম ২০০টি, ভারতীয় জাল মুদ্রা তৈরির কাগজ এক রিম, ভারতীয় জাল মুদ্রা তৈরির কাগজ এক বান্ডেল, বালতি একটি, ল্যাপটপ মাউস একটি, ল্যাপটপ চার্জার একটি, অন্যান্য ক্যাবল ১০টি, মাল্টিপ্লাগ একটি উদ্ধার করা হয়েছে।


তিনি আরো জানান, এ ঘটনার সাথে জড়িত বাকিদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যবহত রয়েছে।


বিবার্তা/খলিল/কাফী


>>ঢাকায় জাল রুপির কারখানার সন্ধান

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com