শিরোনাম
ফিরে দেখা ২০১৭
বছরজুড়ে আলোচনায় জঙ্গি অভিযান
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:৪৫
বছরজুড়ে আলোচনায় জঙ্গি অভিযান
জঙ্গি অভিযানে সোয়াট সদস্যরা
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

আরো একটি বছরের সমাপ্তি ঘটতে যাচ্ছে। এবার বিদায়ী বছরের দিকে ফিরে তাকানোর পালা।


২০১৭ সালের শুরুর দিক থেকেই দেশে শুরু হয় একের পর এক জঙ্গিবিরোধী অভিযান। ওই অভিযানগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড় অভিযানটি হয় সিলেটের আতিয়া মহলে। সেই অভিযানে সেনাবাহিনীও অংশ নিয়েছিল।


এছাড়াও ঢাকা, রাজশাহী, খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালানো হয়েছে। বলতে গেলে পুরো বছরজুড়েই কোথাও না কোথাও জঙ্গিবিরোধী অভিযান চলেছে।


২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের শুরুতেই রাজধানীর যাত্রাবাড়ি এলাকায় একটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায় র‌্যাব।


১ ফেব্রুয়ারি ভোররাতে যাত্রাবাড়ির কবিরাজবাগের দনিয়া এ কে হাইস্কুল মাঠের পাশের পাঁচ তলা একটি বাড়িতে এ অভিযান চালায় র্যাব। অভিযানে ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে গ্রেফতার করা হয় চার জঙ্গিকে। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক। গ্রেফতার করা হয় নিষিদ্ধ সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সারোয়ার-তামীম গ্রুপের আইটি শাখার প্রধান আশফাক-ই-আজম আপেলকে।


এরপর ১৫ মার্চ চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট। ওই অভিযানের নাম ‘অপারেশন সীতাকুণ্ড'।


পরদিন ১৬ মার্চ একই উপজেলার প্রেমতলা নামক স্থানে আরেক জঙ্গি আস্তানায় অভিযান শুরু হয়। অভিযানের নাম দেয়া হয় অপারেশন ‘অ্যাসল্ট ১৬’। ওই আস্তানা থেকে ১৮ জন বাসিন্দাকে নিরাপদে সরিয়ে নেয়া হয়। ১৭ মার্চ শেষ হয় ওই অভিযান। ওই অভিযানে চার জঙ্গি নিহত হয়।


২০১৭ সালের ২৫ মার্চ সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার শিববাড়ি এলাকার আতিয়া মহল নামের একটি বাড়িতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান মিলে। পরবর্তীতে ঢাকা থেকে সোয়াট টিমের সদস্যরা সেখানে গিয়ে অভিযান চালায়। এরও পরে ওই জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে নামে সেনাবাহিনী। ২৮ মার্চ পর্যন্ত চলে 'অপারেশন টোয়াইলাইট’ নামের ওই অভিযান। অভিযানে এক নারীসহ চার জঙ্গি নিহত হয়।


একই রাতে আতিয়া মহল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে গোটাটিকর নামক স্থানে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ সদস্যসহ ৬ জন নিহত হন। এছাড়া ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় দক্ষিণ সুরমায় জঙ্গি আস্তানার পাশে বোমা বিস্ফোরণে র্যাবের গোয়েন্দা প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ গুরুতর আহত হন। ওই রাতে তাকে হেলিকপ্টারে সিএমএইচে নিয়ে আসা হয়। পরদিন সন্ধ্যায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সযোগে সিঙ্গাপুরে নিয়ে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় হয়। পরে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।



অভিযানে আটক দুই জঙ্গি(ফাইল ফটো)


২০১৭ সালের ২৯ মার্চ মৌলভীবাজার জেলায় দুটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। সদর উপজেলার নাসিরপুরের আস্তানায় পরিচালিত অভিযানের নাম দেয়া হয় অপারেশন ‘হিট ব্যাক’। এতে চার শিশু, দুই নারীসহ সাত জন নিহত হয়।


এছাড়া একই দিনে শহরের বড়হাট এলাকার ‘জঙ্গি আস্তানায়’ অভিযানের নাম দেওয়া হয় ‘অপারেশন মেক্সিমাস’। এতে এক নারী ও দুই পুরুষ জঙ্গি নিহত হয়।


২০১৭ সালের ২৯ মার্চ কুমিল্লা শহরে আরো একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। ৩১ মার্চ ওই আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। ওই অভিযানের নাম দেয়া হয় ‘অপারেশন স্ট্রাইক আউট’। তবে এখানে কোনো জঙ্গির সন্ধান পাওয়া যায়নি।


২১ এপ্রিল ঝিনাইদহের পোড়াহাটি উপজেলায় জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে একটি বাড়ি ঘেরাও করে রাখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এক পর্যায়ে ডিএমপি’র কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট ‘সাউথ প’ নাম দিয়ে অভিযান শুরু করে। পরদিন বেলা ২টার দিকে ওই অভিযানের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়। এ আস্তানায় কোনো জঙ্গিকে না পাওয়া গেলেও বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক, গুলি, অস্ত্র ও জিহাদী বই পাওয়া যায় বলে জানান খুলনা রেঞ্জের ডিআইজি দিদার আহমেদ।


৭ মে একই জেলার মহেশপুর উপজেলার বজরাপুর হঠাৎপাড়া গ্রামে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিট। পরে ওই আস্তানায় অভিযান শুরু হলে দুই জঙ্গি আত্মঘাতী হয়। এছাড়াও দুই পুলিশ সদস্য আহত হন। আটক করা হয় বাড়ির মালিকসহ চারজনকে।


পরে ১৬ মে ফের ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চুয়াডাঙ্গায় দুটি জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালিয়ে দুই জঙ্গিকে আটক করে র্যাব। এছাড়া বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরণ দ্রব্য উদ্ধার করা হয়।


রাজধানীর পান্থপথ এলাকার একটি আবাসিক হোটেলে এক জঙ্গি অবস্থান নিয়েছে - এমন সংবাদের ভিত্তিতে ১৫ অক্টোবর সকালে ওই হোটেলে অভিযান চালায় পুলিশ। এর পরপরই হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনাল নামের আবাসিক হোটেলে আত্মঘাতী হয়সাইফুল ইসলাম নিলয় নামের সেই জঙ্গি।


পুলিশের মতে, ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার জন্যই হোটেল ওলিও ইন্টারন্যাশনালে অবস্থান নিয়েছিল নিলয়। কিন্তু পুলিশ তা নস্যাৎ করে দেয়।


গত ৫ সেপ্টেম্বর মধ্যরাতে রাজধানীর মিরপুর মাজার রোডের পাশে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানের দক্ষিণে বর্ধনবাড়ি ভাঙ্গা ওয়ালের গলিতে ২/৩/বি নম্বর বাড়িটিতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পায় র্যাব। ’কমল প্রভা’ নামের ওই বাড়িটির মালিক হাবিবুল্লাহ বাহার আজাদ। র্যাব ওই বাড়িতে অভিযান শুরু করে। টানা পাঁচ দিনের ওই অভিযান জঙ্গি আবদুল্লাহসহ সাতজন নিহত হয়। উদ্ধার করা হয় বিপুল পরিমাণ বোমা ও বিস্ফোরক দ্রব্য। ২০১৭ সালে ঢাকা শহরে এই অভিযান ছিল সবচেয়ে বড় অভিযান।


৯ অক্টোবর যশোর শহরের ঘোপ নওয়াপাড়া রোড এলাকার একটি বাড়ি থেকে হলি আর্টিজান হামলার অন্যতম হোতা মারজানের বোন খাদিজাকে আটক করা হয়। ২৩ অক্টোবর যশোর শহরতলীর পাগলাদহ এলাকার একটি বাড়ি ঘেরাও করে পুলিশ। পরে সেখানে তল্লাশি চালিয়ে গ্রেনেডের ৩০টি খোল, ৫০টি সুইচ, পিস্তলের দুটি ম্যাগাজিন, পাঁচ রাউন্ড গুলি, বোমা বানানোর জেল ও ১০ লিটার রাসায়নিক, আধা কেজি পেরেক, চারটি ছুরিসহ বিভিন্ন ধরনের বিস্ফোরক উদ্ধার করে তারা।



জঙ্গি অভিযানের প্রস্তুতি (ফাইল ফটো)


২৮ নভেম্বর চাঁপাইনবাবগঞ্জের চর আলাতলীতে জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পাওয়া পেয়ে র‌্যাব অভিযান চালাতে গেলে উভয় পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি ও বিস্ফোরণ ঘটে। এক পর্যায়ে বাঁশ ও টিনের তৈরি ওই ঘরে আগুন ধরে যায়। এর আগে ওই বাড়ির মালিক রাশিকুলের স্ত্রী নাজমা বেগম, নাজমার বাবা খোরশেদ আলম ও মা মিনারা বেগমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোদাগাড়ীর সাদীপুর গ্রাম থেকে আটক করা হয়। ওই বাড়িটি জঙ্গিরা বোমা ও বিস্ফোরকের গুদাম হিসেবে ব্যবহার করত বলে জানিয়েছে র‌্যাব।


বিবার্তা/খলিল/হুমায়ুন/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com