চট্টগ্রামে
কনস্টেবলের হাতেও এসএমজি, মোড়ে মোড়ে তল্লাশি
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৫, ১২:১১
কনস্টেবলের হাতেও এসএমজি, মোড়ে মোড়ে তল্লাশি
চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। নগরের মোড়ে মোড়ে তল্লাশি জোরদারের পাশাপাশি বাড়ানো হয়েছে টহল। সাধারণ পথচারীকেও জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে। এ সময় পুলিশ কনস্টেবলের হাতেও সাবমেশিনগান (এসএমজি) দেখা গেছে।


পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণত নায়েক ও এএসআই (সশস্ত্র) পদবির সদস্যরা এ অস্ত্র বহন করে থাকেন। আগের দিন মঙ্গলবার দুপুরে এক বেতার বার্তায় টহল ও থানা পুলিশকে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী দেখামাত্র এসএমজি দিয়ে ব্রাশফায়ারের নির্দেশ দেন সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ।


কমিশনারের এমন নির্দেশনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। সংস্থাটি বলেছে, এ ধরনের নির্দেশ বিচারবহির্ভূত হত্যাকে উৎসাহিত করে, যা সংবিধান, আইনের শাসন ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের পরিপন্থি।


আসক বলছে, ‘বাংলাদেশ সংবিধানের ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদে নাগরিকের জীবনের অধিকার এবং আইনের আশ্রয় পাওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। সন্দেহভাজন অপরাধীকেও আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া হত্যা বা গুলি চালানোর নির্দেশ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।’


বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বা গুলি চালানোর নির্দেশ রাষ্ট্রের নীতি ও আইনি কাঠামোর সঙ্গে কোনোভাবেই সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় উল্লেখ করে আসক বলছে, ‘এ ধরনের বক্তব্য বিষয়ে সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে। একই সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল সদস্যদের মানবাধিকার ও সংবিধানসম্মত দায়িত্ব পালন সম্পর্কে যথাযথ বার্তা দিতে হবে।’


আসকের জ্যেষ্ঠ সমন্বয়কারী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ‘রাষ্ট্রের প্রথম ও প্রধান দায়িত্ব নাগরিকের জীবন ও মর্যাদা রক্ষা করা। চট্টগ্রাম পুলিশ কমিশনারের এ ধরনের বক্তব্য দায়িত্বশীল প্রশাসনিক আচরণের পরিপন্থি এবং ন্যায়বিচার ও মানবাধিকারের মৌলিক নীতিকে চ্যালেঞ্জ করে। এ বক্তব্য অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। অন্যথায় এমন নির্দেশ বা মনোভাব ভবিষ্যতে প্রাণহানি ও বিচারবহির্ভূত ঘটনার শঙ্কা সৃষ্টি করতে পারে, যা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও আইনের শাসনের জন্য অপ্রত্যাশিত।’


এ ব্যাপারে নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (জনসংযোগ) আমিনুর রশিদ বলেন, ‘পুলিশ সদস্যদের যেসব অস্ত্র হাতে রাখার অনুমোদন রয়েছে, সেগুলো বহন করছে। যেমন এসএমজি, পিস্তল, শটগান, কাটা রাইফেল, চায়না রাইফেল। গণহারে অটোমেটিভ সাবমেশিনগান ব্যবহারের কোনো তথ্য নেই।’ তবে পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পুলিশ আগে থেকেই এসএমজি বহন করে। সাধারণত নায়েক ও এএসআই পর্যায়ের সদস্যরা এটি ব্যবহার করে থাকে। কনস্টেবলরা বহন করে চায়না রাইফেল।’


তবে মঙ্গলবার রাতে নির্দেশনাটির ব্যাখা দিয়ে সিএমপি কমিশনার হাসিব আজিজ বলেন, ‘দেখামাত্র ব্রাশফায়ার নিরস্ত্র জনসাধারণের জন্য নয়। যার হাতে অস্ত্র নেই, তার ওপর তো আর এসএমজি ব্যবহার করব না। সন্ত্রাসী, অস্ত্রধারী যারা, তাদের জন্য এ নির্দেশনা।’


এদিকে গতকাল নগরের প্রবেশমুখ সিটি গেটে বেলা ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা গেছে, নগরের প্রবেশ ও বের হওয়ার পথে পুলিশি তল্লাশির মুখে পড়ছে যানবাহন। প্রাইভেটকারের পেছনের অংশেও তল্লাশি চালানো হয়। মোটরসাইকেল আরোহীদের থামিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। সাধারণ মানুষকেও জিজ্ঞাসাবাদের মুখে পড়তে হয়েছে।


এ সময় হাসিবুল নামে এক কনস্টেবলের হাতে এসএমজি দেখা গেছে। এ ছাড়া দিনভর নগরের চৌমুহনী, টাইগারপাস, চকবাজার, জামালখান মোড়, কাজীর দেউড়ি, প্রবর্তক, গোলপাহাড় ও জিইসি মোড়ে পুলিশকে তল্লাশি করতে দেখা গেছে।


নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (জনসংযোগ) আমিনুর রশিদ বলেন, কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের কর্মসূচি ঘিরে তল্লাশি ও টহল বাড়ানো হয়েছে, যাতে তারা কোনো নাশকতা ঘটাতে না পার


বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com