এবি পার্টি ও আপ বাংলাদেশের যৌথ সভা; অংশ নিয়েছে রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনও
গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে মনেপ্রাণে ধারণকারীদের ঐক‍্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গঠনের তাগিদ এবি পার্টির
প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ১৭:০১
গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে মনেপ্রাণে ধারণকারীদের ঐক‍্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গঠনের তাগিদ এবি পার্টির
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে মনেপ্রাণে ধারণকারীদের ঐক‍্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম গঠনের তাগিদ জানিয়েছে এবি পার্টি।ক্ষমতা নয় জুলাই আকাঙ্খার বাস্তবায়নই রাজনৈতিক দলগুলোর প্রধান ফোকাস হওয়া উচিৎ নইলে অভ্যুত্থানে জীবনও অঙ্গহানির শিকার হয়েছেন তারা ক্ষমা করবেন না। রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় বক্তারা এমন কথা বলেন।


২৩ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার সকালে ফারইস্ট মিলনায়তনে আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবি পার্টি এবং রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ইউনাইটেড পিপলস-আপ বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে আলোচনা সভায় প্রধান আলোচক ছিলেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।


বক্তব্য দেন রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সভাপতি হাসনাত কাইয়ুম, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ফ্যাকাল্টির ডিন অধ্যাপক ড. ওয়ারেসুল করিম বুলবুল, আপ বাংলাদেশের আহবায়ক আলি আহসান জুনায়েদ, এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক ডা. মেজর (অব) আব্দুল ওহাব মিনার, সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ, আপ বাংলাদেশের সদস্য সচিব আরেফিন হিজবুল্লাহ, প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, এবি পার্টির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার নাসরিন সুলতানা মিলি, রাস্ট্র সংস্কার আন্দোলনের নেতা দিদার ভুইয়া প্রমূখ।


সভাপতির বক্তব্যে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, জুলাইয়ের সকল শক্তিকে ভুল সংশোধন করে আবার রাজপথে নামতে হবে। আবু সাঈদ যেজন্য জীবন দিয়েছে সেটি ধরে রেখে নতুন লড়াই শুরুর ঘোষণা দেন তিনি। রাজনৈতিক দলগুলোকে গত ১৭ বছরের লড়াই স্মরণ করিয়ে দেন তিনি।


মাহমুদুর রহমান তার বক্তব্যের শুরুতে কিশোর জুলাই শহীদ আনাসের চিঠি পাঠ করে শোনান। তিনি বলেন, শহীদ আনাসসহ হাজারো শহীদ শুধু ক্ষমতা পরিবর্তনের জন্য জীবন দেয় নাই। বড় রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের প্রতিষ্ঠিত ক্ষমতা কাঠামো হারানোর ভয়ে জুলাইকে বিপ্লব না বলে শুধু আন্দোলন বলে থাকে। অথচ শহীদদের আত্মত্যাগ আর জনতার অকুন্ঠ সমর্থনকে সরকারের বৈধতার সিঁড়ি মনে না করে ১০৬ অনুচ্ছেদকে ভিত্তি মনে করা হচ্ছে। গত কয়েকদিনে সরকার প্রধানের সাথে নির্বাচনকালীন প্রশাসন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর আলোচনায় বিষ্ময় প্রকাশ করে তিনি বলেন, যেনতেন নির্বাচনই বড় রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য। তিনি বলেন, জুলাই যোদ্ধাদের লড়াই শেষ হয়নি, নির্বাচনের পরই সব সমাধান হয়ে যাবে মনে করা বোকামি হবে। আগামীতেও গণমাধ্যমকে শাসকের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে হবে বলে আশংকা প্রকাশ করেন তিনি।


হাসনাত কাইয়ুম বলেন, ক্ষমতা আর জনতাকে আলাদা করার সুযোগ নাই, জনগণের কাছেই ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচন সাধারণ নির্বাচন নয়, ৪৬ বা ৭০ সালের মত এই নির্বাচন ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ নির্বাচনের মত এবার যেন টাকার খেলা না হয়, এবার জনগণকে দেশপ্রেমের পরীক্ষা দিতে হবে। অভ্যুত্থানের অনেক নেতা বিলাসকে বেছে নিয়েছে। অথচ বিপ্লব আর বিলাস কখনো এক হতে পারে না। বিপ্লব আর যেন বেহাত না হয় সেজন্য জনগণকে সজাগ থাকার আহবান জানান তিনি। তিনি বলেন, চূড়ান্ত লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত অভ্যুত্থান শেষ হতে পারে না। একক নেতা নয় বরং বহু মত পথের মানুষ জুলাই অভ্যুত্থানের চালিকাশক্তি।


ড. ওয়ারেসুল করিম বুলবুল বলেন, এই আয়োজন মাইলফলক হবে যদি, জনতামূখী জোট করা যায়।


আলি আহসান জুনায়েদ বলেন, ক্ষমতা ভাগাভাগির দৌড় অভ্যুত্থানকে ভুলিয়ে দিচ্ছে। অথচ হাসিনার ক্ষমতাকে দেবত্ব দেয়ার প্রতিবাদে দেশবাসী মাঠে নেমেছিল। ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত রাখার প্রতিবাদেই জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছিল। ফ্যাসিবাদী কাঠামো এখনো বহাল আছে, অথচ শুধু ক্ষমতার দৌড়ই অনেক রাজনৈতিক দলের লক্ষ্যবস্তু হয়ে পড়ছে। জনগণের কাছে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়াই অভ্যুত্থানের আসল চেতনা, আর কখনো ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থা ফিরতে দেয়া হবে না বলে প্রত্যয় জানান তিনি।


ডা. আব্দুল ওহাব মিনার বলেন, অভ্যুত্থানপন্থি সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।


আরেফিন হিজবুল্লাহ বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের মূলে ছিল ফ্যাসিস্ট হাসিনার জিহবা। হাসিনার কথা শুরু হলে মনে হত, এসব শোনার চেয়ে আমাজন জঙ্গলে বসবাস করা ভালো। আমলাতান্ত্রিক জমিদারি এখনো বহাল আছে, এটা অভ্যুত্থানের বাস্তবতা নয়। তিনি বলেন, জনতার ক্ষমতায়নই হবে জুলাই অভ্যুত্থানের মূল কথা।


রাফে সালমান রিফাত বলেন, অভ্যুত্থানের অনেক সহযোগী অনেকে পুরোনো ধাঁচের রাজনৈতিক খেলায় ডুবে গেছে। রাতের আঁধারে কারো বাসায় বসে নির্বাচনী আসন নিয়ে সমঝোতার চেষ্টা গণ অভ্যুত্থানের চেতনা হতে পারে না।


সমাবেশের শুরুতে মজিবুর রহমান মঞ্জু তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে বহু নতুন নতুন শ্লোগান সংগ্রামী জনতার কণ্ঠে জাগরণ এনেছিলো। তার মধ‍্যে একটি শ্লোগান নতুন করে মানসপটে খুব রেখাপাত করেছিল, সেটা হলো “ক্ষমতা না জনতা- জনতা জনতা।”


ফ‍্যাসিবাদী শাসকগোষ্ঠী যে কোন গণআন্দোলন দমন করার জন্য প্রায়ই একটি কৌশল অবলম্বন করে থাকে; সেটি হলো ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে আন্দোলনের শক্তিগুলোকে বিভক্ত করা। নেতৃত্বের কাউকে কাউকে এমপি, মন্ত্রী পদে পদায়ন অথবা নগদ টাকার প্রলোভন দেখিয়ে সংগ্রামের পথ থেকে সরিয়ে নিজেদের দালাল বানানো। বিএনপি’র পদত্যাগী নেতা শাহজাহান ওমর, কল‍্যাণপার্টির নেতা মেজর জেনারেল (অব.) ইব্রাহিমের মত আরও অনেকে সে ধরনের পথে হেঁটেছেন এবং হাঁটতে উদ্যত হয়েছিলেন। সে সময় রাজপথে জনতার বজ্রকণ্ঠের আওয়াজ “ক্ষমতা না জনতা- জনতা জনতা” ছিল খুবই তাৎপর্য‍্যবহ। দেশ আসলে তখন থেকেই দু-ভাগে ভাগ হয়েছিল; একদিকে অবৈধভাবে দখলকৃত ‘ক্ষমতা’ অন‍্যদিকে আপোষহীন লড়াকুদের ঐক্যবদ্ধ শক্তি ‘জনতা’। পৃথিবীর তাবৎ ইতিহাসে রক্তঝরা সংগ্রাম পেরিয়ে শেষমেষ জনতারই জয় হয় এবং বাংলাদেশে জুলাই অভ্যুত্থানে সেটাই আবারো বাস্তব হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে।


বিবার্তা/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com