৯০ হাজার টাকায় মিলে ৫ লাখের ‘জাল নোট’
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৩, ১৪:৫৫
৯০ হাজার টাকায় মিলে ৫ লাখের ‘জাল নোট’
বিবার্তা প্রতিবেদক
প্রিন্ট অ-অ+

আসন্ন ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে জাল টাকা তৈরি চক্রের সদস্যরা সক্রিয় হয়েছে। জাল নোট বিক্রির জন্য ফেসবুকে এ গ্রেড জাল নোট, টাকা চাই, জাল নোট, জাল টাকা বিক্রি করি, জাল টাকার ডিলার, জাল টাকা বিক্রয়কেন্দ্র, রিয়েল সেলস্, টাকা বিজনেসসহ বিভিন্ন নামে পেজ ও গ্রুপ খুলে বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়। এরপর জাল টাকা কিনতে আগ্রহীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে জাল টাকা ডেলিভারি দিচ্ছিল শাহজাদা আলম।


মঙ্গলবার (২০ জুন) দুপুরে রাজধানীর টিকাটুলিতে র‌্যাব-৩ এর সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে এমন তথ্য জানিয়েছে এলিট ফোর্স।


সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ জানান, গতকাল রাতে র‍্যাব-৩ এর একটি আভিযানিক দল রাজধানীর উত্তরখান থানাধীন উজাপাড়া (মাস্টারপাড়া) এলাকায় অভিযান চালিয়ে জালনোট প্রস্তুতকারী চক্রের অন্যতম হোতা শাহজাদা আলম (৩৩), মাহদী হাসান (১৯) ও আবু হুরায়রা ওরফে তুষারকে (২২) গ্রেফতার করা হয়।


এ সময় তাদের কাছ থেকে ৯০০টি ২০০ টাকার জালনোট এবং ২০০টি ১০০ টাকার জালনোট মিলিয়ে সর্বমোট দুই লাখ জাল টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া তাদের কাছ থেকে জালনোট প্রস্তুতের কাজে ব্যবহৃত একটি ল্যাপটপ, একটি ল্যাপটপ ব্যাগ, একটি কিবোর্ড, দুটি মাউস, দুটি ল্যাপটপ চার্জার, একটি পেনড্রাইভ, ১০টি বিশেষ মার্কার পেন, টাকা ছাপানোর কাজে ব্যবহৃত একটি EPSON L130 প্রিন্টার ও একটি HP LASER JET PRO 200 COLOR MFP প্রিন্টার, টাকার ডিজাইন প্রিন্ট করার জন্য চারটি টোনার কার্টিজ, দুই রিম সাদা কাগজ, একটি ফয়েল পেপার রোল, তিনটি স্টিলের স্কেল, তিনটি এন্টি কার্টার, একটি কাঁচি, চারটি মোবাইল, আটটি সিমকার্ড, একটি এনআইডি কার্ড, তিনটি মানিব্যাগ এবং নগদ তিন হাজার ৬০ টাকা উদ্ধার করা হয়।


র‌্যাব কর্মকর্তা জানান, গ্রেফতার শাহজাদা, মাহেদী ও তুষার মিলে ছয় মাস আগে জাল টাকার ব্যবসার কার্যক্রম শুরু করেন। গ্রেফতার মাহেদী আগে থেকেই ফটোশপ এবং গ্রাফিক্সের ছোটখাট কাজ জানতেন। সেই সূত্রকে কাজে লাগিয়ে ইউটিউব থেকে জাল টাকা বানানোর প্রক্রিয়া দেখে এবং ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচিত হওয়া দুই বন্ধু শাহজাদা ও তুষারের সহযোগিতায় জাল টাকা তৈরির কাজ শুরু করেন। গ্রেফতার আসামি শাহজাদা এবং তুষার দীর্ঘদিন ধরেই জাল টাকা কেনাবেচার কাজ করে আসছেন। মাহেদীকে সঙ্গে নিয়ে তারা এবার জাল টাকা বানানোর কাজ শুরু করেন।


জাল টাকা বানানোর প্রক্রিয়া সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, আসামিরা প্রথমত অনলাইন থেকে বাংলাদেশি বিভিন্ন নোটের ছবি ডাউনলোড করে তাদের ল্যাপটপে সংরক্ষণ করেন এবং HP LASER JET PRO 200 COLOR MEP EPSON L130 প্রিন্টারে সাহায্যে প্রিন্ট করেন। পরে সেই ছবিগুলো অ্যাডোব ইলাস্ট্রেটর ব্যবহার করে এপিঠ-ওপিঠ সমন্বয় করে লিপি গোল্ডের মোটা ও পিচ্ছিল অফসেট কাগজের ওপর এক পাতায় চারটি নোট প্রিন্ট করেন। এরপর সেই কাগজে তারা গোল্ডেন কালার মার্কার দিয়ে নিরাপত্তা সুতার আদলে মার্কিং করেন। সবশেষে তারা স্টিলের স্কেল এবং এন্টিকাটারের সাহায্যে জালনোটগুলো কেটে বান্ডেল করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন। এই প্রক্রিয়াটি সূক্ষভাবে সম্পন্ন করতে তারা বিভিন্ন কোম্পানির বিভিন্ন ধরনের কাগজ ব্যবহার করে সবশেষ লিপি গোল্ডকে বেছে নেন।


এভাবে ৫০টি নোটের একটি বান্ডেল তৈরিতে তাদের আনুমানিক ২০০ টাকা খরচ হয়। অর্থাৎ ১ লাখ টাকা তৈরিতে আনুমানিক খরচ হয় দুই হাজার টাকা। এসব তৈরিকৃত জালনোটগুলো বিক্রির জন্য শাহজাদা এবং তুষার মিলে ফেসবুকে জাল টাকা ক্রয়-বিক্রয়ের বিভিন্ন পেজ ও গ্রুপের (যেমন; এ গ্রেড জালনোট, টাকা চাই, জালনোট, জাল টাকা বিক্রি করি, জাল টাকার ডিলার, জাল টাকা বিক্রয় কেন্দ্র, রিয়েল সেলস্, টাকা বিজনেস ইত্যাদি) পোস্টে জাল টাকা কিনতে আগ্রহী কমেন্টকারীদের সাথে ইনবক্সে যোগাযোগ করেন। পরে তারা ফোনে যোগাযোগ করে সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে জাল টাকা ডেলিভারির কাজ করে থাকেন।


এই চক্রটি বিগত সময়ে জাল টাকার বড় ধরনের চারটি ডেলিভারি দিয়েছে। গত ১৫ জুন তারা এ গ্রেড জাল নোট গ্রুপের মাধ্যমে পাঁচ লাখ টাকার (৫০০, ২০০ ও ১০০ টাকার নোট) জালনোটের একটি ডেলিভারি দেয়, যার বিনিময় মূল্য হিসেবে ৯০ হাজার টাকা নেয়। গতকাল দুই লাখ টাকার জালনোট ডেলিভারির জন্য প্রস্তুতিকালীন টাকা এবং মেশিন ও সরঞ্জামাদিসহ র‍্যাবের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে।


যেভাবে গড়ে উঠে জাল টাকা প্রস্তুতের চক্র


আরিফ মহিউদ্দিন আহমদ জানান, গ্রেফতারকৃত শাহজাদা ওই চক্রের মূলহোতা। তিনি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া এলাকার বোচাগছ গ্রামের মইনুল হকের ছেলে। তিনি ২০০৮ সালে বিজিবিতে যোগদান করেন এবং ২০২০ সালে নৈতিক স্খলন ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চাকরিচ্যুত হন। এরপর থেকে তিনি বিভিন্ন অনৈতিক কার্যক্রম ও চোরাচালানের সাথে জড়িয়ে পড়েন। ২০২২ সাল থেকে তিনি জাল টাকা প্রস্তুতকারী চক্রের সাথে কাজ করে আসছেন বলে জানান। গত জানুয়ারিতে ফেসবুকে জাল টাকা বিক্রির পেজ থেকে পরিচিত হয়ে মাহেদী এবং তুষারকে নিয়ে তিনি নিজেই জাল টাকা প্রস্তুতের এই চক্রটি গড়ে তোলেন। সে সময় থেকে মাহেদী এবং তুষারকে তিনি তার উত্তরখানের ভাড়া বাসায় নিয়ে আসেন। এখান থেকেই তারা তাদের চক্রের পরবর্তী কার্যক্রম চালাতে থাকেন।


আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার ভয়ে এরা সাম্প্রতিক সময়ে ওই বাসা ছেড়ে গাজীপুরে আরেকটি ভাড়া বাসায় চলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছিলেন বলে জানায় র‌্যাব।


অভিযুক্ত তৃষার এর আগে গাজীপুর কাশিমপুরে গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। বর্তমানে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে পুরোদমে জাল টাকার ডেলিভারির কাজ করে থাকেন। তিনি শাহজাদার বাসায় থাকার পাশাপাশি আগের কর্মস্থল গাজীপুর কাশিমপুরে সপ্তাহে দুই/তিন দিন গিয়ে জাল টাকা বিক্রির জন্য কাস্টমার রেডি করতেন। এভাবেই তাদের জাল টাকা ব্যবসা ও ডেলিভারি চলতে থাকে।


গ্রেফতারকৃত আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানায় র‌্যাব।


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com