তিস্তা ও ধরলার বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি
প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২৫, ২২:২০
তিস্তা ও ধরলার বন্যার পানি নেমে যাওয়ায় ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে ফসলি জমি
লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

লালমনিরহাটে বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হলেও দুর্ভোগ বেড়েছে তিস্তা ও ধরলা পাড়ের মানুষের। কৃষকদের রোপা আমন ক্ষেত পচে গলে নষ্ট আবার কোথাও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে প্রকোট আকারে। বন্যার পানি নেমে গেলেও ভেসে উঠছে ক্ষত।


জানা গেছে, ভারতের উজানের ঢল আর ভারী বৃষ্টি পাতের কারনে তিস্তা ও ধরলা নদীর পানি দশ দিন ধরে উঠানামা করে। আবার পানি বিপদ সীমার অতিক্রম করায় দেখা দেয় বন্যা। টানা প্রায় এক সপ্তাহ বন্যায় ডুবে থাকে নদীতীরবর্তী অঞ্চলের মানুষ ও আবাদি ফসলের ক্ষেত। পানিবন্দি হয়ে পড়ে জেলার প্রায় বিশ হাজার মানুষ। পানির স্রোতে ভেসে গেছে মৎস্য চাষিদের পুকুরের মাছ।


বিশেষ করে আমন ক্ষেত ও বীজতলা ডুবে যাওয়ায় কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বর্তমানে পানি কমে গেলে জেগে উঠে বন্যার ক্ষত। এ নিয়ে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়েছে তিস্তাপাড়ের মানুষগুলোর। এদিকে পানি কমার সঙ্গে সঙ্গে তিস্তা ও ধরলা পাড়ে দেখা দিয়েছে প্রকট ভাঙ্গন।


এ দিকে লালমনিরহাট সদর উপজেলার ধরলা নদীর ভাঙ্গনে বিলীন হচ্ছে মোগলহাট ইউনিয়নের আবাদি জমি। মোগলহাট ইউনিয়নের ৪টি গ্রামে ধরলা নদীর ভাঙ্গনে কয়েক শত একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আবাদি জমি, বাঁশঝাড়, গাছ পালা হারিয়ে দিশেহারা ধরলা নদীর পাড়ের সাধারণ মানুষ। বসতভিটা হারানোর আতঙ্কে রয়েছেন এ এলাকার মানুষজন। অপরদিকে খুঁনিয়াগাছ ইউনিয়নেও দেখা দিয়েছে নদী ভাঙ্গন।


সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, ধরলা নদীর লালমনিরহাট সদরের ১নং মোগলহাট ইউনিয়নের ধরলা নদীর পাড় ৩নং ওয়ার্ডের অন্তর্গত ব্যাপারীটারী ঘাটের পার হইতে কুরুল পর্যন্ত এবং ফলিমারীর চড়ের তীর সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।


ভাঙ্গণ রোধ করতে না পারলে এসব নদী গর্ভে চলে যাবে। এছাড়া ৪নং ওয়ার্ডে কুরুল নাড়ুর বাড়ীর পাশে এবং বুমকা ছয় মাথা পাকার মাথা হইতে ৬৮মিটার পর্যন্ত নদীর তীর ভাঙ্গতেছে। উক্ত নদীর তীর ভাঙ্গন রোধ না করতে পারলে লোকালয় পর্যন্ত ভেঙ্গে যাবে।


কর্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা কুসুম বালা, নারায়ণ চন্দ্র সেন, আবুল হোসেন, লক্ষী রাণী জানান, ধরলা নদীর ভাঙ্গন রোধে আমরা দিশেহারা। বর্তমানে নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নদীর স্রোত ডান দিক দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে ব্যাপক নদী ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনে কৃষি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদী ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। প্রতিবছর বন্যার পর ভাঙ্গন শুরু হয়। এভাবে আমাদের সব আবাদি জমি শেষ হয়ে যাচ্ছে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।


এসব গ্রামগুলোতে প্রায় ৩হাজার লোকের বসবাস রয়েছে। নদী-ভাঙ্গনে একেকজন ২ থেকে ৩ বার পর্যন্ত বসতভিটা হারিয়েছেন। জায়গা-জমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার কারণে অনেকে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এখন মাথা গোঁজার ঠাইটুকুও নেই। সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব এসব মানুষ উঁচু ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। যাদের এক সময় সহায় সম্বল সব কিছুই ছিল। সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা স্বচ্ছল ছিল। ছিলোনা অভাব-অনটন! কিন্তু ধরলার বন্যা আর নদী-ভাঙ্গনে নিঃস্ব এখন এসব পরিবার। মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকুও নেই তাদের। ভিটেমাটি হারিয়ে পথে বসেছে নদী-ভাঙ্গনের শিকার কয়েক হাজার মানুষজন। তারা দ্রুত তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের আশায় বুক বাঁধছে।


লালমনিরহাট পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুনিল কুমার রায় জানান, প্রতিবছর বন্যার শুরুতে এবং বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সময় ভাঙ্গন দেখা দেয়। মোগলহাটের ধরলা নদীতে এ রকম প্রায় কয়েকটি এলাকায় কম বেশি ভাঙ্গন হচ্ছে। বেশ কিছু এলাকায় ভাঙ্গন রোধে কাজ চলমান আছে। পরবর্তী বরাদ্দ পেলে এ এলাকায় ভাঙ্গন প্রতিরোধে আপদকালীন জিও ব্যাগ ফেলার ব্যবস্থা করা হবে।


বিবার্তা/হাসান/এসএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com