লক্ষ্মীপুরের রামগতিতে প্রাক্তন স্ত্রী রাশেদা আক্তার (২২), শ্বশুর আবুল বাশার ওরফে বাদশাকে (৫০) কুপিয়ে হত্যা ও শ্বাশুড়ি আঙ্কুরি বেগমকে (৪৫) রক্তাক্ত জখমের ঘটনায় ঘাতক জাকির হোসেন সুমনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
১৪ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার ভোরে কমলনগর উপজেলার করুনানগর এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রটি (চোরা) একটি পুকুর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে।
এদিকে এ ঘটনায় নিহত বাদশা মিয়ার ছেলে বাদী হয়ে সুমনের বিরুদ্ধে রামগতি থানায় মামলা দায়ের করেন।
নিহত বাদশা মিয়া পশ্চিম চরকলা কোপা গ্রামের মৃত তোবারক আলীর ছেলে। তিনি পেশায় ইট ভাটার শ্রমিক ছিলেন। নিহত রাশেদা তার একমাত্র মেয়ে। তার আরও চারটি ছেলে সন্তান রয়েছে। রাশেদা ও ঘাতক সুমনের ঘরে জিহাদ নামে তিন বছর বয়সী এক ছেলে রয়েছে।
সুমন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার দালাল বাজার ইউনিয়নের পশ্চিম লক্ষ্মীপুর গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সুমন তার শ্বশুর বাড়িতে ঢুকে নৃশংস এ দুটি হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।
নিহতদের পরিবারের সদস্যরা জানায়, সুমন তার শ্বশুর আবুল বাশারের কাছ থেকে যৌতুক দাবি করতেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে পারিবারিকভাবে অশান্তি চলছিল। প্রায় ৫ মাস আগে রাশেদার সাথে সুমনের ছাড়াছাড়ি হয়। মাস খানেক আগে অন্যত্র বিয়ে হয় রাশেদার। এ নিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের উপর আরও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে সুমন। এর জের ধরে সুমন তার শ্বশুর বাড়িতে এসে এলোপাতাড়ি শ্বশুর আবুল বাসার, শাশুড়ি আঙ্গুরি বেগম, স্ত্রী রাশেদা ও নানী শাশুড়ি আমেনা বেগমকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। এতে ঘটনাস্থলেই রাশেদা ও তার বাবা আবুল বাশারের মৃত্যু হয়েছে ৷ রাশেদার মাকে গুরুতর আহত অবস্থায় প্রথমে রামগতি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, পরে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন বলে জানিয়েছেন স্বজনেরা।
অন্যদিকে নিহত রাশেদার দাদী আমেনা বেগমকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। তার দুই হাতের আঙুলে ছুরিকাঘাত করা হয়েছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী নিহত রাশেদার ভাই ফয়সাল (১২) বলেন, মাগরিবের পর আমি, আমার ছোট ভাই সাইফুল (৮), আমার বোন রাশেদা, বাবা-মা এবং দাদী সকলে ঘরের ভেতরে ছিলাম। আমার বোনের আগের স্বামী সুমন ঘরের ভেতরে ঢুকে প্রথমে আমার বোনকে ছুরিকাঘাত করে। তাকে বাঁচাতে গেলে আমার বাবা-মা ও দাদীকে ছুরি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। আমি কাছে গেলে সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এরপর দ্রুত ঘর থেকে বেরিয়ে পালিয়ে যায় সুমন।
ফয়সাল আরও জানায়, সুমন প্রায়ই তার বোনকে মারধর করতো। সর্বশেষ গত রমজান ঈদে সুমন তাদের বাড়িতে আসে। সে সময় তাকে বাড়িতে থাকতে দেওয়া হয়নি। তখন সে হুমকি দিয়ে গেছে। একই কথা জানিয়েছে তার ছোট সাইফুলও।
নিহতদের আত্মীয় মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, সুমন বখাটে ও মাদকাসক্ত ছিল। সে পূর্বে আরও দুটি বিয়ে করেছে। সেখানে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। রাশেদা তার তৃতীয় স্ত্রী। তাকে নিয়ে চট্রগ্রামে থাকতো। সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য রাশেদা সেখানে গার্মেন্সে চাকরী করতো। তবে টাকার জন্য রাশেদাকে প্রায়ই নির্যাতন করতো সুমন৷ নির্য়াতন সহ্য করতে না পেরে রাশেদা ছেলে সন্তানকে নিয়ে বাবার বাড়িতে চলে আসে। প্রায় ৫ মাস আগে রাশেদার সাথে তার ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। মাস খানেক আগে নোয়াখালীর আন্ডারচর এলাকায় আবদুল কাদের নামে এক ছেলের সাথে রাশেদার বিয়ে দেয় তার পরিবার। এতেই ক্ষিপ্ত হয়ে সুমন এ ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
রামগতি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, ঘাতক সুমনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।
বিবার্তা/সুমন/জবা
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]