চকরিয়া-পেকুয়া বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি
প্রকাশ : ১০ আগস্ট ২০২৩, ১৮:০৮
চকরিয়া-পেকুয়া বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কক্সবাজারের চকরিয়া ও পেকুয়া উপজেলায় বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি ৪ শিশুসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে চকরিয়ায় নিজ বাড়ির সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নেমে বিষাক্ত গ্যাসে নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে বাবা-ছেলে সহ ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। যাদের বৃহস্পতিবার বাদে আসর একই কবরস্থানে শায়িত করা হয়েছে।


অপরদিকে বন্যা পরবর্তীতে পেকুয়া-চকরিয়ায় ৪ শিশুসহ আরও পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।


১০ আগস্ট, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপর পর্যন্ত পেকুয়া ও চকরিয়ায় চার শিশুসহ পাঁচজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে পেকুয়া উপজেলায় তিনজন এবং চকরিয়া উপজেলায় অজ্ঞাতনামা একজনসহ দুইজনের মরদেহ পাওয়া যায়।


মৃতরা হল, চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের ভেরুয়াখালী পাড়ার মো. এমরানের ছেলে মো. জিশান (৯) এবং পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের নুরুল আলমের মেয়ে তাহিদা বেগম (১০) ও ছেলে আমির হোছাইন (৭) ও তাদের নিকটাত্মীয় ছাবের আহমদের মেয়ে হুমাইরা বেগম (৮)।


এছাড়া অজ্ঞাতনামা অপরজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয় চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের মহেশখালী খাল লাগোয়া এলাকা থেকে। এর মধ্যে বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে পেকুয়া উপজেলার উজানটিয়া ইউনিয়নের ফেরাসিঙ্গা পাড়ার সাহেবখালী খাল থেকে ৩ শিশুর মরদেহ উদ্ধারের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা।


উজানটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তোফাজ্জল করিম জানান, বুধবার বিকেলে তিন শিশু পাশের সাহেবখালী খালের পাশে ফুফুর বাড়িতে বেড়াতে যায়। সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরার পথে সাহেবখালী খালে পড়ে নিখোঁজ হয়। বৃহস্পতিবার সকাল ৭টার দিকে ওই খালে তাদের মরদেহ ভেসে ওঠে। তিন শিশুর লাশ উদ্ধার করে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।


বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বদরখালী ইউনিয়নের ভেরুয়াখালী নতুন বাজারের পাশে মো. জিশান নামের এক শিশুর এবং বেলা ১২টার দিকে চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের মহেশখালী খাল লাগোয়া এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করা হয় বলে জানিয়েছেন চকরিয়া থানার ওসি মো. জাবেদ মাহমুদ।


তিনি জানান, বদরখালীতে বুধবার সকালে বন্যার পানিতে খেলা করছিলো মো. জিশান। এসময় সে বন্যার পানির স্রোতে ভেসে যায়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর বৃহস্পতিবার সকালে ভেরুয়াখালী নতুন বাজার এলাকা থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় লোকজন।


এছাড়া বৃহস্পতিবার বেলা ১২টায় চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের মহেশখালী খাল লাগোয়া এলাকা থেকে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানান চকরিয়া থানার ওসি।


জাবেদ মাহমুদ জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দল লাশটি উদ্ধার করেছে। মৃতদেহ অর্ধগলিত হয়ে বিকৃত হয়ে যাওয়ায় পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।


মৃতদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান ওসি।


এদিকে, চকরিয়ায় সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নেমে বিষক্রিয়ায় দুই ছেলের মৃত্যু ঘণ্টা চারেক পর চলে গেলেন তাদের বাবাও। বুধবার (৯ আগস্ট) রাত ৩টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আনোয়ার হোসেন মারা যান।


এর আগে একই ঘটনায় বুধবার রাত ১১টার দিকে অচেতন অবস্থায় আনোয়ারের দুই ছেলে শহিদুল ও শাহাদাতকে চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।


চকরিয়া থানার ওসি জাবেদ মাহমুদ এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। দুই ভাই ও বাবার মৃত্যুর বিষয়টি আনোয়ারের মেজ ছেলে মৌলভি মঞ্জুর আলমও নিশ্চিত করেছেন।


তিনি জানান, কয়েক দিন ধরে ভারী বর্ষণ ও উজানের ঢলে চকরিয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এতে উপজেলার বিএমচর ইউনিয়নের বহাদ্দরকাটায় তাদের বসতভিটাও তলিয়ে যায়। বসতভিটা থেকে পানি নেমে যাওয়ায় রাত ১০টার দিকে আনোয়ারের দুই ছেলে শহিদুল ও শাহাদাত সেপটিক ট্যাংক পরিষ্কার করতে নামেন। একপর্যায়ে তাদের কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে তাদের বাবা আনোয়ার হোসেন ট্যাংকে নামেন। এক সময় তারও সাড়াশব্দ পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে লোকজন তাদের উদ্ধার করে অচেতন অবস্থায় চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক দুই ভাই শহিদুল ও শাহাদাতকে মৃত ঘোষণা করেন। আর আশঙ্কাজনক অবস্থায় বাবা আনোয়ারকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান চিকিৎসক। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গভীর রাতে গভীর ঘুমে চলে গেলেন তিনিও।


চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক শোভন দত্ত বলেন, ‘বধুবার রাতে ওই দুই ভাই হাসপাতালে আনার আগেই মারা যান। তাদের অক্সিজেনের ঘাটতি ও মিথেন গ্যাসের বিষক্রিয়া ছিল। এতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় একজনকে (আনোয়ার হোসেন) চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়েছিল।’ বিষক্রিয়ার বিষয়টি ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘মাটিতে গর্ত করে তৈরি করা ট্যাংকে অ্যামোনিয়া, হাইড্রোজেন সালফাইড, সালফার ডাইঅক্সাইডসহ সালফারের অন্যান্য গ্যাস, মিথেন, এমনকি বিষাক্ত কার্বন মনোক্সাইড তৈরি হতে পারে। বদ্ধ থাকার ফলে এসব গ্যাস ক্রমশ ঘন হতে থাকে এবং সেই সঙ্গে অক্সিজেনের স্বল্পতা তৈরি হতে থাকে। কখনো কখনো এ ধরনের বদ্ধ কূপ একেবারে অক্সিজেন শূন্য হয়ে যায়। এই কারণে সতর্কতা গ্রহণ ব্যতীত সেপটিক ট্যাংকের গভীরে নামলে অক্সিজেনের অভাবে ও পাশাপাশি মিথেন গ্যাসের বিষক্রিয়ায় মানুষ জ্ঞান হারানোর সম্ভাবনা থাকে। দ্রুত সময় সজ্ঞানে বের হয়ে আসতে না পারলেই বিপর্যয় ঘটে। অক্সিজেন ঘাটতির কারণে মস্তিষ্কে হাইপোক্সিয়া ও কার্ডিয়াক এরেস্ট হয়ে ব্যক্তি মারা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।’


চকরিয়া থানা ওসি জাবেদ মাহমুদ বলেন, তাদের মৃত্যুর ঘটনা জানতে পেরেই ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অভিযোগ না থাকায় লাশের সুরতহাল তৈরি পূর্বক পরিবারের আবেদনের আলোকে কর্তৃপক্ষের নির্দেশক্রমে বৃহস্পতিবার সকালে লাশ দাফনের জন্য তাদেরকে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। আছরের নামাযে জানাজা শেষে নিজস্ব এলাকার কবর স্থানে ৩ জনের দাফন সম্পন্ন হয়েছে।


বিবার্তা/ফরহাদ/সউদ

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com