বিচার প্রার্থীদের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে: প্রধান বিচারপতি
প্রকাশ : ১৮ মে ২০২৪, ২২:১৯
বিচার প্রার্থীদের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে: প্রধান বিচারপতি
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেছেন, ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার বাংলাদেশের সব নাগরিকের রয়েছে, এটা সংবিধানে গ্যারান্টি করেছে। প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার রয়েছে ন্যায়বিচার পাওয়ার। আদালতে বিচার প্রার্থীরা ন্যায় বিচার পাওয়ার জন্যই আসেন। আদালতের কর্তব্য হচ্ছে বিচার প্রার্থী সকল নাগরিকের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করা। এর পাশাপাশি বিচার প্রার্থীদের সকল সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।


১৮ মে, শনিবার সকালে কক্সবাজার জেলা জজ আদালতের কাছে বিচারপ্রার্থী জনগণের বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ’ নির্মাণ কাজের উদ্বোধন অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমে বক্তব্য দানকালে এসব কথা বলেন তিনি।


এ সময় প্রধান বিচারপতি কক্সবাজারে মাদক মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার কথা উল্লেখ করেন।


তিনি বলেন, বিচারপ্রার্থীসহ সংশ্লিষ্ট সবার সব ধরনের সেবা ও সুবিচার নিশ্চিত করতে কক্সবাজারে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ করা হচ্ছে। এ ইনস্টিটিউটকে এমনভাবে গড়ে তোলা হবে, যাতে সারা দেশের নাগরিকরা সহজে এর সুফল ভোগ করতে পারে।


এসময় অন্যদের মধ্যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, আপিল বিভাগের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, আপিল বিভাগের সদ্য সাবেক বিচারপতি বোরহানউদ্দিন, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলামসহ হাইকোর্ট ডিভিশনের বিচারপতি, সুপ্রিম কোর্টের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


পরে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান কক্সবাজার চিফ জুডিশিয়াল কোর্ট এলাকা পরিদর্শন করেন।


ন্যায়কুঞ্জ: বিচারপ্রার্থী ও বিচার সংশ্লিষ্ট কাজে কক্সবাজারের বিভিন্ন আদালতে আসা নাগরিকদের বিশ্রামের জন্য নির্মিত হচ্ছে বহুমুখী আধুনিক সুবিধা সম্বলিত বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ’। কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের দক্ষিণ পূর্ব কোণায়, জেলা জজের বাসভবনের সীমানা দেওয়ালের উত্তরপাশে, কক্সবাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ শপিং কমপ্লেক্সের সামনে পশ্চিম দক্ষিণ কোণায় ন্যায়কুঞ্জ নামক বিশ্রামাগারটি নির্মাণ করা হচ্ছে।


কক্সবাজার গণপূর্ত বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. ওমর ফারুক জানান, ন্যায়কুঞ্জ নির্মাণের জন্য কক্সবাজার আদালত ভবন সংশ্লিষ্ট প্রস্তাবিত জমির অবস্থান অনুযায়ী কমন নকশাটি সংশোধন করে নতুন একটি ‘সি’ টাইপ প্ল্যান নকশা তৈরি করা হয়েছে। সংশোধিত নতুন নকশাটি বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল অনুমোদন দেওয়ার পর প্রতিযোগিতামূলক দরপত্র আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। নিয়োগকৃত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এইচ.এম কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারকে গণপূর্ত বিভাগ থেকে লেআউট দেওয়ার পর প্রাথমিকভাবে সংশোধিত নতুন ডিজাইন প্ল্যান অনুযায়ী ন্যায়কুঞ্জ স্থাপনের কাজ শুরু করেছেন। নির্মাণাধীন ন্যায়কুঞ্জের আয়তন এক হাজার বর্গফুট। অত্যাধুনিক নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীতে ডিজাইন করা সুপরিসর আধুনিক বিশ্রামাগার ন্যায়কুঞ্জে একত্রে ৬০/৭০ জন বিচার প্রার্থীদের বসার জায়গা, ওয়াশরুম, ব্রেস্ট ফিডিং কর্নার, ফাস্টফুডের দোকান, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা কক্ষে বসার ব্যবস্থাসহ বহুমুখী সুবিধা থাকবে। প্রায় ৫২ লাখ টাকা ব্যয়ে কক্সবাজারে ন্যায়কুঞ্জের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আগামী ২ মাসের মধ্যে অর্থাৎ চলতি বছরের জুলাই এর মধ্যে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।


এদিকে, শুক্রবার (১৭ মে) বিকেলে কক্সবাজারের টেকনাফের বাহারছরা ইউনিয়নের শীলখালীতে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ নির্মাণের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন প্রধান বিচারপতি।


কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছরা ইউনিয়নের উত্তর শীলখালী সমুদ্র সৈকত ঘেষা মেরিন ড্রাইভের পাশেই ‘বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ স্থাপনের জন্য ৩ একর ৩৪ শতক অকৃষি খাসজমি মাত্র এক লাখ এক টাকা নামমাত্র সেলামি নিয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের অনুকূলে দীর্ঘ মেয়াদি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়েছে। বন্দোবস্ত পাওয়া জমিতে নান্দনিক স্থাপত্য শৈলীতে আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্বলিত একাধিক বহুতল ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। যেখানে থাকবে, বিচার সংক্রান্ত গবেষণার অবারিত সুযোগ। থাকবে গবেষণাধর্মী বিচারিক তথ্য উপাত্ত। থাকবে প্রাচীনকালের বিচার ব্যবস্থার নিদর্শন ও ইতিহাস সমৃদ্ধ মিউজিয়াম। সমৃদ্ধ লাইব্রেরি। বিভিন্ন দেশের গবেষকদের গবেষণায় অংশ নেওয়ার ব্যবস্থা। থাকবে গবেষণায় নিয়োজিতদের জন্য আবাসন ব্যবস্থা, রিসোর্ট ও রেস্ট হাউস। প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বমানের একটি ইনস্টিটিউট হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন অত্যাধুনিক বিচারিক গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রমের খোঁজ খবর নেওয়া নেওয়া হচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটি নির্মাণ কার্যক্রমের জন্য আধুনিক প্ল্যান, ডিজাইন করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনবল কাঠামোও সৃজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।


সূত্র মতে, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউটটি নির্মিত হলে এটি হবে দেশের প্রথম এবং একমাত্র আইন, আদালত ও বিচার বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রাজধানীর বাইরে এটি হবে প্রথম একটি আধুনিক স্থাপনা।


বিবার্তা/ফরহাদ/সউদ


সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2024 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com