
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে আগ্রাসন চালাচ্ছে ইসরায়েল।এর মধ্যেই গাজার জন্য কোনো যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা তৈরি করা না হলে পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছেন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ।
রবিবার (১৯ মে) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গাজা উপত্যকায় যুদ্ধোত্তর পরিকল্পনা নির্ধারণ না করলে পদত্যাগ করার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন ক্যাবিনেট মন্ত্রী বেনি গ্যান্টজ। আর এই পরিকল্পনা প্রস্তুতের জন্য আগামী ৮ জুন পর্যন্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন তিনি।
অন্যদিকে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানিয়েছে, আগামী ৮ জুনের মধ্যে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী গাজার জন্য যুদ্ধ-পরবর্তী পরিকল্পনা উপস্থাপন করতে ব্যর্থ হলে বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সরকার ছেড়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার সদস্য বেনি গ্যান্টজ।
শনিবার (১৮ মে) এক সংবাদ সম্মেলনে গ্যান্টজ একথা জানান। তিনি বলেন, গাজায় যুদ্ধ শেষ হলে এর পরদিন সেখানে কীভাবে শাসন কাজ পরিচালনা করা হবে তা নিয়ে লক্ষ্য তৈরির জন্য মন্ত্রিসভাকে ছয়-দফা পরিকল্পনায় সম্মত হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, ‘যদি আপনি জাতীয় বিষয়কে ব্যক্তিগত বিষয়ের ওপরে স্থান দেন, তাহলে আপনি আমাদেরকে এই সংগ্রামে অংশীদার হিসেবে পাবেন। কিন্তু আপনি যদি ধর্মান্ধদের পথ বেছে নেন এবং পুরো জাতিকে অতল গহ্বরে নিয়ে যান, তাহলে আমরা সরকার ছাড়তে বাধ্য হবো।’
তবে নেতানিয়াহু তার এই মন্তব্যকে উড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, এর অর্থ ‘ইসরায়েলের পরাজয়’।
মূলত গত বছরের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় হামাস। আর সেই হামলার পরদিনই ইসরায়েলে গঠিত হয় যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা।
এছাড়া গ্যান্টজের মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন কয়েকদিন আগেই যুদ্ধকালনি মন্ত্রিসভার আরেক সদস্য ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট ও নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেছেন। তিনি নেতানিয়াহুকে জনসমক্ষে বলার আহ্বান জানিয়েছেন যে, গাজায় বেসামরিক ও সামরিক শাসন নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা ইসরায়েলের নেই।
গ্যালান্ট আরও বলেছেন, তিনি কয়েক মাস ধরে বারবার বিষয়টি উত্থাপন করে চলেছেন, কিন্তু (নেতানিয়াহুর কাছ থেকে) কোনও সাড়া পাননি।
মূলত গাজায় যুদ্ধ এগিয়ে চলার পাশাপাশি এই ধরনের মন্তব্য ও বিবৃতি ইসরায়েলের যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভা এবং নেতানিয়াহুর সরকারের মধ্যে ক্রমবর্ধমান ফাটলের চিত্র তুলে ধরছে। এতে করে দেশটির যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভায় বাড়ছে ভাঙনের সুরও।
গ্যান্টজ এবং গ্যালান্ট উভয়ই বলেছেন, গাজায় সামরিক নিয়ন্ত্রণ বজায় রাখা ইসরায়েলের নিরাপত্তা ঝুঁকি বাড়াবে। অন্যদিকে নেতানিয়াহুর ক্ষমতাসীন জোটের উগ্র ডানপন্থি সদস্যরাসহ অন্যরা বিশ্বাস করেন, হামাসকে পরাজিত করার জন্য গাজায় ইসরায়েলি নিয়ন্ত্রণ অব্যাহত থাকা প্রয়োজন।
শনিবার এক টেলিভিশন ভাষণে গ্যান্টজ নেতানিয়াহুকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘ইসরায়েলের জনগণ আপনাকে দেখছে। আপনাকে অবশ্যই ইহুদিবাদ এবং সবকিছুতেই দোষ দেখার মনোভাব, ঐক্য এবং দলাদলির মধ্যে, দায়িত্ব এবং অনাচারের মধ্যে, বিজয় এবং বিপর্যয়ের মধ্যে বেছে একটিকে নিতে হবে।’
অবশ্য যুদ্ধ শেষ হলে গাজার ভবিষ্যৎ কী হবে তা নিয়ে পরিকল্পনা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েলি নেতাদের ওপর চাপ দিচ্ছে। গত সপ্তাহে ইউক্রেন সফরে গিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন বলেন, ইসরায়েলকে গাজার ভবিষ্যতের জন্য একটি সুস্পষ্ট পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, ‘সেখানে কোনও অরাজকতা হবে না এবং এমন কোনও শূন্যতাও থাকতে পারে না যা বিশৃঙ্খলা দিয়ে পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।’
নেতানিয়াহু এর আগে অবশ্য জোর দিয়ে বলেছেন, হামাস যতদিন এই ভূখণ্ডে থাকবে ততদিন গাজার ভবিষ্যৎ শাসন কাদের হাতে থাকবে তা নিয়ে আলোচনা কেবল ‘অর্থহীন’।
এদিকে শনিবারও দক্ষিণ গাজার পূর্ব রাফাতে লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা ও হামলা চালায় ইসরাইল।
গত সপ্তাহে, ইসরায়েল দক্ষিণ গাজায় অভিযান শুরু করেছে - যেখানে গাজার অন্য জায়গা থেকে বেসামরিক লোকদের আগে সরে যেতে বলা হয়েছিল। বলেছিল যে, হামাসের শেষ অবশিষ্ট শক্ত ঘাঁটিগুলিকে লক্ষ্য করার জন্য শহরে প্রবেশ করতে হবে।
বিবার্তা/মাসুম
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]