সংঘর্ষের ঘটনায় তিন মামলায় খাগড়াছড়িতে নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত আসামিসহ বিএনপির দেড় হাজারের অধিক নেতাকর্মী আসামি করা হয়েছে। মামলার পর আসামি আটকে তৎপর রয়েছে পুলিশ প্রশাসন। এরই মধ্যে ২০ বিএনপি নেতাকর্মীকে পুলিশ আটক করেছে। পৃথক তিনি মামলায় আসামি সংখ্যা দাঁড়ায় দেড় হাজারের অধিক। মামলার ফলে গাঁ ঢাকা দিয়েছে অনেক বিএনপির নেতাকর্মী। আটক আতঙ্কে ভুগছে মামলার আসামীরা।

এদিকে খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সহ সভাপতি নাছির আহাম্মেদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করেছে মাটিরাঙ্গা থানার পুলিশ। খাগড়াছড়ি সদর থানা পুলিশের করা মামলায় মাটিরাঙ্গা থানা পুলিশ শুক্রবার (২১ জুলাই ২৩) মাটিরাঙ্গা ভুইয়াপাড়াস্ত নিজ বাস ভবন হতে তাকে গ্রেফতার করে। এর আগে বাকিদের অভিযান চালিয়ে আটক করা হয়।

আটকের নিশ্চিত করে মাটিরাঙ্গা থানা অফিসার ইনচার্জ মো. জাকরিয়া বলেন, খাগড়াছড়ি সদর থানায় দায়েরকেৃত মামলায় বিএনপি নেতা নাছির আহাম্মেদ চৌধুরীকে গত রাতে তার বাসভবন থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে সদর থানা পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হবে। খাগড়াছড়ি সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরিফ হোসেন বলেন, গত ১৮ জুলাই খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগ-বিএনপি সংঘর্ষের মামলায় মাটিরাঙ্গায় নিজ বাসভবন হতে বিএনপি নেতা নাছির আহাম্মেদ চৌধুরীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণে আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ যাবৎ সর্বমোট ২০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং অন্য আসামিদের গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি জানান।

আ’লীগ-বিএনপি এই সংঘর্ষের ঘটনায় বিএনপির বিরুদ্ধে তিনটি পৃথক মামলা হয়েছে। প্রায় সাড়ে ৬ শতাধিক বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দুটি মামলা এবং একই ঘটনায় পুলিশের পক্ষ থেকে সরকারি কাজে বাঁধা, পুলিশের ওপর হামলা ও জখম করার অভিযোগে বিএনপির ১৫৭ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সে মামলায় অজ্ঞাত পরিচয়ে আরো ৬/৭ শ জনকে আসামি করে খাগড়াছড়ি সদর থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

দায়েরকৃত মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শামীম চৌধুরী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই ২৩) একটি মামলা হয়েছে। মামলায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ওয়াদুদ ভূইয়াসহ ৩৫৭ জনের নাম উল্লেখসহ আরো সাড়ে ৩ শতাধিক অজ্ঞাত বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে শিক্ষানবিশ এক আইনজীবী ইকু বাবু চাকমা নামে ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আরেকটি মামলা করেছে খাগড়াছড়ি সদর থানায়। ‘বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় পৃথক তিনটি মামলা দায়ের হয়েছে থানায়। আসামিদের আটকে তৎপর রয়েছে পুলিশ।’

এর আগে বুধবার (১৯ জুলাই ২৩) সকালে পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিনহাজুল আবেদিন বাদী হয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারি কাজে বাঁধা, পুলিশের উপর হামলা ও আহত করার ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ১৫৭ জন বিএনপি নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে আরো ৫/৬শতাধিক অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা দায়ের করে পুলিশ।

বিএনপির পক্ষ থেকেও দলীয় অফিসে হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় থানায় মামলার আবেদন করেছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় জড়িত আসামিদের ধরতে পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ পর্যন্ত ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গত ১৮ জুলাই খাগড়াছড়িতে আ.লীগ ও বিএনপি অফিসে পাল্টা-পাল্টি হামলা সংঘর্ষ, পৌরসভায় হামলা, ভাঙচুর, মোটরসাইকেলে আগুন, পুলিশের টিয়ারসেল নিক্ষেপের ঘটনায় সাংবাদিক ও পুলিশসহ আহত ৫০ হয়।

এসব ঘটনায় খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএন আবছার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। সে সাথে বাড়ি বাড়ি গিয়ে হামলা,ভাঙচুর ও শারীরিক নির্যাতনেরও অভিযোগ এনে আওয়ামী লীগ হামলা চালিয়ে বিএনপিকে দায়ী করে উল্টো মিথ্যা মামলা করেছে বলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এদিকে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী জানান, বিএনপির জ্বালাও পোড়াও এবং সাধারণ মানুষের ক্ষতি করা ছাড়া আর কোন কিছুই শেখেনি। সেদিনের নির্মমতার চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, বিএনপি সব সময় মানুষ হত্যাসহ ধ্বংসাত্মক রাজনীতিতে বিশ্বাসী। এ ধরনের ঘটনা তাদের নতুন কিছু নয়। বিএনপি খাগড়াছড়িতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হামলাসহ নৈরাজ্য সৃষ্টি করে পাহাড়ের শান্ত পরিবেশকে অশান্ত করে তুলেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি তাদের আর ছাড় দেয়া হবে না জানিয়ে রাজনৈতিক ভাবে তাদের মোকাবেলা করা হবে বলে জানান।

সে মামলায় খাগড়াছড়ি খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সহ সভাপতি প্রবীণ চন্দ্র চাকমা,সম্পাদক এমএন আবছার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এড. মালেক মিন্টু, কোষাধ্যক্ষ মোফিজুর রহমান, পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুর রব রাজা, জেলা যুবদলের সভাপতি মাহবুবুল আলম সবুজ, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাইদুল হোসেন সুমন, সাধারণ সম্পাদক জাহেদুল আলম, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নুর মোহাম্মদ হৃদয়কে অন্যতম আসামি করা হয়।

বিবার্তা/মামুন/সউদ