‘জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেন না হলে বিষ দেন’
প্রকাশ : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ১২:০১
‘জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেন না হলে বিষ দেন’
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

বিষ দেন, না হলে জমি থেকে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করে দেন, হাওমাউ করে এমনটি বলছিলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ার ভুক্তভোগী কৃষকরা। উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের চরনারায়ণপুর এলাকায় একটি প্রভাবশালী মহল ফসলি জমির পাশে বেরি বাঁধ নির্মাণ করে জমির পানি নিষ্কাশন বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলেন স্থানীয় কৃষকরা।


বেরিবাঁধটি নির্মাণ হলে শত শত বিঘা জমিতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও শুস্ক মৌসুমে পানির অভাবে চাষাবাদ করতে পারবে না কৃষকরা। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, স্থানীয় চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কৃষকরা। কৃষি জমি বাঁচাতে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দিশাহীন কৃষকেরা।


লিখিত অভিযোগ ও ভূক্তভোগী কৃষক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের চরনারায়নপুর মৌজায় বুড়িবিলের পাশে ৫ শতাধিক বিঘা কৃষি জমি রয়েছে। উপজেলার মোগড়া ইউনিয়নের দরুইন গ্রামের মৃত শরিয়ত উল্লার ছেলে মো: তাহের মিয়া ও একই গ্রামের হাজী আবুল কাশেমের ছেলে মো: রাসেল মিয়া বিগত কয়েক বছর পূর্বে চরনারায়ণপুর মৌজাতে কিছু জমি ক্রয় করে জমিগুলির পশ্চিম পাশে উত্তর, দক্ষিণ করে একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে। যার ফলে ওই এলাকার শত শত বিঘা কৃষি জমিতে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা ও শুস্ক মৌসুমে পানির অভাব সৃষ্টির হয়ে জমিগুলি চাষে অযোগ্য হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ভোক্তভুগী কৃষকরা এসব নিয়ে প্রতিবাদ করলে তাদের উপর চড়াও হয়ে ভয়ভীতি হুমকি ধমকি দেয় তারা। ওই চক্রটির দাপটে কেউ কথা বলার সাহস পায়না। নিরীহ কৃষকদের জমি দখলের চেষ্টায় লিপ্ত আছে বলে অভিযোগ কৃষকদের।


সম্প্রতি আবারও জমি কেটে পুকুর নির্মাণ শুরু করেছে তাহের মিয়া। কিন্তু পুকুরের পাড় বাঁধার কারণে পুকুরের পেছনের প্রায় ৫০০ বিঘা জমি থেকে পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাবে। আবার বর্ষাকালে পানি সরতে না পেরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হবে। ফলে শত শত বিঘা জমির চাষাবাদ হুমকির মুখে পড়ছে।



সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চরনারায়নপুর ও ভবানীপুর মৌজার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া হাওড়া নদী থেকে তিতাস নদীতে মিলিত হওয়া বুড়ি বিলের খালটির এক পাশে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেছে প্রভাবশালীরা। এতে ওই খালটির এখন অস্তিত্ব হারিয়েছে। এতে স্বাভাবিক পানি প্রবাহ ব্যহত হয়েছে। জমির পানি নিষ্কাশনের জন্য দুটি পাইপ দিয়েছে তাহের মিয়া। কিন্তু পাইপ দিয়ে শত শত বিঘা জমির পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। বৃষ্টি হলেই জমিতে পানি জমে যায়।


খাল দখলের ফলে ভুক্তভোগী কৃষক লিয়াকত আলী অভিযোগ করে বলেন, আমার এখানে প্রায় ২৮ বিঘা জমি রয়েছে। চারদিকে ঘুরিয়ে যে বাঁধ দিচ্ছে এতে করে আমাদের জমিগুলোর পানি নিষ্কাশন পথ বন্ধ হয়ে পরেছে। এই বাঁধের ভিতরে শত শত বিঘা জমি জলাবদ্ধ হয়ে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে যাবে। চাষাবাদ না করতে পারলে আমরা না খেয়ে মরব। তারা প্রভাবশালী হওয়ার কারনে, আমরা প্রতিবাদ করেও কোন ফল পাচ্ছি না। আমরা প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছি কেউ আমাদের বিষয়টি গুরুত্ব দিচ্ছে না। কাঁন্না জড়িত কন্ঠে তিনি বলেন, বিষ দেন, না হলে জমি থেকে পানি নিষ্কাসনের ব্যবস্থা করে দেন।


দরখাস্তাকারী কৃষক মো: রফিকুল ইসলাম ভূইয়া, আমাদের খালের বাঁধটি কেটে জমির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি।


স্থানীয় বাসিন্দা মিলন বলেন, এখানে একটি খাল ছিল। একটি প্রভাবশালী মহল খালে মাটি ফেলে বেঁড়ি বাঁধ দিয়েছে। আমরা বাঁধা দিয়েছি কিন্তু তারা আমাদের বাঁধা মানে নাই। তারা বলেছিল ব্রীজ করে দিবে কিন্তু ব্রিজ করে দেয় নাই। এজন্য জমির পানি নিষ্কাশন হয় না। আমরা অনেক কষ্টের মধ্যে আছি।



এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভিযুক্ত তাহের মিয়া বলেন, এখানে কোন খাল নাই। নিজের জায়গায় বাঁধ দিয়েছি। এতে করে কৃষকদের কোন ক্ষতি হবে না।


উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহানা বেগম বলেন, চরনরায়নপুরে ৫০০ বিঘা জমি রয়েছে। ২০১৯ সালে কৃষকরা ইউএনও স্যারের কাছে অভিযোগ দিয়েছিল। স্যারের নির্দেশে আমি তদন্ত করার জন্য সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানে উঁচু বাঁধের কারণে কৃষকদের জমিতে পানি আসা-যাওয়া বাঁধাগ্রস্থ হয়। এখানে যদি আবারও বড় বাঁধা তৈরি করা হয় তাহলে কৃষি জমির ক্ষতি হবে। সেচের অভাবে জমিগুলো খালি পড়ে থাকবে। এটা কৃষির জন্য হুমকি স্বরুপ।


এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মোগড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মতিন বলেন, কৃষকরা আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে। আমি সরজমিনে গিয়ে দেখে কৃষকদের যাতে ক্ষতি না হয় সে ব্যপারে উভয় পক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের উদ্যোগ নিব।


এ বিষয়ে আখাউড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার অংগ্যজাই মারমা বলেন, কৃষকদের একটি দরখাস্ত পেয়েছি। স্থানীয় চেয়ারম্যানকে বিষয়টি দেখার জন্য বলেছি। তিনি দেখে সমাধান করার উদ্যোগ নেবেন বলে জানিয়েছে।


বিবার্তা/নিয়ামুল/বিএম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com