জেল পাহারা দেয় রাজহাঁসের দল!
প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ১২:১৭
জেল পাহারা দেয় রাজহাঁসের দল!
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

উঁচু নিশ্ছিদ্র দেওয়াল। মাছি গলে যাওয়ার জায়গাও নেই কোথাও। তার বাইরে বিস্তীর্ণ সবুজ মাঠ। আর সেই মাঠে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে এক দল রাজহাঁস।


ব্রাজিলের সাও পেদ্রো দে অ্যালকান্তারা জেলের বাইরের ছবিটা এমনই। সেখানে জেল পাহারা দেয় রাজহাঁসের দল। তারাই জেলের চৌকিদার। তাদের অতন্দ্র প্রহরায় জেল থেকে মাছি গলার উপায় নেই।


ব্রাজিলের এই বিশেষ জেলটিতে কিন্তু এত দিন রাজহাঁস ছিল না। পাহারাদার হিসাবে ছিল অন্য প্রাণী। সম্প্রতি তাদের সরিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে হাঁসগুলিকে।


সাও পেদ্রো দে অ্যালকান্তারা জেল এত দিন পাহারা দিত কুকুর। এক দল প্রশিক্ষিত হিংস্র কুকুরকে জেলের বাইরের মাঠে রেখে দেওয়া হয়েছিল। তারাই নিরাপত্তা নিশ্চিত করত।


তবে সম্প্রতি কারা কর্তৃপক্ষ কুকুরের বদলে রাজহাঁসে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বেশি দেখেছেন। সুবিধাগুলি বিবেচনা করেই তাঁরা নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এই রদবদল করেছেন বলে দাবি।


দক্ষিণ ব্রাজিলের সান্টা ক্যাটারিনা প্রদেশে রয়েছে সাও পেদ্রো দে অ্যালকান্তারা কারাগার। জায়গা নির্জন। ওই নির্জন এলাকা হাঁসের পক্ষে উপযোগী বলে জানান কারা কর্তৃপক্ষ।


সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, ব্রাজিলের ওই জেলের কর্মচারীদের দাবি, কুকুরের চেয়ে রাজহাঁসের মধ্যে পাহারা দেওয়ার পারদর্শিতা, তৎপরতা অনেক বেশি।


জেলের ডিরেক্টর মার্কোস রবার্টো ডিসুজা জানিয়েছেন, তাঁদের জেলে তিনটি স্তরে নিরাপত্তার বন্দোবস্ত রয়েছে। কয়েদিরা যাতে জেল থেকে পালাতে না পারেন, তার জন্য চলে কড়া নজরদারি।


জেলটিতে প্রথমে রয়েছে বৈদ্যুতিন নিরাপত্তার জাল। তা পেরোতে পারলে রয়েছে মানুষের নিরাপত্তা। অর্থাৎ, জেলের নিরাপত্তারক্ষীরা কড়া নজর রাখেন কয়েদিদের উপর।


এর পরের ধাপেই রয়েছে রাজহাঁসের নজরদারি। আগে যেখানে ছিল কুকুর। কর্তৃপক্ষের মতে, তৃতীয় ধাপের এই নিরাপত্তা ব্যবস্থাই সবচেয়ে জমাট এবং জোরদার।


পাহারাদার রাজহাঁসেদের নেতৃত্ব দেয় পিউ-পিউ। ধবধবে সাদা পালকের ওই রাজহাঁসটির তৎপরতা যেন অন্যদের চেয়ে খানিক বেশি। ডাকলে সবার আগে সে-ই সাড়া দেয়।


কুকুরের পরিবর্তে জেলে রাজহাঁস নিয়ে আসার অন্যতম কারণ অবশ্য অর্থ। কুকুর পরিচর্যায় যে পরিমাণ খরচ হয়, তার চেয়ে রাজহাঁসদের দেখাশোনার খরচ অনেক কম।


পাহারাদার বা অভিভাবক হিসাবে রাজহাঁসের ভূমিকা অনেক পুরনো। প্রাচীনকাল থেকেই এই পাখিগুলিকে বিভিন্ন জায়গায় পাহারা দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্রাজিলের জেলে ফিরেছে সেই প্রাচীন রীতি।


দাবি, শুধু কুকুর নয়, রাজহাঁস পাহারা দেওয়ার কাজে মানুষের চেয়েও বেশি পারদর্শী। স্বভাবগত ভাবেই তারা রক্ষণশীল এবং প্রতিরক্ষামূলক। জেলের বাইরে তাই তারাই আদর্শ প্রাণী।


মানুষের চেয়ে পাখিদের দৃষ্টিশক্তি অনেক বেশি। অতিবেগুনি রশ্মিও তারা দেখতে পায়। রাজহাঁসের ডাক অত্যন্ত জোরালো। ফলে যে কোনও সময়ে তা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম।


মানুষের চেয়ে বেশি দেখতে এবং শুনতে পেলেও সব পাখি কিন্তু তাতে প্রতিক্রিয়া জানায় না। রাজহাঁসেরা স্বভাবগত ভাবে প্রতিক্রিয়াশীল। তারা যা দেখতে বা শুনতে পাচ্ছে, তাতে চিৎকার করে, ডানা ঝাপটিয়ে প্রতিক্রিয়া জানায়।


রাজহাঁসের এই নানা ইতিবাচক দিকের কথা মাথায় রেখে তাদের নিয়ে আসা হয়েছে ব্রাজিলের জেলে। এখনও পর্যন্ত তাদের কাজে কোথাও কোনও গলদ ধরা পড়েনি। বরং প্রত্যাশা মতোই কুকুরের চেয়ে ভাল কাজ করছে পিউ-পিউ এবং তার দলবল।


বিবার্তা/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com