কক্সবাজার সমুদ্রে ভেসে এলো মৃত তিমি, কী বলছেন সমুদ্রবিজ্ঞানীরা
প্রকাশ : ১৮ এপ্রিল ২০২৩, ১৯:৫৩
কক্সবাজার সমুদ্রে ভেসে এলো মৃত তিমি, কী বলছেন সমুদ্রবিজ্ঞানীরা
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রিন্ট অ-অ+

কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন হিমছড়ি পয়েন্টে ভেসে এসেছে বিশালাকার মৃত তিমি।


মঙ্গলবার (১৮এপ্রিল) দুপুর ১২টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের মেরিন ড্রাইভ সংলগ্ন হিমছড়ি পয়েন্টে তিমিটি ভেসে এসে সৈকতে আটকে পড়ে। খবর পেয়ে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিউটের বিজ্ঞানীরাসহ উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ, বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদফতর, প্রাণিসম্পদ ও মৎস্য বিভাগের কর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে যান।


বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দর বলেন, ভেসে আসা মৃত তিমি ব্রাইডস জাতের। এর বৈজ্ঞানিক নাম বেলিনিওপেট্রা ইডিনি (Balaenoptera edeni )।


ইতোপূর্বে ২০২১ সালের ৯ ও ১০ এপ্রিল দুইটি তিমি হিমছড়ির ঠিক একই পয়েন্টে ভেসে এসেছিল। যে দুটি তিমি গত বছর ভেসে এসেছিল সেগুলোও বেলিনিওপেট্রা ইডিনি প্রজাতির তিমি ছিল বলে আমরা ডিএনএ টেস্টের মাধ্যমে নিশ্চিত হয়েছিলাম।


মহাপরিচালক সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, আজকে ভেসে আসা তিমিটির শরীরে পঁচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। ফলে ধারণা করা যাচ্ছে যে বেশ কিছুদিন আগেই গভীর সমুদ্রে তিমিটির মৃত্যু হয়েছে। তিমিটির শরীরে জালের বিশাল রশি পেঁচিয়ে আছে। মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করা যাচ্ছে মাছ ধরার বিশাল জালে আটকা পড়ে এবং গুরুতর আঘাত প্রাপ্ত হয়ে কিংবা অন্যকোন কারনে তিমিটি মারা গেছে। তিমি সাধারণত মৎস্য শিকারীদের জালে আটকা পড়ে,জাহাজের সাথে সংঘর্ষে কিংবা সমুদ্রে শব্দ দূষণের কারনে পরষ্পর যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে দিকভ্রান্ত হয়ে উপকূলের অগভীর জলে এসে আটকা পড়ে মারা যায়। এই স্তন্যপায়ী প্রাণীটি খুব সংবেদনশীল,কখনো কখনো সঙ্গীর মৃত্যু হলেও এদেরকে সৈকতের অগভীর জলে আত্মহুতি দিতেও দেখা যায়। এখনো উপকূলের অগভীর জলে ভাসছে বিধায় মৃত তিমিটির পূর্ণাঙ্গ পর্যবেক্ষণ করা ও নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি। এ প্রজাতির তিমির দাঁত নাই।মুখের মধ্যে চিরুনির মতো একটি অংশ দিয়ে খাবার প্রক্রিয়াজাত করে।


তিমির বিচরণের জন্য গভীর ও ঈষৎ উষ্ণ জলের প্রয়োজন। সে কারণে ভারত মহাসাগর, আটলান্টিক মহাসাগর ও প্রশান্ত মহাসাগরকে তিমির বিচরণের সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান হিসেবে মনে করা হয়। এরা কখনো কখনো একাকী, কখনো যুগলবন্দী কিংবা দল বদ্ধ হয়ে বাস করে।


বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের উত্তর প্রান্ত ও এর আশপাশের এলাকা,কক্সবাজারের পশ্চিমে এবং সেন্টমার্টিন দ্বীপের দক্ষিণের গভীর সমুদ্রেও ব্রাইডস প্রজাতির তিমির দেখা মিলে।


ধারণা করা হয়, এ তিমির প্রজননক্ষম একটি বড় কলোনি বঙ্গোপসাগরের গভীরে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড ও এর আশপাশের এলাকাজুড়ে বসবাস করছে।এ বিষয়ে আরো নিবিড় গবেষণা করার প্রয়োজন রয়েছে।


আমাদের দেশের উপকূলীয় নদীগুলো দিয়ে সারা বছর ধরে পরিবাহিত নিউট্রিয়েন্ট বঙ্গোপসাগরের সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ড এলাকায় গিয়ে জমা হয়। এসকল নিউট্রিয়েন্ট অসংখ্য প্রজাতির অণুজীব, মাছ, চিংড়িজাতীয় প্রাণীসহ অন্যান্য সামুদ্রিক প্রাণীর খাদ্যের জোগান দেয়। আর তিমির জন্য এগুলোই প্রধান খাবার। ফলে খাবারের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় এ অঞ্চলে তিমির প্রজননক্ষম একটি কলোনীর বিচরন রয়েছে বলে গবেষকরা ধারণা করেন। তবে গভীরতা কম থাকায় বাংলাদেশর উপকূল এলাকায় এরা খুব একটা আসে না। বিশাল দেহ ও পর্যাপ্ত খাবারের সরবরাহ থাকায় এরা গভীর সমুদ্রের এলাকাতেই বিচরণ করতে পছন্দ করে।


বিবার্তা/তাফহীমু্ল/এনএস

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com