শিরোনাম
যেসব কারণে মেসির প্রতি ক্ষুব্ধ পিএসজি
প্রকাশ : ০৬ মে ২০২৩, ১৮:৩১
যেসব কারণে মেসির প্রতি ক্ষুব্ধ পিএসজি
স্পোর্টস ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

নাপোলির সিরি আ জয়, হালান্ডের রেকর্ড ভাঙা গোল এসব ছাপিয়ে পিএসজি ও মেসির সম্পর্কের ব্যাপক অবনতিই বর্তমানে ফুটবলের সবচেয়ে বড় খবর। এতটাই তেতো যে, মেসিকে আর রাখতেই চাচ্ছে না পিএসজি। কেবল ক্লাব নয়, মেসির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে একদল সমর্থক।


এই মেসিকেই কিন্তু বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে বার্সেলোনা থেকে প্যারিসে নিয়ে আসেন পিএসজির ডিরেক্টর নাসের আল খেলাইফি। তাহলে মাত্র দু’বছরের ব্যবধানে কী এমন হলো, চোখের মণি থেকে মেসি হয়ে গেলেন পিএসজির চোখের বালি?


ফুটবলের ভদ্রবালক মেসিও কেন ক্লাব কর্তৃপক্ষের নিষেধাজ্ঞার তোয়াক্কা না করে পাড়ি জমালেন সৌদি আরবে? শুধু একটি নয়, এর পেছনে আছে অনেকগুলো কারণ।


আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে সৌদি আরবের অবস্থান খুব একটা ভালো নয়। বিভিন্ন বিষয়ে পশ্চিমাদের কাছে সৌদির গ্রহণযোগ্যতা কম। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী এই দেশটি চাচ্ছে নিজেদের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে। তাই সবার আগে খেলাধুলার দিকে নজর দিয়েছে তারা। বিশেষ নজর দিয়েছে সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রীড়া ইভেন্ট ফুটবলের দিকে। এরই মধ্যে মেসিকে সৌদি তাদের পর্যটনদূত বানিয়েছে। সৌদি প্রো লিগের দল আল হিলালে মেসির যাওয়াটা প্রায় নিশ্চিত। এই বিষয়টিকে কোনোমতেই ভালো চোখে দেখছে না ফ্রান্স। মেসির প্রতি ক্ষুব্ধ হওয়ার অন্যতম কারণ এটি। তাছাড়া পিএসজির মূল মালিকও কাতারের। দুই আরব দেশের মধ্যকার প্রতিযোগিতাও এখানে একটি কারণ।


গেল বিশ্বকাপে সামনে থেকে দলকে নেতৃত্ব দিয়েই আর্জেন্টিনাকে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন করেছেন মেসি। ফাইনালেও ছিলেন অসাধারণ। কিলিয়ান এমবাপ্পে সবটুকু উজাড় করে দিলেও পারেননি ফ্রান্সকে টানা দ্বিতীয় শিরোপা জেতাতে। ফরাসি ভক্তদের হৃদয় ভেঙে দেওয়া সেই ফাইনালের পর মেসিকে সেভাবে গ্রহণ করতে পারছে না প্যারিসিয়ানরা। অনেকটা যেন ঘরের শত্রু বিভীষণ হয়ে গেছেন মেসি। এছাড়াও, বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার হয়ে মেসির যে ধার বা একাগ্রতা দেখা গেছে সেটা পিএসজির হয়ে অনেকটাই অনুপস্থিত, এমন অভিযোগও আছে ফরাসি ক্লাবটির সমর্থকদের।


এছাড়া আরেকটি কারণ হতে পারে বিশ্বকাপ ফাইনালের পর আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক এমি মার্তিনেজ ফরাসি তারকা এমবাপ্পেকে নিয়ে একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলেছিলেন। আর্জেন্টিনার ড্রেসিংরুম থেকে শুরু করে বুয়েনস এইরেসের ছাদ খোলা বাসে প্রকাশ্যে এমবাপ্পেকে ছোট করেছিলেন এমি। এমি পরে দুঃখ প্রকাশ করলেও গোটা বিষয়ে মেসি ছিলেন নিশ্চুপ। সব দেখেও কিছুই বলেননি তিনি। ফরাসিদের ঘরের ছেলেকে নিয়ে এভাবে মজা করার পরও মেসি চুপ ছিলেন, যেখানে এমবাপ্পে তার ক্লাব সতীর্থ। এমবাপের সাথে এতটা কাছাকাছি থাকার পরেও আর্জেন্টিনার অধিনায়ক হিসেবে তিনি মার্টিনেজকে কিছুই বলেননি, যেটি রুষ্ট করেছে পিএসজি ও ফ্রান্স সমর্থকদের।


এছাড়া অনেক ফুটবল বিশ্লেষক মনে করেন পিএসজিতে অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্ব পাচ্ছেন মেসি। বার্সেলোনায় মেসিই ছিলেন শেষ কথা। পিএসজিতে সেখানে মেসি নন, সর্বেসর্বা এমবাপ্পে। স্বাভাবিকভাবেই ঘরের ছেলের প্রতি আলাদা টান আছে ক্লাবের। তাকে নিয়ে বিশেষ পরিকল্পনাও করছে ক্লাবটি। রিয়াল মাদ্রিদের মতো দল চাওয়ার পরেও এমবাপ্পেকে ছাড়েনি তারা, বরং বেশি বেতন ও সর্বোচ্চ সুযোগ সুবিধা দিয়ে রেখে দিয়েছে নিজেদের কাছে। মুখ ফুটে না বললেও মাঠ ও মাঠের বাইরে এমবাপ্পের চেয়ে এই পিছিয়ে থাকাটা একটু হলেও কষ্ট দিচ্ছে মেসিকে। এছাড়া এই দুই মহারথীর রসায়নটা যে খুব একটা ঘনিষ্ঠ নয় তা অনেকবারই দেখা গেছে মাঠে।


সবমিলিয়ে মেসি ও পিএসজির দুটি পথ দুটি দিকে বেঁকে গেছে। যাকে দেখতে পারে না লোকে, তার কিছুই যে ভালো লাগে না, তা আরেকবার প্রমাণিত হলো তাদের সম্পর্ক দেখে। ভালোবাসার নগরী প্যারিসের সবুজ জমিনে এখন মেসির প্রতি ঘৃণার চাষ হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনকি একদিন মেসির আগমনকে কেন্দ্র করে উৎসব করা ফরাসিরা এখন প্রতিবাদ জানাচ্ছেন মেসির বাড়ির সামনে। আর্জেন্টাইন তারকার পরিবার তুলে গালি দিতেও ছাড়ছেন প্যারিসিয়ানরা। ফলে সবকিছু মিলিয়ে অলৌকিক কিছু না ঘটলে মেসির প্যারিস অধ্যায় যে খুব তাড়াতাড়িই শেষ হতে চলেছে সেটি বলাই যায়।


বিবার্তা/নিলয়

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com