শিরোনাম
১০ বছরের উন্নয়ন-বাজেট
আকারে নতুন উচ্চতা, বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতা
প্রকাশ : ১৩ অক্টোবর ২০১৮, ১৮:১৬
আকারে নতুন উচ্চতা, বাস্তবায়নে সীমাবদ্ধতা
মৌসুমী ইসলাম
প্রিন্ট অ-অ+

১০ বছরে অবিশ্বাস্য গতিতে বেড়েছে বাজেটের আকার। সরকারের দুই মেয়াদে আকারের দিক দিয়ে তৈরি হয় নতুন উচ্চতা। ২০০৯-১০ অর্থবছরে তৈরি হয় নতুন রেকর্ড। সেবারই এক লাখ কোটি টাকার ঘরে পৌঁছায় বাজেটের আকার। ২০০৯-১০ অর্থবছরে যেখানে বাজেটের আকার ছিল এক লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকা, চলতি অর্থবছরে সেই বাজেটের আকার দাঁড়ায় চার লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকা। অর্থাৎ চারগুনের বেশি হয়েছে বাজেট।


তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদের আগের দশকে তেমনভাবে বাড়েনি বাজেট। ১৯৯৯-২০০০ সালে বাজেটের আকার ছিল মাত্র ৩৪ হাজার ৫১২ কোটি টাকা। আর ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার যে বাজেট দেয় তার আকার ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা। অর্থাৎ ওই দশকে বাজেট বাড়ানো গেছে মাত্র ৬৫ হাজার ৪৫০ কোটি টাকা।


বিশ্লেষকরা বলছেন, বিগত দশকে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি হলেও, হতাশার জন্ম দিয়েছে প্রকৃত বাজেট বাস্তবায়ন চিত্র।


২০০৯-১০ অর্থবছরে মূল বাজেটের আকার ছিল, এক লাখ ১৩ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা। জাতির সামনে বিশাল বাজেট দিয়ে তখন পথ চলা শুরু করে সরকার। কিন্তু বাস্তবায়নে নানান সংকটের কারণে শেষ পর্যন্ত বাজেট কাঁটছাট হয়, প্রকৃত বাস্তবায়ন হয় এক লাখ ১ হাজার ২৭৩ কোটি টাকা। সংশোধন করে এক লাখ ১০ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা করা হলেও তা অর্জন করা যায়নি। অর্থাৎ বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়ায় ৯১ দশমিক ১ শতাংশ।


পরের বছর ২০১০-১১ অর্থবছরে বাজেট দেয়া হয় এক লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা। পরে সংশোধন করে কমিয়ে নির্ধারণ করা হয় এক লাখ ৩০ হাজার ১১ কোটি টাকা। শেষ পর্যন্ত প্রকৃত বাস্তবায়ন হয় এক লাখ ২৮ হাজার ২৫৫ কোটি টাকা। এই বছরে বাস্তবায়ন চিত্র কিছুটা ভালো ছিল, বাস্তবায়ন সম্ভব হয় ৯৮ দশমিক ৬ শতাংশ।


২০১১-১২ অর্থবছরে এক লাখ ৬৩ হাজার ৫৮৯ কোটি টাকার বাজেট দেয় সরকার। তবে, প্রকৃত বাজেট বাস্তবায়ন হয় এক লাখ ৫২ হাজার ৪৫১ কোটি টাকা। তবে, সংশোধিত বাজেট এক লাখ ৬১ হাজার করা হলেও তা অর্জন সম্ভব হয়নি। বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়ায় ৯৪ দশমিক ৬ শতাংশ।


পরের বছর ২০১২-১৩-তে এক লাখ ৯১ হাজার ৭৩৮ কোটি টাকার বাজেট দেয়া হলেও পরে সংশোধন করে আকার দাঁড়ায় এক লাখ ৮৯ হাজার ৩২৬ কোটি টাকা। তবে, প্রকৃত বাস্তবায়ন হয় এক লাখ ৭৫ হাজার ৬৪২ কোটি টাকা।


২০১৩-১৪ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর পর্যন্ত বাজেটগুলোতে বাস্তবায়ন চিত্র ছিল হতাশাজনক।


অর্থ মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দুই লাখ ২২ হাজার ৪৯১ কোটি টাকার বাজেট দেয়া হয়। কিন্তু প্রকৃত বাস্তবায়ন হয়, এক লাখ ৮৯ হাজার ৯৮ কোটি টাকা। তবে, কাঁটছাট করে বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ ১৬ হাজার ২২২ কোটি টাকা। সে বছর বাস্তবায়নের হার হয় ৮৭ দশমিক ৫ শতাংশ। পরের বছরের চিত্রটাও একই। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়নের হার দাঁড়ায় ৮৭ দশমিক ২ শতাংশ। ওই বছরে দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার বাজেট দেয়া হলেও প্রকৃত বাস্তবায়ন হয় দুই লাখ ৩৯ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা।


২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাজেট বাস্তবায়ন আগের দুই বছরের চেয়ে কিছুটা বাড়ে। ওই বছর মূল বাজেটের আকার ছিল দুই লাখ ৯৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। তবে, সংশোধিত আকার ছিল, দুই লাখ ৬৪ হাজার ৫৬৪ কোটি টাকা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যয় করা যায়, দুই লাখ ৪০ হাজার ৪৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাস্তবায়নের হার ৯০ দশমিক ৭ শতাংশ।


পরের অর্থবছরে বাস্তবায়ন সংকট তৈরি হয়, দুই মেয়াদের মধ্যে সবচেয়ে কম বাজেট বাস্তবায়ন হয় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে। ওই বছরে ব্যয় করা যায়, দুই লাখ ৬৯ হাজার ৪৯৯ কোটি টাকা। কিন্তু মূল বাজেটের আকার ছিল তিন লাখ ৪০ হাজার ৬০৪ কোটি টাকা। সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় তিন লাখ ১৭ হাজার ১৭২ কোটি টাকা। বাস্তবায়ন হয় দাঁড়ায় ৮৫ শতাংশ।


২০১৭-১৮ অর্থবছরে চার লাখ কোটি টাকার ঘর স্পর্শ করে সরকার। ওই বছরে দেয়া হয় চার লাখ ২৬৬ কোটি টাকার বাজেট। তবে, সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় তিন লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। আর চলতি অর্থবছরের বাজেটের আকার দাঁড়ায় চার লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা।


এ বিষয়ে সিপিডির সম্মানীয় ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিগত দশকে বাংলাদেশ অনেক ভালো করেছে। প্রবৃদ্ধি, স্থানীয় সম্পদ আহরণ ভালো। তবে, যে মাত্রায় বিনিয়োগ এবং এর দক্ষতা দরকার ছিল তা হয়নি। এক্ষেত্রে অনেক সুযোগ রয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিত সক্ষমতা দরকার, উদ্যোগ নিতে হবে। অবকাঠামো উন্নয়নে অনেক পরিকল্পনা আছে, কিন্তু তার জন্য অর্থ ব্যয় করার ক্ষেত্রে অদক্ষতাও রয়েছে। এগুলো কাটানো গেলে দুই অংকের প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব।


তিনি বলেন, বণ্টনের ক্ষেত্রে অন্তর্ভূক্তিমূলক হয়নি। আয় বণ্টন, সম্পদ বণ্টনের ক্ষেত্রে যে ধরণের অন্তর্ভূক্তি দরকার ছিল তা হয়নি। সবচেয়ে ধনী ৫ শতাংশ এবং সবচেয়ে কম আয়ের যে ৪০ শতাংশ তাদের মধ্যে পার্থক্য বাড়ছে। অন্তর্ভূক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে। সার্বজনীন স্বাস্থ্য, পেনশন ব্যবস্থাসহ নানান উদ্যোগ দরকার। এগুলো কাটিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে।


অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, দশ বছরে অর্থ ব্যয় করার সক্ষমতা বেড়েছে কয়েকগুন। লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে, সেই লক্ষ্যে হয়তো শতভাগ পৌঁছানো যায়নি; কিন্তু অর্জন ভালো।


তিনি বলেন, বাজেটের আকার যেমন বেড়েছে, অন্যদিকে বেড়েছে জীবন মান। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চাঙ্গা হওয়ার ফলে কমছে দারিদ্র্য। প্রবৃদ্ধির হারও বাড়ছে।


বিবার্তা/মৌসুমী/কাফী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com