এক যুগেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। চূড়ান্ত খসড়া তৈরি হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও এখনও বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে হয়নি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি। ভারত, বাংলাদেশ, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কাসহ এই গোষ্ঠীভুক্ত সাতটি দেশের মধ্যে যাতে অবাধ বাণিজ্য সম্ভব হয়, তার কোনো ব্যবস্থাই করা হয়নি। ফলে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় কতোটা কার্যকর হলো বিমসটেক?
বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিকাল অ্যান্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (বিমসটেক) দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সাতটি দেশকে নিয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক জোট। ২০০৪ সালের ৩১ জুলাই এর প্রথম আনুষ্ঠানিক শীর্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়; আর চলতি বছরের ১ সেপ্টেম্বর থেকে নেপালে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সংস্থাটির চতুর্থ শীর্ষ সম্মেলন।
বলা হচ্ছে, বঙ্গোপসাগরীয় এলাকার এ দেশগুলোকে নিয়ে অর্থনৈতিক, পরিকাঠামোগত ও কৌশলগত ক্ষেত্রে যেসব পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল, তার অগ্রগতিও খুবই মন্থর। অভিযোগ, মিয়ানমার-ভারত-থাইল্যান্ডের মধ্যে ১৪০০ কিলোমিটার সড়ক সংযোগ স্থাপনের বিষয়টি চূড়ান্ত হলেও তার অগ্রগতি তেমন নেই। বাংলাদেশও বাণিজ্য ক্ষেত্রে তেমন সুফল পায়নি।
জানা যায়, পারস্পরিক সহযোগিতার প্রশ্নে মোট ১৪টি বিষয়কে শুরু থেকেই চিহ্নিত করা হয়, কিন্তু এতগুলো বিষয় থাকায় সুনির্দিষ্টভাবে কোনো কিছুকেই এগিয়ে নেয়া যায়নি। যোগাযোগব্যবস্থা, বিদ্যুৎ, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পরিবেশ দূষণ, সন্ত্রাস বিরোধিতার মতো মুখ্য বিষয়গুলো পৃথক অগ্রাধিকার পাচ্ছে না।
১৪টি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র
বাংলাদেশের ভূমিকায় ব্যবসা ও বাণিজ্যখাতে সহযোগিতার বিষয়টি অগ্রাধিকারের প্রথম দিকে ছিল। এছাড়া ভারতের মূখ্য ভূমিকায় রাখা হয় পরিবহন ও যোগাযোগখাতে সহযোগিতার বিষয়টি। আর প্রাকৃতিক সম্পদ খাতের সহযোগিতায় গুরুত্ব দেয় মিয়ানমার। পর্যটন খাতের সহযোগিতার দিকটি সামনে আনে ভারত। প্রযুক্তি খাতের গুরুত্ব দেয় শ্রীলংকা। মৎস্যসম্পদ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয় থাইল্যান্ড। পরবর্তী ধাপে আরও কয়েকটি অগ্রাধিকার যুক্ত হয়।
সেগুলোর মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা, জনস্বাস্থ্য, দারিদ্র্য দূরীকরণ, সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ মোকাবেলার দিকটি সামনে আসে। পরিবেশ ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতি, জনসংযোগ, বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ স্থাপন এবং জলবায়ু পরিবর্তনজনিত সংকট থেকে উত্তরণে সহযোগিতায় কর্মপন্থা ঠিক করার ক্ষেত্র নির্ধারণ করা হয়।
এবারের চতুর্থ সম্মেলনে, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা, আঞ্চলিক যোগাযোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যের উন্নয়নের বিষয়ে অংশগ্রহণকারী দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের অলোচনার মূল বিষয়বস্তু হবে বলে মনে করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, বাংলাদেশ, ভারত, মিয়ানমার, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড, ভুটান ও নেপালের নেতৃবৃন্দ সম্মেলনে তাদের তিন বাহিনীর সম্মিলিত সামরিক অনুশীলন এবং একটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়েও মতবিনিময় করবেন।
কতোটা কার্যকর বিমসটেক?
বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়ানোর যে উদ্দেশ্য নিয়ে বিমসটেক সৃষ্টি হয়, সেই উদ্দেশ্য সফল হয়নি বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংক ঢাকা কার্যালয়ের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে তিক্ততা বাড়ায়, নতুন করে হোঁচট খেয়েছে আঞ্চলিক এই ফোরামের কার্যক্রম।
তিনি আরো বলেন, দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ বাড়াতে বিমসটেক গঠন হয়, কিন্তু বহুপাক্ষিক সুবিধার কোনো প্লাটর্ফম এখনও হয়ে ওঠেনি। শ্রীলংকায় বিনিয়োগের সুযোগ কাজে লাগানো যায়নি, মিয়ানমারের সঙ্গেও নৌ বাণিজ্যের সম্ভাবনা ছিল, সে বিষয়েও অগ্রগতি নেই। অর্থাৎ বহুপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
দীর্ঘদিন হয়ে গেলো, কিন্তু হয়নি মুক্ত বাণিজ্য অঞ্চল। বিমসটেক প্রতিষ্ঠার পর যে গতি ছিল, সেই গতি এখন আর নেই বলে মনে করেন গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেম-এর নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান। তিনি বলেন, ধারণা ছিল সাফটা থেকেও বেশি কার্যকর হবে বিমসটেক; কিন্তু দুই বছর আগের চাইতেও গতি হারিয়েছে বিমসটেক। ভারতের কারণে মুক্তবাণিজ্য চুক্তি হয়নি, ভারত আগ্রহ দেখায়নি। ফলে সিদ্ধান্তগুলো এগোয়নি। তবে সার্ক অকার্যকর হওয়ার পর নতুন করে ভারত আগ্রহী হলেও আঞ্চলিক নানাবিধ জটিলতায় তা কতোদূর এগিয়ে যাবে সেটা বলা কঠিন। এবারের সম্মেলনেও তেমন এজেন্ডা নেই।
বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন/কাফী
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]