শিরোনাম
৪৬ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি ব্যাংগাড়ী যুদ্ধক্ষেত্র
প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০১৭, ০৮:২২
৪৬ বছরেও সংরক্ষণ হয়নি ব্যাংগাড়ী যুদ্ধক্ষেত্র
ছবি : ব্যাংগাড়ী মাঠ
শরীফুল ইসলাম, কুষ্টিয়া
প্রিন্ট অ-অ+

আজ ১১ নভেম্বর। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে সবচেয়ে বড় সন্মুখ যুদ্ধ সংগঠিত হয় কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার ধর্মদহ ব্যাংগাড়ীর মাঠে। এলাকাবাসীর কাছে এটা ব্যাংগাড়ীর মাঠের যুদ্ধক্ষেত্র নামে পরিচিত। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমনে ৩ শতাধিক পাক হানাদার বাহিনীর সদস্যরা নিহত হয়। তবে দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৬ বছর পার হলেও সংরক্ষণ করা হয়নি যুদ্ধক্ষেত্রের এ স্থানটি। একদিন ভারি অস্ত্রের মুহুর্মুহু গুলির শব্দে প্রকম্পিত হয়েছিল যে প্রান্তর, সেখানে এখন কেবল আগাছা আর ঝোপ-জঙ্গলে ভরে রয়েছে।


দৌলতপুর উপজেলার আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ধর্মদহ ব্যাংগাড়ীর মাঠ থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার শিকারপুর মুক্তিযুদ্ধ সাব-সেক্টর সদরের দূরত্ব ছিল মাত্র দেড় মাইল। এ সাব-সেক্টরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নভেম্বর মাসের দিকে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনী ওই এলাকায় এক প্রতিরক্ষা বেষ্টনী গড়ে তোলে। কিন্তু অল্পদিনের মধ্যেই এ খবর পৌঁছে যায় পার্শ্ববর্তী পাক হানাদার ক্যাম্পে। আর এ খবর পাওয়ার পর ১১ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর উপর দু’দিক থেকে অতর্কিতে সাঁড়াশি আক্রমণ শুরু করে পাক হানাদার বাহিনী। তবে রাত-দিন ধরে চলা এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারাই জয়ী হন।


যুদ্ধে পাক বাহিনীর অসংখ্য সদস্য নিহত হয়। তবে পাক বাহিনী ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা সোহরাব উদ্দিন, শহিদুল ইসলাম ও মসলেম উদ্দিন এবং মিত্র বাহিনীর ৩ সদস্যকে জীবিত ধরে নিয়ে যায়। মিত্র বাহিনীর ৩ সদস্যকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ফেরত দিলেও মুক্তিযোদ্ধাদের সন্ধান আজও পাওয়া যায়নি।


যুদ্ধে অংশ নেয়া ধর্মদহ গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা রুস্তম আলী সেদিনের যুদ্ধের স্মৃতি বর্ননা করতে গিয়ে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। তিনি জানান, জীবনবাজি রেখে সেদিনের সেই সন্মুখ যুদ্ধে অংশ নিয়ে আজও বেঁচে আছি। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার ৪৬ বছর পার হলেও আজও সংরক্ষণ করা হলো না যুদ্ধক্ষেত্রের এ স্থানটি। শুধুমাত্র আনারুল ইসলাম নামে স্থানীয় এক ইউপি সদস্য মুক্তিযুদ্ধক্ষেত্র ব্যাংগাড়ী মাঠের ত্রি-মোহনায় একটি স্মৃতিফলক নির্মাণ করেছেন। যা দেখে অন্তত নতুন প্রজন্ম জানতে পারে ঐতিহাসিক এ স্থানের গৌরবগাঁথা ইতিহাস।


মুক্তিযুদ্ধের এ গৌরবগাঁথা স্মৃতি সংরক্ষণে এ পর্যন্ত কোন উদ্যোগই নেয়া হয়নি। তাই যুদ্ধ ক্ষেত্রের স্থানটি ছেয়ে গেছে ঝোপ-জঙ্গল আর আগাছায়। সেখানে স্মৃতি সৌধ নির্মানের জন্য বর্তমান সরকারের কাছে দাবী জানিয়েছেন দৌলতপুর সাবেক দৌলতপুর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কামাল হোসেন দবির।


তিনি আরও জানান, সেদিন যুদ্ধে ৩ শতাধিক পাক সেনা সদস্য নিহত হয় এবং মিত্র বাহিনির ২ সদস্য শহীদ হোন। আজও যুদ্ধ ক্ষেত্রের এ স্থানটি কেন সংরক্ষণ করা হয়নি তা নিয়েও তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।


মুক্তিযুদ্ধের গৌরবগাঁথা ইতিহাস ভবিষ্যৎ নতুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে সরকার দ্রুত ব্যাংগাড়ীর মাঠের যুদ্ধ ক্ষেত্রের স্মৃতি সংরক্ষণে ব্যবস্থা নেবে এমনটায় দাবি স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাসহ এলাকাবাসীর।


বিবার্তা/শরীফুল/ইমদাদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com