নড়াইলে দেশি মাছের শুঁটকি নিয়ে বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এক যুগ আগে থেকেই স্থানীয় জেলেরা সল্প পরিসরে এখানে শুঁটকির উৎপাদন শুরু করেন। লাভ ভাল হওয়ায় দিন দিন শুঁটকি উৎপাদন বাড়ছে। স্থানীয় এসব শুঁটকি দেশের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি রফতানি হচ্ছে ভারতে।
ইতোমধ্যে নড়াইলের এই শুটকির সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে দেশের বাইরের বিভিন্ন দেশে। এতে লাভবান হচ্ছেন নড়াইলের শুটকি ব্যবসায়ীরা। এ বছর সাড়ে তিন হাজার মন শুঁটকি উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে মৌশুম শুরু হওয়ায় ২ মাস আগে থেকে কর্মব্যস্ততা বেড়ে গেছে শুটকি ব্যবসায়ের সাথে জড়িত শতাধিক নারী পুরুষের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, নড়াইল সদর উপজেলার সোলুয়ার বিলে খাল পাড়ে গড়ে উঠেছে দেশি পুঁটি মাছের শুঁটকী পল্লী। প্রতিদিন বিভিন্ন বিল-খাল থেকে দেশি পুঁটি এনে রোদে মাচা বা চাতালে শুকানো হচ্ছে। এখানে কাজ করছে এলাকার নারী-পুরুষ মিলে। ভাল মূল্যে এসব মাছ জেলার বাইরে এবং ভারতে রফতানি হচ্ছে। শুঁটকির খরচ কম হওয়ায় এবং লাভ বেশি হওয়ায় প্রতি বছর এ ব্যবসার পরিধি বাড়ছে বলে জানালেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
সদর উপজেলার কল্যাণখালি গ্রামে গড়ে উঠে এ শুটকি পল্লী। ১৩ বছর আগে কল্যাণখালি গ্রামের অলোক মালো স্থানীয় সোলুয়া, আড়ংগাছাসহ কয়েকটি বিলে প্রাকৃতিকভাবে দেশি পুঁটি মাছের ব্যাপক উৎপাদনের সুবাদে শখের বশে পুঁটি শুঁটরির ব্যবসা শুরু করেন। সেই থেকে এখানে এই ব্যবসা শুরু।
এখন নড়াইল ছাড়াও মাদারিপুর, ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ ও মাগুরা জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা এ ব্যবসা করছেন।
জেলেরা জানান, প্রথমে হাট-বাজার থেকে মাছ কিনে এনে খালের পানিতে ধুয়ে বাঁশের মাচা করা চাতালে এক সপ্তাহ থেকে পনের দিন শুকাতে হয়। তারপর বস্তাবন্দি করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয়। বাংলা কার্তিক মাস থেকে শুরু করে সাড়ে চার মাস এই ব্যবসা চলে।
স্থানীয় কল্যাণখালি গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী অলোক মালো জানান, গত বছর তিনি নিজে ২৫০ মণ দেশি পুঁটি মাছ শুকিয়েছেন। এ বছরও তিনি ২ মাস আগে থেকে এই মাছ শুকাচ্ছেন। খুলনা, গোপালগঞ্জ, মাদারিপুরসহ বিভিন্ন জেলার ব্যাপারিরা এসে এ মাছ কিনে নিয়ে যান। আর বিভিন্ন জেলার এই ব্যবসায়ীরা বাছাই করে বড় ভাল মানের বড় মাছ ভারতে রফতানি করেন। ভারতে এই মাছের চাহিদা অনেক বেশি।
তিনি আরো জানান, কাঁচা মাছ প্রতি মণ ৫শ থেকে শুরু করে ৫ হাজার টাকায় ক্রয় করেন এবং শুকিয়ে সাড়ে ৬ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা মন বিক্রি করে থাকেন।
মাদারিপুরের মাছ ব্যবসায়ী ফারুক বলেন, আমি প্রতি বছর এখানে চলে আসি। এ বছরও প্রায় আড়াই মাস আগে কর্মীসহ ছয়জন এসেছি। এখানের পরিবেশ খুবই ভাল। কোনো সমস্যা নেই। ব্যবসা মাঘ মাস পর্যন্ত চলবে। আমরা এসব মাছ নড়াইল থেকে আগে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নিয়ে যাই। তারপর সেখান থেকে ভারতে পাঠাই। ভারতের কয়েকটি বাজারে আমাদের এই শুটকির বেশ চাহিদা রয়েছে। খরচ-খরচা বাদে লাভ ভাল থাকে বলে জানান তিনি।
গোপালগঞ্জ জেলার মোকছেদপুর এলাকার ব্যবসায়ী শহিদুল বিশ্বাস বলেন, মাছ শুকানোর পর মাছের সাধারণত ছোট-বড় দুটি গ্রেডে ভাগ করা হয়। বড় গ্রেডের মাছের দাম বেশি। ছোট গ্রেডের মাছের দাম কিছুটা কম। বড় গ্রেডের বেশির ভাগ মাছ বিদেশে রফতানি করা হয়। ভারতে এই মাছের চাহিদা অনেক বেশি।
মাগুরার ব্যবসায়ী মিরাজুল বিশ্বাস জানান, আমি অনেক দিন যাবৎ এই ব্যবসার সাথে জড়িত। এখানে আমার কোনো জমি নেয়। স্থানীয় কৃষকের কাছ থেকে ৬ মাসের জন্য জমি লিজ নিয়ে ১০টি মাচাইল পেতে মাছ শুকিয়ে সেই মাছ বিক্রয় করি। এ ব্যবসায় প্রতি বছর কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করতে হয়। আমরা এ ব্যবসা করে খুবই খুশি।
ফরিদপুরের মুসা ব্যাপারি বলেন, সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক নিয়মে এ শুটকি করা হয়। কোনো প্রকার মেডিসিন ব্যবহার করা হয় না। তাই এই মাছের চাহিদা অনেক বেশি। প্রতি বছর এখানে আনুমানিক ৫ কোটি টাকার লেনদেন হয়। ভারতে এই মাছের চাহিদা দিন দিন বেড়ে যাওয়ায় তিনি অনেক খুশি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা হরিপদ মণ্ডল জানান, প্রতিবছর নড়াইলের বিল, খাল ও বিভিন্ন নদী থেকে অনেক দেশিয় প্রচুর মাছ ধরা পড়ে। বর্তমানে জেলার বিভিন্ন জায়গায় এই মাছ শুকানো হচ্ছে। আর এই মাছের চাহিদা দেশের বাজারে অনেক বেশি, এখানের মাছ ভারতেও রফতানি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ভারতেও আমাদের এখানের শুটকির সুনাম অর্জিত হয়েছে। আমরা মৎস অফিসের পক্ষ থেকে শুটকি পল্লির জেলেদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি।
বিবার্তা/শরিফুল/জাকিয়া
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]