শিরোনাম
পাখির স্বপ্নের ঘরে তারুণ্য
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৭, ১৫:০৫
পাখির স্বপ্নের ঘরে তারুণ্য
মোল্লা তোফাজ্জল, টাঙ্গাইল
প্রিন্ট অ-অ+

‘পাখি-সব করে রব, রাত্রি পোহাইলো’ ছড়াটি বইয়ের পাতার মধ্যেই বিদ্যমান। ছড়ার মতো পাখির শব্দে এখন আর কারো ঘুম ভাঙ্গে না। গাছে গাছে পাখির কলরবও শোনা যায় না। গ্রামগঞ্জে নানা প্রজাতির পাখির দেখাও খুব বেশি মিলেনা। সময়ের পরিবর্তন ও জলবায়ুর বিবর্তনে হঠাৎ করেই সেই পাখি গুলো হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামঞ্চল থেকে।


হারানো সেই পাখিগুলো ফিরিয়ে আনতে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার আটিয়া ইউনিয়নের কয়েকজন যুবক মিলে নিয়েছে ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ। গাছে গাছে মাটির কলসি বেঁধে দিয়ে পাখিদের জন্য তৈরি করছেন তারা নিরাপদ আবাসস্থল। তাদের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছে এলাকার সাধারণ মানুষ এবং উপজেলা প্রশাসন।


পাখির নীড় তৈরির উদ্দ্যোক্তা তালহা আহামেদ সাজু জানান, একসময় গ্রামের মানুষেরা পাখির কলরবের শব্দে ঘুম থেকে উঠতো। হঠাৎই গ্রাম থেকে হারিয়ে যাওয়ার পথে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। সেই ভাবনা থেকেই আমরা গ্রামের কয়েকজন যুবকের এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। নিজেদের অর্থ দিয়ে কিনে গাছে গাছে বেধে দেই মাটির কলসি।


স্বপ্নবাজ সাজু আরো জানান, প্রথমে তিনশত কলসি গাছে গাছে বেধে দেয়ার মাধ্যমে আমাদের যাত্রা শুরু হয়। পরে ধীরে ধীরে এক হাজার পাচঁশত কলসি ইউনিয়নের বিভিন্ন গাছে লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু করেছি। মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে চোখে পড়েছে বিলুপ্ত কয়েকটি জাতের পাখি। যেমন দোয়েল, শালিক, চড়–ই, টুনটুনি, জালালী কবুতর, ঘুঘু, টগা ইত্যাদি। এসব পাখির কলকাকলিতে ভরে উঠেছে আমাদের গ্রাম। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য দেখে আমাদের ইচ্ছা শক্তি আরো বেড়েছে। আমরা চাই আমাদের মতো দেশের প্রতিটি গ্রামের তরুণরা এমন উদ্যোগ গ্রহণ করুক। যাতে আমাদের প্রাকৃতিক সমাজ থেকে পাখি হারিয়ে না যায়।


শরিফুল ইসলাম ও আমিনুর রহমান নামের দুজন উদ্যোক্তা জানান, আমাদের ইচ্ছা শুধু আটিয়া নয় পুরো দেলদুয়ার উপজেলা হোক পাখিদের নিরাপদ বাসস্থানের অভয়ারণ্য। আমরা চাই দেলদুয়ার থেকে আমরা তরুনরা যে উদ্দ্যোগ গ্রহন করেছি তা ছড়িয়ে পড়–ক সারাদেশ। পাখি ফিরে পাক তার শান্তির নিরাপদ নীড়। সেই সাথে যদি আমরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাই তাহলে পুরো দেলদুয়ার উপজেলাকে পাখির জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল বানাতে পারবো। যা হবে দেশের অন্যান্য যুবকদের জন্য দৃষ্টান্ত। যুবকরা যদি এভাবে পাখিদের বাঁচাতে এগিয়ে আসে তাহলে হয়তবা গ্রামবাংলার সেই পুরনো চিত্র আবার ফিরে আসবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।


এলাকার পাখি প্রেমিকরা বলছেন, আগে যেসকল পখি আমরা দেখতাম তা এখন আর চোখে পড়েনা। তবে এলাকার যুবকরা পাখি সংরক্ষনের জন্য যে আবাসন তৈরী করেছে তা সবার নজড় কেড়েছে। তাদের এ উদ্যোগের কারনে অনেক পাখি আবার ফিরে আসছে। আমরা চাই এই ধারাবাহিকতা বজায় থাকুক। পাশাপাশি সরকার তাদের এমন মহৎ কাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিক।


আটিয়ার যুব সমাজকে এমন ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহন করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে আটিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম মল্লিক বলেন, গ্রামবাংলা থেকে পাখি এখন হারিয়ে যাচ্ছে। যুব সমাজ পাখির নীড় তৈরিতে যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এ কাজের পৃষ্ঠপোষকতায় তরুণ সমাজের সাথে সার্বিক সহযোগীতা করে যাবো।


এব্যাপারে কথা হয় দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, সাবিনা ইয়াসমিন এর সাথে। তার ভাষ্য, আটিয়া গ্রামের স্থানীয় যুবকরা মিলে পাখিদের বাসস্থল তৈরির জন্য গাছে গাছে হাড়ী বেধে যে উদ্যোগ নিয়েছে তা আমি শুনেছি। আমি অবশ্যই তাদের এ ব্যতিক্রম উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানাই। আমাদের প্রাকৃতিক ভারসাম্য ও জিব বৈচিত্র রক্ষায় তাদের এই উদ্যোগ অভাবনীয় এবং এটা অনেকের মাঝে প্রশংসা পেয়েছে। আমি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে অবশ্যই তাদেরকে সহযোগীতা করবো।


উপজেলা প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আবদুল মোতালেব বলেন, আটিয়ার কয়েকজন যুবক পাখি সংরক্ষনের যে ব্যবস্থা নিয়েছে এটা অত্যন্ত প্রশংসনিয়। আমি তাদের এ উদ্যোগ কে সাধুবাদ জানাই। আমাদের বিলুপ্ত প্রায় পাখি গুলো সংরক্ষণের জন্য এধরনের উদ্যোগ সবার দৃষ্টি করবে বলে আশা করছি। আমাদের প্রানি সম্পদ অধিদপ্তর পক্ষ থেকে যতদুর সম্ভব সার্বিক সহযোগীতা করবো।


বিবার্তা/তোফাজ্জল/ইমদাদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com