শিরোনাম
শাবানার অপেক্ষায় বাংলাদেশ...
প্রকাশ : ২৫ মে ২০১৭, ১৮:২৫
শাবানার অপেক্ষায় বাংলাদেশ...
অভি মঈনুদ্দীন
প্রিন্ট অ-অ+

একটি ঘোষণার পর থেকেই বাংলাদেশের অসংখ্য দর্শক তাদের প্রিয় নায়িকা শাবানাকে আর একবার দেখার অপেক্ষায় প্রতীক্ষার প্রহর গুণছেন। ২০১৫ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে ‘আজীবন সম্মাননা’য় ভূষিত হবেন জনগণ নন্দিত নায়িকা শাবানা। জুরি বোর্ড মনে করেছে, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে তাকে ‘আজীবন সম্মাননা’য় ভূষিত করার এটাই চুড়ান্ত সময়। এখন শুধু প্রতীক্ষার প্রহর গোণা শাবানার নিজ হাতে এই সর্বোচ্চ সম্মাননা গ্রহণের। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের জীবন্ত কিংবদন্তী শাবানাকে নিয়ে বিশেষ এই প্রতিবেদনটি তৈরী করেছেন অভি মঈনুদ্দীন।


আমার সাংবাদিকতার শুরুটাই চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা দিয়েই। যদি সত্য কথা বলি তাহলে বলতে হয়, আমার মধ্যনগর প্রাইমারি স্কুল, সিলেট ক্যাডেট কলেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধুরা ভালো করেই অবগত যে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে সেই ছোটবেলা থেকে আমি কতোটা ভালোবাসি। যে চলচ্চিত্রাঙ্গনে নায়করাজ রাজ্জাক, শাবানা, আলমগীর, কবরী, বুলবুল আহমেদ, ফারুক, ববিতা, সোহেল রানা, উজ্জ্বলের মতো নায়ক-নায়িকারা আছেন সেখানেই পেশাগতভাবে নিজেকে সম্পৃক্ত করার স্বপ্ন ছিলো আমার। আজ ভাবি, কী সৌভাগ্য আমার! জীবনের কতো স্বপ্ন যে মুকুলেই ঝরে যায়! আর আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।


আজ থেকে প্রায় দেড় যুগ আগে নায়করাজ রাজ্জাকের সাক্ষাৎকার নিয়েই আমার চলচ্চিত্র সাংবাদিকতা শুরু। কিন্তু দুঃখ, যখন আমি সাংবাদিকতা শুরু করি তখন শাবানা চলচ্চিত্র থেকে বিদায় নিয়েছেন। তাই তার সঙ্গে কথা বলার সৌভাগ্য আজো হয়নি আমার। তবে তার সম্পর্কে জানার সুযোগ হয়েছে আমার।


সবার মতো আমিও জেনেছি, ১৯৬২ সালে এহতেশাম পরিচালিত ‘নতুন সুর’ চলচ্চিত্রে ছোট্ট এক মেয়ের ভূমিকায় শাবানা প্রথম অভিনয় করেন। তখন তার নাম ছিলো আফরোজা সুলতানা রত্না। রত্না নামেই মুস্তাফিজের ‘তালাশ’, ‘পয়সে’, এহতেশামের ‘সাগর’, মুস্তাফিজের ‘মালা’, কাজী জহিরের ‘ভাইয়া’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। সহ-নায়িকা হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান ইবনে মিজানের ‘আবার বনবাসে রূপবান’ ও মুস্তাফিজের ‘ডাকবাবু’ চলচ্চিত্রে।


‘ডাকবাবু’ মুক্তির পরপরই এহতেশাম সিদ্ধান্ত নিলেন রত্নাকে নায়িকা করে চলচ্চিত্র নির্মাণের। সিদ্ধান্ত অনুসারে বিপরীতে নাদিমকে নিয়ে রত্নাকে ''শাবানা'' নাম দিয়ে এহতেশাম নির্মাণ করলেন ‘চকোরী’ চলচ্চিত্রটি। ১৯৬৭ সালের চতুর্থ চলচ্চিত্র হিসেবে মুক্তিপ্রাপ্ত উর্দু ভাষায় নির্মিত ‘চকোরী’ চলচ্চিত্রটি সে সময় হৈ চৈ ফেলে দেয়।


এরপর শাবানা অসংখ্য চলচ্চিত্রে অনবদ্য অভিনয় করে দর্শকের মনে চিরদিনের শাবানা হিসেবেই স্থান করে নিয়েছেন। ১৯৯৮ সাল থেকে চলচ্চিত্র থেকে অনেক দূরে সরে গেছেন তিনি। সর্বোচ্চ বারো বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া সেই দূরের শাবানাকে আমাদের কাছে নিয়ে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা এবং রাষ্ট্রের প্রতি শাবানার অবদানকে সম্মান জানাতেই রাষ্ট্র তাকে ‘আজীবন সম্মাননা’য় ভূষিত করতে যাচ্ছে।


শাবানার সঙ্গে বহু চলচ্চিত্রে জুটিবদ্ধ হয়ে অভিনয় করেছেন স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত নায়করাজ রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘আমি সত্যিই শাবানার এই খবরে অন্তর থেকে অনেক খুশি হয়েছি। একজন শাবানা হতে তিনি অনেক কষ্ট করেছেন, সংগ্রাম করেছেন, নিঃস্বার্থভাবে তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। তাকে রাষ্ট্র যে সম্মাননা দিচ্ছে তাতে সত্যিই আমি খুব খুশি। শাবানার সঙ্গে আমি প্রথম মুস্তাফিজের 'পায়েল' চলচ্চিত্রে অভিনয় করি। ১৯৭০ সালে কিউ এম জামানের নির্দেশনায় 'ছদ্মবেশী’তে আমার নায়িকা হন। এরপর 'মধুমিলন', 'অবুঝ মন’সহ অসংখ্য চলচ্চিত্রে কাজ করেছি আমরা। আমার প্রযোজনায় প্রথম 'চাঁপাডাঙ্গার বউ’ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। জুরি বোর্ড তাকে আজীবন সম্মাননার জন্য নির্বাচিত করায় জুরি বোর্ডকেও সাধুবাদ জানাই।’


বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সর্বাধিক জুটি হিসেবে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন আলমগীর-শাবানা। আলমগীর বলেন,‘শাবানা ম্যাডামকে আমি চিনি ১৯৭২ সাল থেকে। ১৯৭২ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত আমরা একসঙ্গে ১০৫/১০৬টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। এর মধ্যে আমরা রোমান্টিক জুটি হিসেবে ৮০ থেকে ৮৫টি এবং প্রধান চরিত্রে বাকী চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছি। এটাকে জুটি বলে কী না আমি জানি না। তাকে আমি যতোটুকু দেখেছি, তিনি অনেক কষ্ট করে, অনেক সাধনা করে, অনেক ঘাম ঝরিয়ে শাবানা হয়েছেন। তার এই কষ্ট, এই সাধনা, এই একাগ্রতা দিয়ে যে দৃষ্টান্ত তিনি স্থাপন করেছেন, এটা পূরণ করার ক্ষমতা আর কোন শিল্পীর হবে কী না আমার সন্দেহ আছে। তাই এককথায় বলতে হয়,শাবানার তুলনা শাবানাই’।


একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামান বলেন,‘ বাংলাদেশে যতো নায়ক-নায়িকা আছেন তাদের মধ্যে অন্তরের দিক দিয়ে শাবানা সবচেয়ে বড় মনের একজন মানুষ, একজন ভালো মানুষ। শাবানা প্রযোজিত প্রথম চলচ্চিত্র আজিজুর রহমান পরিচালিত 'মাটির ঘর'-এর কাহিনী, সংলাপ, চিত্রনাট্য আমারই লেখা ছিলো।’


বরেণ্য চলচ্চিত্রনির্মাতা মতিন রহমান বলেন, ‘আমার নির্দেশনায় শাবানা তিনটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। বাঙ্গালী নারীর সকল রূপের সফল প্রতীক হচ্ছেন শাবানা। ’


ববিতা বলেন,‘ শাবানা আপা আজীবন সম্মাননা পাচ্ছেন জেনে আমি খুব খুশি হয়েছি। যারা যোগ্য তাদেরকে রাষ্ট্রের সম্মাননা জানানো উচিত।’


চিত্রনায়ক বাপ্পারাজ তার প্রথম চলচ্চিত্রেই শাবনাকে পেয়েছেন। তিনি বলেন,‘ শাবানা আন্টি আমাকে তার নিজের সন্তানের মতোই আদর করতেন। কাজের সময় তিনি বুঝতেই দিতেন না যে তিনি এতো বড় মাপের একজন শিল্পী। তার মতো নিরহংকারী নায়িকা বাংলাদেশে আমি আর দেখিনি। তাই মা’রূপী শাবানা আন্টিকে খুব মিস করি।’


চিত্রনায়ক নাঈম বলেন, ‘শাবানা আপা অন্যরকম একজন মানুষ। তাকে ভীষণ মিস করি।’


শাবনাজ বলেন,‘ শাবানা আপা আমাদের পরিবারেরই একজন। শুটিং স্পটে কখনোই মন খারাপ করে থাকতে দিতেন না তিনি।’


চিত্রনায়ক ওমর সানী বলেন, 'শাবানা আপার সঙ্গে চলচ্চিত্রে অভিনয় করেই আমার শিল্পী জীবন সার্থক হয়েছে।’


প্রিয়দর্শিনী মৌসুমী বলেন, 'শাবানা এমনই একটি নাম, যে নামটি উচ্চারণ করি আমি অনেক শ্রদ্ধা নিয়ে, যে নামটি উচ্চারণ করতেও আমি ভয় পাই। আমার পরম সৌভাগ্য যে তার সঙ্গে অভিনয় করতে পেরেছি। শুটিংয়ের সময় আমি শুধু তাকে ফলো করতাম। তিনি কোনো দৃশ্যে আমাকে ছুঁবেন, আমার মাথায় হাত রাখবেন - মনে হতো এটাই যেন অনেক বড় পাওয়া। শাবানা আপা অনেক ধৈর্য্যশীল একজন শিল্পী, যা আমি আর কারো মাঝেই দেখিনি। শাবানার বিকল্প শাবানাই। আমি কখনোই মৌসুমী হতে পারতাম না যদি শাবানা আপার সান্নিধ্যে অভিনয়ের সুযোগ না পেতাম।’


তিনবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়িকা পপি বলেন, 'আমি শাবানা ম্যাডামের সঙ্গে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করার সুযোগ পেয়েছি। আর এটাই আমার চলচ্চিত্র জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।’


চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা বলেন, 'আমার চলচ্চিত্র জীবনের সবচেয়ে বড় অপ্রাপ্তি শাবানা আপার সঙ্গে অভিনয় করতে না পারা।’


বিবার্তা/মৌসুমী/হুমায়ুন

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com