জয়নাল আবেদীন (৬০) গত ১২ বছর ধরে বসবাস করছেন রাজধানীর কড়াইল বস্তিতে। তিনি পেশায় একজন সিকিউরিটি গার্ড। স্ত্রী ও দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি সুখে-দুঃখে দিন কাটাচ্ছিলেন। কিন্তু বুধবার রাতে তার সব সুখ এবং স্বপ্ন ধ্বংস হয়ে গেছে।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন জানান, ওই বস্তিতে বসবাস করে বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়েকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। অভাবের ওই সংসারে অনেক কষ্টে কিছু সম্পত্তি করেছিলেন। কিন্তু আগুনে প্রায় দেড় লাখ টাকার মালামালসব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
এক পর্যায়ে হাউমাউ করে কান্না করে তিনি বলেন, বাবা কি বলবো, জীবনে যা বাইনিয়েছিলাম তা সবই পুড়ে গেছে।
শুধু জয়নাল নন, তার মতো কয়েক হাজার নিম্ন আয়ের মানুষ এখন নিঃস্ব হয়ে গেছে।
জানা গেছে, বুধবার রাত পৌনে তিনটার দিকে কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ২০টি ইউনিট প্রায় ৫ ঘন্টা সময় ব্যয়ে করে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে তার আগেই বস্তির কয়েকশ ঘর ও দোকান পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
বৃহস্পতিবার দুপুরে পোড়া বস্তিতে গিয়ে দেখা গেছে, পোড়া দোকান ও ভিটার উপর বসে নীরবে কান্না করছে অনেক মানুষ। আবার অনেককে বাকরুদ্ধ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে অনেকেই কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে।
বস্তিবাসী জানায়, গভীর রাতে সবাই যখন ঘুমে, তখনই আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যে পুরো বস্তিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এতে বস্তিবাসী কেউ ঘর থেকে কিছু বের করতে পারেনি। শুধু নিজেরাই প্রাণে বেঁচে আছেন। কিভাবে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে, এ ব্যাপারেও কেউ কিছু বলতে পারেনি।
তারা জানায়, বস্তিতে কয়েক শ' বসতঘর ও শতাধিক দোকান ছিল। সবই এখন পুড়ে ছাই।
কুমিল্লার মনির মিয়া একজন পোশাক শ্রমিক। ছেলে-মেয়ে ও স্ত্রীকে নিয়ে তিনি প্রায় ১০ বছর থেকে ওই বস্তিতে বসবাস করছেন। তিনি বলেন, আমি ২ হাজার টাকা ভাড়ায় একটি ঘরে থাকতাম। রাতে হঠাৎ শুনতে পাই আগুন লাগছে। ঘুম থেকে উঠে দেখি আমার রুমেও ধোঁয়া। পরে শুধু নিজেরা দৌঁড়ে বের হয়ে প্রাণ রক্ষা করেছি। আর কিছুই আনতে পারি নাই।
তিনি জানান, তার প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।
জোস্না বেগম নামের এক নারী জানান, ১৫ দিন আগে একটি ফ্রিজ কিনেছিলাম। এছাড়াও তার ঘরে আরো কিছু মূল্যবান আসবাবপত্র ছিল। আগুনে সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে।
জুঁই নামের এক মধ্যবয়সী নারী জানান, নগদ টাকাসহ প্রায় ৫০ হাজার টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদের।
এদিকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত বা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানতে চাইলে ফায়ার সার্ভিসের ডিউটি অফিসার আতাউর রহমান বলেন, বস্তিতে কয়েক শত ঘর পুড়ে গেছে। তবে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কিভাবে হয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। তথ্য অনুসন্ধানের জন্য তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, কয়েক মাস আগে গত বছরের ৪ ডিসেম্বরও কড়াইল বস্তিতে আগুন লাগে। সেবার প্রায় সাড়ে ৪শ’ ঘর পুড়ে যায়। তারও আগে একই বছরের গত ১৪ মার্চ ওই বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডে অর্ধশত ঘর পুড়ে যায়। অর্থাৎ এক বছরের মধ্যে কড়াইল বস্তিতে তিন বার আগুন লাগলো।
বিবার্তা/খলিল/মৌসুমী/হুমায়ুন
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]