ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এর আবাসিক হলগুলোতে শিক্ষার্থীরা অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে। অধিকাংশ আবাসিক হলে অগ্নি নির্বাপণের জন্য নেই কোনো উন্নত সরঞ্জাম। শুধু তাই নয়, অগ্নিনির্বাপক গ্যাস, পাউডার সিলিন্ডার, হিটার ও ওয়ার্নিং অ্যালার্মের মতো প্রাথমিক ব্যবস্থাও এখানে নেই।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু ভবনে অগ্নিনির্বাপক সিলিন্ডার ঝুলানো থাকলেও সেগুলো মেয়াদোত্তীর্ণ। এই অবস্থায় অগ্নিকাণ্ড ঘটলে ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা করছে আবাসিক শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা বলছেন, বঙ্গবাজারে আগুন নিয়ন্ত্রণে দীর্ঘসূত্রিতা ও সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার্স ক্লাবে আগুন আগাম সংকেত দেয় আবাসিক শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়ে।
সরেজমিনে আরও দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮টি হলের মধ্যে ছেলেদের ১৩টি, মেয়েদের ৫টির মধ্যে অধিকাংশ হলেই অগ্নি নির্বাপণের জন্য নেই প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম। বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, কবি জসীম উদদীন হল, স্যার এ এফ রহমান হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে অগ্নি নির্বাপণের কোনো সরঞ্জাম নেই। অন্যান্য হলে অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার থাকলেও সেগুলোরও রিফিলিংয়ের সময় দুইবছর আগে শেষ হয়েছে।
কবি জসীম উদদীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী শরীফ বিবার্তাকে জানান, অন্যান্য হলে অগ্নি নির্বাপক সিলিন্ডার থাকলে আমাদের হলে কোনো সরঞ্জাম নেই। আমরা যে অনেক শিক্ষার্থী এখানে আছি- পরিবারের হাজারো আশা ও প্রত্যাশা নিয়ে পড়াশোনা করতেছি, যে কোনো সময়ই এখানে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কাজেই প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ অগ্নি নির্বাপণের জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম মজুদ রাখা এবং সেগুলো সক্রিয় রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
স্যার এ এফ রহমান হলের শিক্ষার্থী জাহিদ বিবার্তাকে বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে অগ্নিকাণ্ডের পরিপ্রেক্ষিতে স্যার এ এফ রহমান হলে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের যে অপর্যাপ্ততা তা নিয়ে আবাসিক শিক্ষার্থী হিসেবে আমি শঙ্কিত। আমি মনে করি, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে দুর্ঘটনা এড়াতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রের বিষয়টা খতিয়ে দেখা উচিত।
হলগুলোতে অগ্নি নির্বাপক সরঞ্জাম না থাকার বিষয়ে অবগত করে মন্তব্য জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বিল্লাল হোসেন বিবার্তা বলেন, আমি সবসময়ই চেষ্টা করেছি হলের সার্বিক কল্যাণে কিন্তু এই বিষয়টা আমার দৃষ্টির বাইরে ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হিসেবে প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সতর্ক থাকা উচিত আগুনের সূত্রপাত হতে পারে, এমন সোর্স থেকে। আমি আশ্বস্ত করতেছি যে শিক্ষার্থীদের, আমি সর্বাত্মক চেষ্টা করব অগ্নি নিবারণের সরঞ্জামসমূহ ব্যবস্থা করার।
হাজী মুহাম্মদ মহসীন হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. মাসুদুর রহমান বির্বাতাকে বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় ও সচেতনতা সৃষ্টিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা আছে। সেই আলোকে আমরা হলগুলোতে অগ্নিনির্বাপক মেশিন এবং অন্যান্য সরঞ্জাম রাখার চেষ্টা করি। পাশাপাশি আমরা ফায়ার সার্ভিস সিভিল ডিফেন্সের সাথে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি। আমাদের হলের বিভিন্ন ক্লাবের মাধ্যমে আমরা এই বিষয়ে ছাত্রদের সচেতন করার চেষ্টা করি। প্রাথমিকভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা করার জন্য আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের সীমিত বাজেটের মাধ্যমে সংগ্রহ এবং রক্ষণাবেক্ষণ করার চেষ্টা করি। কিন্তু এই জিনিসগুলো অনেক ব্যয়বহুল, জননিরাপত্তার খাতিরে এবং আবাসিক হলগুলোতে অনেক শিক্ষার্থী অবস্থান করে তাদের সামগ্রিক নিরাপত্তার খাতিরে এই ক্ষেত্রে বাজেট বরাদ্দ বাড়ান এবং প্রতিনিয়ত তদারকির ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
শহিদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের প্রাধ্যক্ষ ড. মো. আবদুর রহিম বিবার্তাকে বলেন, ছাত্রদের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে, যেকোনো সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সৌন্দর্য্য বজায় রাখতে ছাত্র, শিক্ষক ও প্রশাসনকে একত্র হয়ে কাজ করে যেতে হবে।
সার্বিক বিষয়ে অবগত করে এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মো. আখতারুজ্জামান বিবার্তাকে বলেন, এক্ষেত্রে আমাদের সক্ষমতা ও সামর্থ্য খুবই দুর্বল, এতে কোনো সন্দেহ নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও প্রশাসনিক ভবনগুলোতে সচেতনতা সৃষ্টিতে ফায়ার সার্ভিসের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ ও সচেতন মহড়া চলবে। তবে যে বিষয়ে সচেতন করা যায় তা হলো, বিদ্যুৎ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র ও গ্যাসের ব্যবহারে সচেতন হতে হবে।
বিবার্তা/ফারুক/রাসেল/রোমেল/এমএ
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]