মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি: ঢাবি অধ্যাপক ইমতিয়াজের শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদের ঝড়
প্রকাশ : ০৭ এপ্রিল ২০২৩, ১২:৪৯
মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি: ঢাবি অধ্যাপক ইমতিয়াজের শাস্তির দাবিতে প্রতিবাদের ঝড়
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

১৯৭১ সালের ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের ভাষণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘জয় বাংলা’ বলার পর ‘জয় পাকিস্তান’ বলে তার ভাষণ শেষ করেছিলেন। কাজেই বঙ্গবন্ধু সেই অর্থে স্বাধীনতা চাননি। মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারী এমন দুঃসাহসিক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ কথাটি লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ। যিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোসাইড সেন্টারের পরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন।


অভিযুক্ত এই শিক্ষক নিজের লেখা ‘হিস্টোরাইজিং ১৯৭১ জেনোসাইড: স্টেট ভার্সেস পারসন’ নামক বইয়ের ৪০ পৃষ্ঠায় ধিক্কারজনক এই উক্তিটি লিখেছেন। এদিকে ‘ইনডেপেন্ডেন্স’-এর বাংলা শব্দ স্বাধীনতা হলেও, এই শব্দটির একাধিক অর্থ হতে পারে, এমন সব ব্যাখা দাঁড় করিয়ে স্বাধীনতাকেও কটাক্ষ করেছেন এই অধ্যাপক। শুধু তাই নয়,অধ্যাপক ইমতিয়াজ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি চরম অবমাননা করে শহিদদের সংখ্যা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তার এমন দুঃসাহসিক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ লেখনীর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। উঠেছে তার শাস্তির দাবিও।



তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়,সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক অধ্যাপক ইমতিয়াজের ২০০৯ সালে প্রকাশিত বইটিতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ এনে গণমাধ্যমে একটি মতামত কলাম লেখেন। এরপর এই বিষয়টি সামনে আসে।



The University Press Limited (UPL) থেকে প্রকাশিত অধ্যাপক ইমতিয়াজের "Historicizing 1971 Genocide: State Versus Person" বইটি পর্যালোচনা করে জানা যায়, বইয়ের ৪০ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন- ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার জন্য সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নিজে হাজির হয়ে বঙ্গবন্ধুকে ‘জয় পাকিস্তান’ বলতে শুনেছেন। ইংরেজি ভাষায় লেখা তার বইয়ের উল্লিখিত অংশ বাংলায় তরজমা করলে যা দাঁড়ায়, তা হলো:



"পাকিস্তান শেখ মুজিবের ৭ই মার্চের ভাষণের জন্য তার ওপর দোষ চাপাতে পারত না, যেটি ছিল একজন রাজনৈতিক প্রতিভাবানের মাস্টার স্ট্রোক কেন না তিনি ঘোষণা করেছিলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’। কিন্তু একই সাথে তিনি ‘জয় বাংলা, জয় পাকিস্তান’ বলে তাঁর ভাষণ শেষ করেছিলেন। এটা উল্লেখযোগ্য যে ‘ইনডিপেন্ডেন্স’-এর বাংলা শব্দ স্বাধীনতা হলেও, এই শব্দটির একাধিক অর্থ হতে পারে। অর্থাৎ অধ্যাপক ইমতিয়াজ বোঝাতে চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু সেই অর্থে স্বাধীনতা চাননি।



এদিকে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি চরম অবমাননা করে শহিদদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে লিখেছেন, "একটি মৌলিক প্রশ্ন হলো, আসলেই কি ত্রিশ লক্ষ লোকের মৃত্যু হয়েছিল, নাকি মৃতের সংখ্যা কম ছিল?"


লিখেছেন, "ত্রিশ লক্ষ সংখ্যাটির প্রবক্তা ছিলেন বাংলাদেশী এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে পাকিস্তান সরকার গঠিত হামুদুর রহমান কমিশনের প্রতিবেদনে দেখা যায় ২৬ হাজার। উঁচু এবং নিচু সংখ্যাতত্ত্বের মধ্যে আরও কিছু সংখ্যার হিসাব পাওয়া যায় যার মধ্যে কে, চৌধুরীর অনুমান দশ লক্ষ থেকে ত্রিশ লক্ষ, রিচার্ড সিসন এবং লিও রোজের হিসাবে তিন লক্ষ, আর রাও ফরমান আলীর হিসাবে ৪০ থেকে ৫০ হাজার" (পৃষ্ঠা ১৫)।


অধ্যাপক ইমতিয়াজের এমন দুঃসাহসিক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ লেখনীর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে সমালোচনার ঝড়। ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদকে দ্রুত অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। রবিবার, ২ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসির রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে এই কর্মসূচি পালন করে সংগঠনটি। পরে এই কর্মসূচি শেষে একই দাবিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বরাবর স্মারকলিপিও প্রদান করেছেন সংগঠনের একটি প্রতিনিধি দল।


মানববন্ধনে বক্তারা বঙ্গবন্ধু ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করার দায়ে অধ্যাপক ইমতিয়াজকে অবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।


এসময় বক্তব্যে বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শ পরিপন্থী কর্মকাণ্ড এবং মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করার অপরাধে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদকে অনতিবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ করার দাবি জানাচ্ছি। এক্ষেত্রে একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তদন্ত কমিটি গঠন করে তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। কোন পাকিস্তানি দালাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকতে পারে না।


অধ্যাপক ইমতিয়াজের শাস্তি দাবিতে মানববন্ধন ও স্মারকলিপি দেওয়ার বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বিবার্তাকে বলেন,জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি করার অপরাধে অধ্যাপক ইমতিয়াজকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দ্রুত অপসারণ ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট আহ্বান, উক্ত শিক্ষককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ না করা হলে ঢাবিসহ দেশব্যাপী কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।


সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন বিবার্তাকে বলেন, বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধকে অধ্যাপক ইমতিয়াজ চরমভাবে অবমাননা করে দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। এই বইয়ের প্রকাশক ইউপিএলকেও এর দায়ভার নিতে হবে।সরকারের নিকট দাবি, অবিলম্বে এই বই বাজেয়াপ্ত করে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে তাকে গ্রেফতার করতে হবে। একইসাথে তাকে অনতিবিলম্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অপসারণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের প্রশ্নে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ এক বিন্দু ছাড় দিবে না।


এদিকে ড. ইমতিয়াজ আহমেদের বইয়ে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও গণহত্যা সম্পর্কে অসত্য, বিকৃত ও উদ্ভট তথ্য উপস্থাপনের ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু পরিষদ। সোমবার, ৩ এপ্রিল পরিষদের পক্ষে যৌথভাবে এই বিবৃতি দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক।


বিবৃতিতে বলা হয়- ড. ইমতিয়াজ আহমেদ তার লেখা বইতে (Historicizing 1971 Genocide : State Versus Person) উল্লেখ করেছেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নাকি একাত্তরের ৭ মার্চের ভাষণ শেষে ‘জয় পাকিস্তান’ বলেছেন। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে বাংলাদেশে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পরিচালিত গণহত্যাকে নাকি ‘গণহত্যা’ বলা যাবে না এবং একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের শহিদদের সংখ্যা নিয়েও ড. ইমতিয়াজ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।


বিবৃতির বিষয়ে জানতে চাইলে সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আ ব ম ফারুক বিবার্তাকে বলেন, ড. ইমতিয়াজ জাতির পিতার দীর্ঘ সংগ্রাম, ৭ মার্চের ভাষণ, মহান মুক্তি সংগ্রাম, গণহত্যা ইত্যাদি নিয়ে প্রশংসাসূচক কিছু সংক্ষিপ্ত আলোচনা ও মন্তব্য করলেও পাশাপাশি এগুলো নিয়ে তিনি বেশ কিছু তির্যক, বিকৃত, অসত্য ও জাতীয় ইতিহাসের জন্য ক্ষতিকর মন্তব্য করেছেন যা একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।


অভিযুক্ত অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবি এখানে শেষ হয়। বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস বিকৃতির দায়ে তার বিরুদ্ধে আইনগত এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বরাবর স্মারকলিপিও দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।


বৃহস্পতিবার,৬ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন এবং সাধারণ সম্পাদক মো. তানভীর হাসান সৈকত স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপি উপাচার্যকে দেওয়া হয়।


স্মারকলিপিতে বলা হয়, সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদের রচিত বইয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীন বাংলাদেশ তৈরির দীর্ঘ সংগ্রাম, ৭ই মার্চের ভাষণকে অবমূল্যায়ন করা হয় এবং একাত্তরে এদেশে পাকিস্তানিদের দ্বারা সংঘটিত গণহত্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয় এমন বেশ কিছু বিভ্রান্তিকর মন্তব্য করেছেন বলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোচরীভূত হয়েছে।


স্মারকলিপি দেওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত বিবার্তাকে বলেন, জাতির পিতার অবদানকে অবমূল্যায়ন কিংবা স্বাধীনতা ও মহান মুক্তিযুদ্ধের মীমাংসিত ইতিহাস নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রাষ্ট্রবিরোধী অপরাধের শামিল মনে করে ও তীব্র ধিক্কার জানায় এবং এ ধরনের অপচেষ্টার পেছনে কোনো গূঢ় ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে আমরা মনে করি।


তিনি বলেন, আমাদের দুই দফা দাবি।
১.অনূর্ধ্ব ১৫ দিনের মধ্যে ড. ইমতিয়াজ আহমেদের বিরুদ্ধে তদন্তের মাধ্যমে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপচেষ্টার কার্যকারণ উদঘাটন ও প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে।
২. ড. ইমতিয়াজ আহমেদের বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ আইনানুগ ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।


এদিকে অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদের লেখায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতির অভিযোগ ওঠায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার ,৩ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিস অ্যান্ড লিবার্টির পরিচালক অধ্যাপক ফকরুল আলমকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়।


এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামান বলেন,এটা একটা একাডেমিক জায়গা, যে কোনো জিনিস বস্তুনিষ্ঠভাবে দেখতে হয়। যেহেতু একটা প্রশ্ন উঠেছে, তাই বিষয়টা বস্তুনিষ্ঠভাবে দেখার সুযোগ রয়েছে। কমিটি ওই বইটি পর্যালোচনা করে দেখবে। কমিটিকে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।


অভিযোগের বিষয়ে অবগত করে এই বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে অভিযুক্ত অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বিবার্তাকে বলেন,সমাজের কিছু সদস্যের অভিযোগে আমি একেবারেই আতঙ্কিত যে আমি বঙ্গবন্ধুকে অসম্মান করেছি এবং আমার ১৪ বছর আগে প্রকাশিত একটি বইয়ে বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের গণহত্যাকে অস্বীকার করেছি। যে বইটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনোসাইড স্টাডিজের জন্য একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করাসহ বাংলাদেশে ১৯৭১ সালের গণহত্যার বিচারের আবেদন ও অনুসরণ করার জন্য লেখা হয়েছিল, তা কীভাবে ১৯৭১ গণহত্যাকে অস্বীকার করতে পারে? এই অভিযোগ একেবারেই আমার মনকে বিচলিত করে! আমি বিশ্বাস করি আমার বিরোধের কিছু ভুল পড়া বা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।


তিনি বলেন,আমার বইয়ের কোথাও বঙ্গবন্ধুকে অসম্মানজনক একটি শব্দও নেই। আমি মনে করি বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণে আমার বক্তব্যে তারা সুযোগ নিয়েছিল (আমার বিরোধ বুঝতে পারেনি), যেটি আমি বলেছি, “রাজনৈতিক প্রতিভার একটি মাস্টার স্ট্রোক”, এবং আমি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি কেন এমন।


শহিদদের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করার প্রেক্ষিতে মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে একাত্তরের গণহত্যায় ত্রিশ লাখ মানুষের মৃত্যুকে বিতর্কিত করার অভিযোগ রয়েছে। এটি আমার দৃষ্টিভঙ্গির সম্পূর্ণ বিকৃতি। আমি শুধুমাত্র উদ্ধৃত করেছি যে গবেষকরা আছেন যারা বিভিন্ন পরিসংখ্যান নিয়ে এসেছেন, যাদের সম্পর্কে আমার অবস্থান ছিল যে "মৃত্যুর সংখ্যা" গণহত্যার কেন্দ্রীয় সমস্যা নয়। যেটা কেন্দ্রীক সেটা হল “ধ্বংস করার উদ্দেশ্য”, যা শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হত্যাকাণ্ড থেকেই স্পষ্ট। তদুপরি, আমি সবসময় বলেছি যে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে আঘাতপ্রাপ্ত বাস্তুচ্যুত মহিলাদের গর্ভপাতসহ শরণার্থী শিবিরে মৃত্যু এবং গর্ভপাতকে অন্তর্ভূক্ত করলে মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে।


বিবার্তা/রাসেল/এসবি

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com