পাঁচ বছরে ইট ভাটা খেয়েছে ৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমি
প্রকাশ : ০৬ এপ্রিল ২০২৩, ১০:১৪
পাঁচ বছরে ইট ভাটা খেয়েছে ৭ হাজার হেক্টর ফসলি জমি
নওগাঁ থেকে আব্দুর রাকিব
প্রিন্ট অ-অ+

খাদ্য উদ্বৃতত্তের জেলা নওগাঁয় দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে ফসলি জমি। যার মূল কারণ হিসেবে দাঁড়িয়েছে জেলায় অবৈধ ভাবে গড়ে ওঠা ইট ভাটা। ভাটাগুলোতে ইট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার হয় ফসলি জমির মাটি। ইট তৈরির মৌসূম এলেই ফসলি জমির মাটি দিয়ে ইট তৈরির প্রতিযোগিতায় নামে ভাটার মালিকরা। প্রশাসনের নিকট বারবার অভিযোগ করা সত্ত্বেও ফসলি জমির মাটি কাটা বন্ধ হয়নি। মূলত প্রশাসন ম্যানেজ করেই বছরের পর বছর ধরে চলছে ফসলি জমির মাটি বিক্রির কারবার। ফলে গত পাঁচ বছরে যে পরিমাণ ফসলি জমি কমেছে, এভাবে যদি জমি কমতে থাকে তাহলে আগামীতে ফসলের জন্য আবাদি জমির প্রকট সংকট এবং খাদ্য উৎপাদনে চরম ঘাটতি দেখা দিতে পারে বলে অশঙ্কা করছেন কৃষি বিভাগ। ফসলি জমি রক্ষা করতে প্রশাসনের সঠিক নজরদারি এবং অবৈধ ইট ভাটা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল।


স্থানীয় পরিবেশ অধিদপ্তর বলছে, বর্তমান জেলার ইট ভাটার সংখ্যা দুই শতের অধিক। যার মধ্যে নিবন্ধিত ভাটা মাত্র ছয়টি। এবং আবেদন রয়েছে ত্রিশটির।



জানা যায়, ভাটাগুলোতে ইট তৈরির মাটির যোগান দিতে ভাটার মালিক ও মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আবার কখনোবা অনেকটা জোর করেই নামমাত্র মূল্যে উর্বর জমির মাটি কেটে নিয়ে যায় ইটভাটায়। জেলার ১১টি উপজেলায় কৌশলে মাটি লুটের একই দৃশ্য চোখে পড়বে যে কারোরই। অভিযোগ পেয়ে প্রশাসনের লোক আসলেও হয়তো এক-দুই দিন মাটি কাটা বন্ধ থাকে, এরপর আবার পুরোদমে শুরু হয় মাটি কাটার কাজ। আবার বাধা দিতে গেলে প্রশাসনের অনুমতি নিয়েই মাটি কাটছি বলে তারা কাজ চালিয়ে যায়।


জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, গত পাঁচ বছরে ফসলি জমি কমেছে ৭ হাজার ১৯০ হেক্টর। পাঁচ বছর আগে জেলার ফসলি জমির পরিমাণ ছিল ২ লক্ষ ৭৩ হাজার ৬৩ হেক্টর। বর্তমানে যার পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ২ লক্ষ ৬৫ হাজার ৪৭৩ হেক্টর। যার মধ্যে এক ফসলি জমি রয়েছে ৪৫ হাজার ৫৫৮ হেক্টর, দুই ফসলি রয়েছে ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৪৫৫ হেক্টর, তিন ফসলি রয়েছে ৮৮ হাজার ৩৭৭ হেক্টর এবং চার ফসলি রয়েছে ২ হাজার ৪৮৩ হেক্টর। গত পাঁচ বছরে জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে ফসলি জমি সবচেয়ে বেশি কমেছে পত্নীতলা উপজেলায়, ৪ হাজার ৪৬০ হেক্টর। এছাড়াও সদর উপজেলায় ১৮৩ হেক্টর, মান্দায় ৭৪ হেক্টর, রানীনগরে ৭৩ হেক্টর, আত্রাইয়ে ৩০ হেক্টর, বদলগাছিতে ১৯৬ হেক্টর, মহাদেবপুরে ৩৪১ হেক্টর, ধামইরহাটে ২ হেক্টর, সাপাহারে ২৫০ হেক্টর, পোরশায় ২ হাজার ১৬৬ হেক্টর এবং নিয়ামতপুরে কমেছে ৩০৩ হেক্টর।



নতুন পুুকুর খনন করা একজন মালিক বিবার্তাকে বলেন, কিছুদিন আগে একজন ভাটা মালিক আমাকে বলেন, আপনার জমির পাশে তো পুকুর খনন করা হচ্ছে। এখন তো জমিতে ফসল ফলান অনেক কষ্টের এবং খরচও অনেক বেশি। আমি আপনার পুকুর খনন করে দিব। বিনিময়ে আমি কোন টাকা নিব না, উল্টো আপনাকে নগদ কিছু টাকা দিব। শুধু মাটিগুলো ভাটায় নিয়ে যাব। জমির মালিক বলেন, ফ্রিতে পুকুর খনন আর নগদ টাকার লোভে পড়ে আমি পুকুর খনন করিয়ে নিয়েছি। শুধু আমাকে না, এই ভাবে লোভ দেখিয়ে আরো অনেককেই পুকুর খনন করে দিয়ে জমির মাটি ভাটায় নিয়ে গেছে।


কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবুল কালাম আজাদ বিবার্তাকে বলেন, গত পাঁচ বছরে ফসলি জমি অনেক পরিমাণে কমেছে। কিন্তু আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি, উন্নত বীজ, রাসায়নিক ও জৈব সারসহ কীটনাশক ব্যবহার এবং কৃষকদের আর্থিক ঋণ প্রদানসহ নানামুখী কৃষি উন্নয়নমূলক ব্যবস্থা গ্রহনের ফলে ফসল উৎপাদন আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। তাই ফসলি জমি কমলেও ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন পর্যন্ত ফসলের ঘাটতি দেখা দেয়নি। তবে আগামী দিনগুলোতেও এভাবে যদি ফসলি জমি কমতে থাকে তাহলে সেটি খুবই চিন্তার বিষয়।


এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক খালিদ মেহেদী হাসান পিএএ বিবার্তাকে বলেন, প্রত্যেক উপজেলার অবৈধ ইট ভাটাগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের নির্দেশ রয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার অনেক ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। আগামিতেও আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও ফসলি জমির মাটি যেন ইট ভাটায় নিয়ে যেতে না পারে সে বিষয়ে জেলা প্রশাসনের নজরদারি থাকবে।


বিবার্তা/ রোমেল/ মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com