শিরোনাম
ছেলে হারানো মায়ের কান্না!
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০১৭, ১৮:২৩
ছেলে হারানো মায়ের কান্না!
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

বুধবার বেলা ২টা।ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান-স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) মেঝেতে বসে আছেন এক বৃদ্ধা, পরনে সাদা শাড়ি, বয়স আনুমানিক ৯০ বছর। পাশে দু’টি ব্যাগ, কিছু কাপড় ও কাগজপত্র। ওই নারীকে স্বান্তনা দিচ্ছেন আরেক ব্যক্তি।


সরেজমিনে দেখা গেছে বৃদ্ধ ওই নারী কান্না করছেন। এক পর্যায়ে বিবার্তা২৪ডটনেটের ওই প্রতিবেদক তাদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলেন। তবে তারা কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর বৃদ্ধা ওই নারী হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন এবং বলতে থাকেন, কথা বলে কি লাভ, আমার ছেলে আমাকে ছেড়ে কেন চলে গেলো? এটার উত্তর কেউ দিতে পারবে?


কথা বলার এক পর্যায়ে জানা গেলো, বৃদ্ধ ওই নারীর বাড়ি গোপালগঞ্জের কাশিয়ানী উপজেলার দক্ষিণ ফুকরা গ্রামে। নাম সবরুন নেছা।


তিনি জানান, তার ছেলে আহাদ আলী মোল্যা (৫০) মারা গেছে। কিভাবে মারা গেছে জানতে চাইলে তিনি ফের হাউমাউ করে কান্না শুরু করেন। কিছুক্ষণ অপেক্ষার পর বলেন, আমার ছেলে এবার বিশ্ব ইজতেমায় এসেছিল। কিন্তু ইজতেমায় যোদগানের আগেই সে সড়ক দুঘর্টনায় আহত হয়।


বৃদ্ধা আরো জানান, ১০ জানুয়ারি মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে ইজতেমায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হন আহাদ আলী মোল্যা। কিন্তু দুপুর ১২টার দিকে তিনি দুঘর্টনার শিকার হন। এরপর তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার বেলা ১টার দিকে তিনি মারা যান।


আবার কান্না করে সবরুন নেছা বলেন, এখন আমাকে কে ‘মা’ বলে ডাকবে? ওষুধ কে এনে দিবে? কেন আমাকে আমার ছেলের মৃত্যু দেখতে হলো? এমন আরো অনেক প্রশ্ন...


এক পর্যায়ে সবরুন জানান, আহাদ আলী মোল্যার স্ত্রী ও তিন ছেলে রয়েছে। মৃত্যুর খবর পেয়ে তারাও হাসপাতালে এসেছে। তবে তারা মরদেহটি ময়না তদন্ত না করেই নেয়ার চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।


এ ব্যাপারে তিনি বলেন, আমার ছেলের বুক কাটতে দিব না। ময়না তদন্ত লাগবে না। আমার ছেলেকে নিয়ে বাড়ি যেতে চাই।


পরবর্তীতে আহাদ আলী মোল্যার ছেলে ও স্ত্রীর সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তারা কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।


পরে যোগাযোগ করা হয় গোপালগঞ্জ জেলার কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা ইউনিয়নে ইউপি সচিব ম.ম. হেমায়েত হোসেনের সাথে। এ সময় তিনি আহাদ আলী মোল্যার সাথে ইজতেমায় আসা ইবাদ আলী খান নামের এক ইউপি সদস্যের সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন।


যোগাযোগ করা হয় ইবাদ আলী খানের সাথে। তিনি বিবার্তাকে জানান, গত ১০ জানুয়ারি ফুকরা ইউনিয়ন থেকে একটি বাস রিজার্ভ করে ৫২ জন ইজতেমায় আসছিল। কিন্তু ইজতেমায় আসার পথে ফরিদপুর নামক এলাকায় বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। এ সময় আহাদ আলী মোল্যাসহ ইজতেমাগামী চার যাত্রী আহত হন। এদের মধ্যে আহাদ আলী অবস্থা আশংকাজনক ছিল। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এছাড়া বাকিদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তারা এখনো চিকিৎসাধীন বলে জানান তিনি।


ইবাদ আলী আরো জানান, বাসটি দুঘর্টনার শিকার হলে ইজতেমায় না গিয়ে সবাই বাড়ি ফিরে যান।


উল্লেখ্য, প্রতি বছর রাজধানীর টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। এতে দেশ-বিদেশের লাখো মুসল্লি অংশ নেন। প্রতিবারের মতো এবারেও বিশ্ব ইজতেমা দুই দফায় শেষ হয়েছে।


বিবার্তা/খলিল/মৌসুমী

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com