শিরোনাম
শিক্ষা ভবনে আতঙ্কে জাহাঙ্গীরের সহযোগীরা!
প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০১৯, ১১:৪১
শিক্ষা ভবনে আতঙ্কে জাহাঙ্গীরের সহযোগীরা!
খলিলুর রহমান
প্রিন্ট অ-অ+

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে শিক্ষা ভবনে গড়ে উঠেছে বিএনপি-জামায়াত সিন্ডিকেট। আর ওই সিন্ডিকেটের মূলহোতা ছিলেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন।


নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের কারণে সম্প্রতিতাকে ওএসডি করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে তাকে স্ট্যান্ড রিলিজও করা হয়েছে। এরপর পর থেকেই তার সহযোগীরাও আতঙ্কে রয়েছেন। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একাধিক সূত্রে বিবার্তাকে এমন তথ্য জানিয়েছে।


সূতমতে, গত ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণে হলুদ পাঞ্জাবি পরেন ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। পরে ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়ে যায়। এ সময় অনেকেই মন্তব্য করেন ‘শোক দিবস পালন না করে মাউশির ওই কর্মকর্তা বসন্ত উৎসব পালন করছেন।’


শুধু তাই নয়, গত ২১ আগস্ট শিক্ষা ভবন সংলগ্ন সিরডাপ মিলনায়তনে একটি গোল টেবিল বৈঠকে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। এ সময় ১৫ আগস্টে সপরিবারে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ও ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলায় আইভি রহমানসহ ২৪ জন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীকে পরিকল্পিতভাবে হত্যার ঘটনাকে ‘নিছক দুর্ঘটনা’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।


এ ঘটনার দেশের জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল বিবার্তা২৪ডটনেটসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব (কলেজ-২) ড. শ্রীকান্ত কুমার চন্দ স্বাক্ষরিত অফিস আদেশে ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনকে ওএসডি করা হয়।


এ ঘটনার পর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের সহযোগীদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগ।


গত রবিবার (২৫ আগস্ট) মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ গোলাম ফারুকের কাছে মৌখিকভাবে এ দাবি উপস্থাপন করা হয়। এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের অর্ধশত নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। পরে ছাত্রলীগ নেতাদের দাবি অতিদ্রুত শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী এবং মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিবকে জানাবেন বলে জানান মহাপরিচালক। এরপর থেকেই ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেনের সহযোগীরা আতঙ্কে রয়েছেন।


শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, নূরুল ইসলাম নাহিদ শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালে শিক্ষা ভবনে কৌশলে জামায়াত-বিএনপি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। আর ওই সিন্ডিকেটটি পরিচালনা করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) পরিচালক (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। তবে এতদিন সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। কিন্তু ১৫ আগস্টের ওই ঘটনার পর তাদের মুখোশ উন্মোচন হয়ে যায়।


সূত্র জানায়, বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে নিয়োগ পাওয়া ওই কর্মকর্তার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেটের সদস্যরা ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নূরুল ইসলাম নাহিদের আস্থাভাজন হয়ে ওঠেন।


একপর্যায়ে তারা আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সুকৌশলে তারা তাদের নিজেদের আবার কখনো কখনো দলীয় স্বার্থ হাসিলে কাজ করেন। আর ওই সিন্ডিকেটের মূলহোতা ছিলেন পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন। অতীতে তার বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ উঠলেও সুকৌশলে তিনি তা মোকাবেলা করেন।


অভিযোগ রয়েছে, জাহাঙ্গীর হোসেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন। শিক্ষা ভবনে আওয়ামী লীগপন্থীদের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে সুকৌশলে তাদের নিষ্ক্রিয় করে রাখেন ওই কর্মকর্তা।


শুধু তাই নয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক এসএম ওয়াহিদুজ্জামানের সময়ে ছয়জন মহিয়সী নারীর সম্মানার্থে একটি প্রকল্প শুরু হয়। সেই প্রকল্পে বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুননেছার নাম অন্তর্ভুক্ত না হওয়ার জন্য জাহাঙ্গীর হোসেন ডেস্ক অফিসারদের নানাভাবে চাপ দেন। এভাবেই সুকৌশলে বঙ্গমাতার সম্মানে নেয়া প্রকল্প বন্ধ করে রেখেছেন এ পরিচালক। উল্টো সেই জাহাঙ্গীর আজ অবধি বঙ্গবন্ধু, বঙ্গমাতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করে কেউ যাতে কিছু না করতে পারেন, সেই পাঁয়তারা করে যাচ্ছেন। এমনকি বিভিন্ন প্রকল্পে কৌশলে ত্রুটি ঢুকিয়ে দেন। পরেতার ইশারায় সে ত্রুটিগুলো গণমাধ্যমে প্রকাশ করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা হয়।


এসব কাজে তাকে সহযোগিতা করেন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন শাখার সহকারী পরিচালক-১ সাবিনা বেগম, সহকারী পরিচালক-২ দিল আফরোজ বিনতে আছির, সহকারী পরিচালক মিনহাজ উদ্দীন আহম্মদ, গবেষণা কর্মকর্তা রোকসানা কণা, মো. আজিম কবীর ও গবেষণা কর্মকর্তা (একিউএইউ) মোছাম্মদ আয়শা সিদ্দিকা মৌসুমী।


তাদের মধ্যে দিল আফরোজ বিনতে আছির ও সাবিনা বেগম দীর্ঘ ১৩ বছরের বেশি সময় ধরে কর্মরত রয়েছেন। আয়শা সিদ্দিকা মৌসুমী ৯ বছর ধরে রয়েছেন। কিন্তু সরকারি চাকরিতে একই শাখায় এতদিন থাকার কথা নয়। তারা তদবির করে বদলি ঠেকিয়ে এত দিন মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরে রয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।



তাদের মধ্যে দিল আফরোজ বিনতে আছির বিএনপি-জামায়াতের আমল থেকেই মাউশিতে কর্মরত। শুধু তাই নয়, তিনি জাহাঙ্গীরের সহযোগিতায় অধিদফতর থেকে সর্বোচ্চ সুধিবা ভোগ করে থাকেন। এছাড়াও ‘জেনারেশন ব্রেকথ্রু’ নামের একটি প্রকল্প থেকে পরিচালক জাহাঙ্গীরের সহায়তায় অর্থ লুটপাটের অভিযোগও আছে তার বিরুদ্ধে।


এ প্রকল্পের পিডি ও ফোকাল পয়েন্ট হওয়ার সুবিধার্থে এ দুই কর্মকর্তা মহাপরিচালকসহ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন কর্মকর্তাকে এ প্রকল্পের অর্থে বিদেশ ভ্রমণের সুযোগ করে দিয়ে নানা অনৈতিক সুবিধা আদায় করেন বলে অভিযোগ করেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন কর্মকর্তা।


একই অধিদফতরের আরেকজন সহকারী পরিচালকের নাম সাবিনা বেগম। তিনি ২০০৭ সাল থেকে শিক্ষা ভবনে কর্মরত রয়েছেন। এই কর্মকর্তা পরিচালকের কাছের লোক হওয়ায় কাউকেই তোয়াক্কা করেন না।


জানা গেছে, পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইংয়ের মূল কাজ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন করা। কিন্তু পরিকল্পনা ও উন্নয়ন উইং বিগত তিন বছরে কোনো প্রকল্পের ডিপিপি প্রণয়ন করতে পারেনি।


তাদের আরেক সহযোগী সহকারী পরিচালক মিনহাজ্জ উদ্দিন আহম্মদ। তিনিও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবিরের সাথে সংশ্লিষ্ট ছিলেন বলে জানা যায়। ২২ তম বিসিএসের এই কর্মকর্তা প্রথমে প্লানিং কমিশনে পদায়ন পান। পরবর্তীতে পরিচালক জাহাঙ্গীর তাকে মাউশিতে নিয়ে আসেন। প্রায় সময়ই তিনি সরকারবিরোধী সমালোচনায় লিপ্ত থাকেন বলে অভিযোগ আছে।


এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মোহাম্মদ গোলাম ফারুক বিবার্তাকে বলেন, বিএনপি-জামায়াতের আমলে নিয়োগপ্রাপ্ত কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ শোনা যাচ্ছে। তবে বিষয়টি আমরা দেখছি। আমাদের এখানে যদি ক্ষতিকর কেউ থাকে তাহলে অবশ্যই আমরা তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।


বিবার্তা/খলিল/উজ্জ্বল/রবি


আরো পড়ুন...


অবশেষে বিএনপি-জামায়াত সিন্ডিকেটের মূলহোতা সেই জাহাঙ্গীর ওএসডি


সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে তৎপর বিএনপি-জামায়াত সিন্ডিকেট!


বিএনপি-জামায়াত সিন্ডিকেটমুক্ত শিক্ষা ভবন চায় ছাত্রলীগ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com