অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে এবার গরম কাপড়ের ব্যবসা রমরমা। জেঁকে বসা হাড় কাঁপানো শীতের তীব্রতায় ব্যবসার সুদিন ফিরেছে বলে জানান দোকানিরা। রাজধানীর ফুটপাত থেকে বিপনী বিতানের দোকানগুলোতে জমজমাট হয়ে উঠেছে বেচাকেনা। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্কদের কাপড়-চোপড় কেনার চাহিদা সবচেয়ে বেশি।
রাজধানীর নিউমার্কেট ও ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটে সোয়েটার কিনতে দাম পড়বে ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। দেশী ব্লেজার ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। চীনা ব্লেজার ৫০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত। মোটা জ্যাকেট কিনতে দাম পড়বে ৫০০ থেকে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত। শাল ৩০০ টাকা থেকে তিন হাজার পর্যন্ত। ফুলহাতা গেঞ্জি ২০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকার মধ্যে । মার্কেটগুলোতে শিশুদের জন্য নানা ধরনের বাহারি ডিজাইনের শীতের কাপড় ও টুপি পাওয়া যাচ্ছে। শিশুদের সোয়েটার ২০০ টাকা থেকে এক হাজারের মধ্যে। এছাড়া হুড়ি পাওয়া যাচ্ছে ৪০০ থেকে এক হাজার টাকার মধ্যে। বিভিন্ন ডিজাইনের টুপি ৬০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে।
রাজধানীর গরম কাপড়ের দোকানে ক্রেতার ভিড়
মিরপুর থেকে নিউমার্কেটে কাপড় কিনতে এসেছেন লীনা জামান। তিনি বলেন, মূলত অন্য শপিং করার জন্য মার্কেটে এসেছি। তবে বেশি শীতের জন্য গরম কাপড় কিনবো। বাচ্চাদের জন্য টুপি ও নিজের জন্য শীতের কাপড় কিনছি।
রাজধানীর মতিঝিল, বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান, জিপিও-পল্টন এলাকার ফুটপাতের দোকানগুলো ঘুরে দেখা যায়, নানা ধরনের শীতের কাপড় উঠেছে। বিক্রিও হচ্ছে মোটামুটি। ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে থাকায় এখানে জনসাধারণের আগ্রহও ভালো। প্রয়োজনীয় পোশাক বেশ সহজেই কিনছেন ক্রেতারা। এসব দোকানে বিভিন্ন দামের ফুলহাতা শার্ট- টি-শার্ট, ট্রাউজার, নারীদের মোটা কাপড়ের টপস আর বিভিন্ন ডিজাইনের কার্ডিগান বা পশমী জামা পাওয়া যাচ্ছে। হাতা কাটা সোয়েটার, লং জ্যাকেট, শাল, মাফলার, উলের মোটা কাপড়, শর্ট ও লং ব্লেজার, জ্যাকেট আর ব্লেজারের মিশ্রণে তৈরি নতুন ধরনের শীতের পোশাকও পাওয়া যাচ্ছে। একই সঙ্গে আছে কাপড়ের সঙ্গে মিলিয়ে শীতে ব্যবহার উপযোগী জুতা, মোজা ও বাহারি ডিজাইনের কম্বল ইত্যাদি।
সোয়েটার জ্যাকেট নয় কোম্বল বিক্রিও বেশ বেড়েছে
ব্র্যান্ডের দোকান বা শপিং মলে গলাকাটা দামের ভয়ে যেতে চান না মধ্যবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্তের অনেকেই। তাদের পছন্দ ফুটপাতের এই বাজার। এছাড়া অফিসের কাজের ফাঁকে কেনাকাটা, কাজের জন্য ঢাকায় এসে ফেরার সময় কেনাকাটার এমন সব মানুষদেরও হাতের নাগালের এই দোকানগুলোই পছন্দ। এজন্য জমে উঠেছে ফুটপাতের এসব বাজার।
চাঁদপুর থেকে ঢাকায় বিদেশ যাওয়ার টিকেট করতে এসেছেন মিরাজ (৩৬)। যাওয়ার সময় মা, স্ত্রী, সন্তান ও নিজের জন্য করে নিলেন শীতের কেনাকাটা। তার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রামে কনকনে শীত পড়েছে। সেজন্য তিনি শীতের কেনাকাটা করছেন। ফুটপাতের এই বাজার অনেকটা সহজ ও সুবিধাজনক বলে এখানেই সেরে নিচ্ছেন বাজার, জানান মিরাজ।
তিনি বলেন, মার্কেটে গেলে দরদাম নিয়ে ঝামেলা হয়। বেশির ভাগ সময় আমাদের মতো দাম না জানা লোকেরা ঠকে যান। এজন্য ফুটপাত থেকেই কিনছেন। এখানে দেখতে সুবিধা, চোখের সামনে খোলা-মেলাভাবে বিক্রি হয়। আবার দামও কম।
বায়তুল মোকাররমের সামনের সোয়েটার বিক্রেতা আবুল হোসেন জানান, শীত আসায় ভালো বেচা-বিক্রি শুরু হয়েছে। দিন যত যাবে বিক্রিও বাড়বে।
শীতে মোজা ও হাত মোজার কদর বেশ বেড়েছে
দামের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার কাছে ৫০০ থেকে তিন হাজার দামের পর্যন্ত সোয়েটার আছে। আমাদের এখানে দাম বেশি নেয়ার সুযোগ নেই। অনেক বিক্রেতা। সবাই ডেকে ডেকে একদামে বিক্রি করছেন। কাস্টমার ভেদে তারা লাভ ৫০-১০০ বেশি রাখেন বলেও জানান তিনি।
মোটা গেঞ্জি (টি-শার্ট) বিক্রেতা কালাম বলেন, বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। দাম কমই। কারণ এগুলোর দাম সবাই জানে, ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। শুধু কালার পছন্দ করে নিলেই হলো।
এছাড়াও চোখে পড়ে কিছু পুরোনো, রঙ ঝলসে যাওয়া স্যুয়েটার আর জ্যাকেট। নিম্নবিত্ত কিংবা দারিদ্র্যসীমারও নিচে বসবাস করছে এমন ক্রেতাদের জন্যই যে এই পসরা সাজানো হয়েছে তা সহজেই স্পষ্ট হয়।
রাজধানীর ফুটপাতে শীতের কাপড় কেনাবেচা
নিউ মার্কেট, গাউছিয়া, চাঁদনী চক, এলিফ্যান্ট রোড ছাড়াও ফার্মগেট, বঙ্গবাজার, বায়তুল মোকাররম, মিরপুর-১০ নম্বর গোল চত্বর, মিরপুর-১ গোল চত্বর এলাকায় ফুটপাতে ও ফ্যাশনপণ্যের বিপণিবিতানগুলোতে বসেছে শীতবস্ত্রের পসরা। নিম্ন আয়ের মানুষের পাশাপাশি বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এসব দোকান থেকে কেনাকাটা করছেন।
বিবার্তা/আদনান/জাই
সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি
এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)
১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫
ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫
Email: [email protected] , [email protected]