শিরোনাম
আসলে সিটিং সার্ভিস বলতে কিছু নেই (৩য় পর্ব)
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯, ১৫:৫৬
আসলে সিটিং সার্ভিস বলতে কিছু নেই (৩য় পর্ব)
আদনান সৌখিন
প্রিন্ট অ-অ+

সিটিং সার্ভিসের নামে নৈরাজ্য রাজধানী ঢাকায় দিনদিন ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। গণপরিবহনে সিটিং সার্ভিসের নামে যাত্রীদের সাথে চিটিংবাজি করাটা যেন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে।


খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিটিং সার্ভিসের নামে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ত্রুটিপূর্ণ ও নিম্নমানের যানবাহন এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহনসহ নানা অভিযোগে নগরীতে বিষফোঁড়া হিসেবে দেখা দিয়েছে। সিটিং কিংবা গেটলক অথবা বিরতিহীন নামে কোনো শব্দ সিটি বাস সার্ভিসের রুট পার্মিটের কোথাও লেখা না থাকলেও নিজেদের প্রভাব এরই মধ্যে বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে গণপরিবহন সংশ্লিষ্টরা। কর্তৃপক্ষকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে, অর্থলোভেই মূলত নগরীতে সিটিং সার্ভিস নাম দিয়ে সীমাহীন যাত্রীদুর্ভোগের কারণ তৈরি করেছে পরিবহন মালিকরা।



জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এভাবে নিত্যদিন চলাচল করে নগরবাসী


‘বাস দেখে বোঝার উপায় থাকে না যে এটা সিটিং সার্ভিস বাস নাকি লোকাল। আবার অনেক সময় লোকাল বাস বলে হেল্পাররা বাসে তুলেন। কিন্তু উঠার পরেই তাদের আচরণ যায় বদলে। যত খুশি যাত্রী তুলে নেন। কিছু বললে খারাপ আচরণ বা গালি-গালাজ শুনতে হয়। আবার অনেক সময় ভুল গন্তব্যের নাম করেও বাসে তুলে নেন। তারপর কাছাকাছি কোথাও নামিয়ে দেন। এটা যে কত বড় ভোগান্তি, যার সাথে না হয়েছে, সে বুঝবেন না।’


ক্ষোভ আর আক্ষেপ নিয়ে বিবার্তাকে কথাগুলো বলেন উত্তর বাড্ডা থেকে মিরপুর-২ এর নিয়মিত যাত্রী আফজাল উদ্দিন।তিনি ১১ বছর ধরে এভাবেই যাতায়াত করেন বলে জানান।


সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর কুড়িল, নতুনবাজার ও উত্তরা থেকে যেসব বাস কালশী, মিরপুর-১০, ২, ১ নম্বর হয়ে আনসারক্যাম্প যায়, সেগুলোর সর্বনিম্ন ভাড়া ২৫ টাকা। এই রুটের জাবালে-নূর, রবরব, তেতুলিয়া, প্রজাপতি, নুরে মক্কা, রাজধানী পরিবহনের কোনো বাসেই যাত্রীদের টিকেট দেয়া হয় না। অনেকটা যার কাছে যেমন পারেন তেমন ভাড়া নিচ্ছেন। যাত্রাবাড়ী-টঙ্গী রুটের অনাবিল, সালসাবিল, তুরাগ এবং সদরঘাট থেকে চলাচলকারী সুপ্রভাত, ভিক্টর পরিবহনের বাসগুলো সিটিং সার্ভিস হিসেবে রাস্তায় নামলেও এখন পুরোপুরি লোকাল সার্ভিসে পরিণত হয়েছে। অথচ এর ভাড়া নেয়া হয় সিটিং সার্ভিসের সমান।



পুরুষ যাত্রীদের সাথে বাসে ওঠার লড়াইয়ে নারীরাও


বসুন্ধরার বাসিন্দা খাদিজা আক্তার বিবার্তাকে বলেন, জাবালে-নূর ও আকিক বাসগুলো বিশ্বরোড থেকে কালশী, কিংবা নতুন বাজার থেকে শেওড়া পাড়া গেলেও ২৫ টাকা নেয়। বসুন্ধরা থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত ২০ টাকা ভাড়া নেয়া হয়, যা লোকাল বাসে ১০/১২ টাকা। সবচেয়ে বড় কথা, এরা কোনো টিকেট দেয় না। টিকেট দেয়া হয় না বলে বারবার ভাড়া চাইতে আসে, অনেক সময় এ নিয়ে তর্কাতর্কিও হয়। কোনো কোনো বাসে টিকেট দেয়া হলেও তাতে যাত্রীর গন্তব্য আর টিকেটে লেখা গন্তব্যের মিল থাকে না।


ফার্মগেট থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৪৩.১ কিলোমিটার দূরত্বে স্বাধীন পরিবহন ভাড়া নিচ্ছে ১০০ টাকা। অথচ এই দূরত্বে ভাড়া ৭৪ টাকা। মতিঝিল-মোহাম্মদপুর রুটে এটিসিএল পরিবহনে প্রেস ক্লাব থেকে সায়েন্সল্যাব ভাড়া নেয়া হয় ১৫ টাকা। ৩.৯ কিলোমিটার দূরত্বে সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৭ টাকা। একই অবস্থা এই রুটে চলাচলকারী রাজা সিটি ও শতাব্দী পরিবহনের বাসে। তরঙ্গ প্লাস বাসে মোহাম্মদপুর থেকে রামপুরার ভাড়া ২৫ টাকা। আবার মৎস্য ভবন পর্যন্তও ভাড়া ২৫ টাকা। যাত্রাবাড়ীগামী খাজাবাবা, শিকড় বাসে মিরপুর ১২ নম্বর থেকে মিরপুর ১০ নম্বর মাত্র দুই কিলোমিটার দূরত্বে ভাড়া ২০ টাকা। আবার মিরপুর থেকে কারওয়ান বাজারের ভাড়াও ২০ টাকা।



বাসে ওঠার লড়াইয়ে যাত্রীরা


অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে পরিবহন সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সঠিক কোনো নীতিমালা না থাকায় নিজেরাও নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন না এ নৈরাজ্য। কারণ বাস চালায় ড্রাইভার হেল্পার, তারা বাস ছাড়ার পরে কি করে না করে সেটা দেখা কোনোভাবেই সম্ভব হয় না। তবে নির্দিষ্ট করে কারো বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে সেটার ব্যবস্থা নেন বলে জানান তারা।


এই প্রসঙ্গে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কামাল বিবার্তাকে বলেন, সিটিং সার্ভিসে স্ট্যান্ডিং প্যাসেঞ্জার থাকেন। একজন লোক পল্লবীতে থেকে ফার্মগেট উঠে গেল, কিন্তু তার মতিঝিল পর্যন্ত ভাড়া। এটা এখন চলছে। আমরা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি, কিন্তু এখন পুরোপুরি সম্ভব হয়নি।


বিবার্তা/আদনান/উজ্জ্বল/জাই

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com