শিরোনাম
‘হাইকোর্টের রুলের যথাযথ বাস্তবায়ন চাই’
প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০১৯, ১৩:৪৩
‘হাইকোর্টের রুলের যথাযথ বাস্তবায়ন চাই’
মহিউদ্দিন রাসেল
প্রিন্ট অ-অ+

‘আমি হাইকোর্টের রুলকে সম্মান করি। আর এ রুলের যথাযথ বাস্তবায়ন চাই। তবে কয়েকদিন আগে গ্রীনলাইন পরিবহন হাইকোর্টের আদেশ মানেনি, তাই আমার ভয়। স্কয়ার হয়তো আমার ক্ষতিপূরণের টাকা দেবে না! তারা যথেষ্ট প্রভাবশালী, কাউকে তোয়াক্কা করে না।’


রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের ভুল চিকিৎসায় পঙ্গু হওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থী মেহেদি হাসান শামীম হাইকোর্টের রুল জারির প্রতিক্রিয়ায় বিবার্তাকে এসব কথা বলেন।


বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ভুল চিকিৎসার ক্ষতিপূরণ চেয়ে শামীমের পক্ষে করা এক রিটের শুনানি নিয়ে তাকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।


আদেশে তাকে কেন ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে না এবং বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেয়া হবে না- রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে।


আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের সভাপতি, স্কয়ার হাসপাতালের ডা. কৃষ্ণা প্রভু ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সাতজনকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।


একই সঙ্গে স্কয়ার হাসপাতালে শামীমের অপারেশন করার সময়কার সিডি ও চিকিৎসার সব রেকর্ড আগামী ৩০ দিনের মধ্যে দাখিল করতে বলা হয়েছে।


এদিন আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী রিপন কুমার বড়ুয়া ও ফুয়াদ হাসান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নূর উস সাদিক।


হাইকোর্টের রুলের বিষয়ে শামীমের পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফুয়াদ হাসান বিবার্তাকে বলেন, হাইকোর্টের এ আদেশকে আমরা ইতিবাচকভাবে নিয়েছি। বাকিটা সবকিছু নিষ্পত্তি হলে বলা যাবে।


গত ১৪ জুলাই ভুক্তভোগী মেহেদি হাসান শামীমের পক্ষে ক্ষতিপূরণ চেয়ে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিটটি করা হয়।


এরপর ২৯ জুলাই বিবার্তা২৪ ডটনেটের অফিসের এসে ভুল চিকিৎসায় তার পঙ্গু হওয়া নিয়ে অভিযোগ করেন শামীম। যা ৩০ জুলাই ‘স্কয়ারে চিকিৎসায় আমার স্বপ্ন দূরে থাক, জীবন নিয়ে টানাটানি’ এই শিরোনামে প্রকাশিত হয়।


এ সময় শামীম বিবার্তাকে অভিযোগ করে বলেন, ২০১৮ সালের ১৪ অক্টোবর তিনি স্কয়ার হাসপাতালের ডা. কৃষ্ণা প্রভুর কাছে চিকিৎসার জন্য যান। সেখানে তার শরীরের অবস্থা দেখান, এর সমাধান কি তা জানতে চান। এ রোগের জন্য তাকে বিদেশে যেতে হবে কিনা তাও তিনি ডাক্তারের কাছে জানতে চান। এ সময় ডা. কৃষ্ণা প্রভু তাকে বলেন, বিদেশ যাওয়ার কোনো দরকারই নেই। এজন্য অপারেশন করতে হবে। আর অপারেশন না করলে তিনি মারা যাবেন।


তিনি বলেন, ডাক্তারের এ কথা শুনে আমি এরইমধ্যে কয়েকবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম যে, অপারেশনে রিস্ক আছে কিনা? তিনি জানালেন কোনো রিস্ক নেই। এসব শুনে আমার আব্বা লোন করে টাকার ব্যবস্থা করেন। অপারেশন করতে আমাদের সাড়ে তিন লাখ টাকা লেগেছে। কিন্তু হিতে বিপরীত হলো।


অপারেশনের বিষয়ে শামীম বলেন, চলতি বছরের ২৩ জানুয়ারি স্কয়ার হাসপাতালে আমার অপারেশন হলো। পরে আমাকে আইসিইউতে রাখা হলো। ২৫ জানুয়ারি যখন আমাকে কেবিনে আনা হয়, তখন আমি বললাম ওয়াশরুমে যাব। এরপর আমার ছোট ভাইকে কল দিয়ে আনা হলো। আমার ছোট ভাই যখন আসল তখন সেখানের ডিউটি ডাক্তার তাকে বললেন, আপনার ভাইতো প্যারালাইজড হয়ে গেছে। এর আগে এ ব্যাপারে আমার ভাই কিংবা পরিবারকে কিছুই জানানো হয়নি। এরপর তারা আমার কি সমস্যা, কি হচ্ছে- না হচ্ছে কিছুই বলছিল না। তারা লুকোচুরির আশ্রয় নিয়েছিল। আমিও বুঝতে পারি, আমার বাম পাশ পুরোটা অবশ হয়ে আছে। ২৭ জানুয়ারি আমাকে রিলিজ দেয়া হয়।


ঢাবির এ শিক্ষার্থী বলেন, ফেব্রুয়ারির ৩ তারিখ আমি সেলাই কাটাতে যাই, তখনও তারা আমার বাম পাশ অবশ হওয়ার ব্যাপারে কিছু বলেনি। এ সময় তারা আরেকটা চিট করে, অপারেশনের পর নামমাত্র সিটিস্ক্যান করে, যা আমি পরে জানতে পারি। এপ্রিলের ২৮ তারিখ আমি এমআরআই করাই। আর সেটা দেখাই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক হেড এ কে এম আনোয়ার উল্লাহ স্যারকে। তিনি এটা দেখে বললেন, ভুল অপারেশনের কারণে তোমার স্ট্রোক হয়েছে। এটাকে তারা লুকিয়ে গেছে তোমাদের কাছে। সাথে সাথে ব্যবস্থা নিলে স্ট্রোকের ক্ষতি কমানো যেত।


ভুক্তভোগী এ শিক্ষার্থী বলেন, যখন আমার কাছে সবকিছু পরিষ্কার হলো, ভুল চিকিৎসাই আমার জন্য কাল হলো। তখন আমি স্কয়ার হাসপাতালের কর্তৃপক্ষকে বললাম, আমাকে চিকিৎসা করতে বিদেশ পাঠাতে। তারা পারবে না বলে জানালো। তখন তারা আমাকে স্কয়ারে কয়েকদিন থেকে ফিজিওথেরাপি নিতে বললো। এর বেশি তারা কিছু করতে পারবে না বলে জানিয়ে দিল।


হাসপাতালের চিফ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার মো. ইশাম ইবনে ইউসুফ সিদ্দিকীর কথা উল্লেখ করে শামীম বিবার্তাকে বলেন, আমাকে নিয়ে করা প্রত্যেকটি মিটিংয়ে ইউসুফ সিদ্দিকী উপস্থিত ছিলেন। তিনি তিনদিন সময় নিয়েছিলেন আমার ব্যাপারে স্কয়ার গ্রুপের এমডির সাথে কথা বলার জন্য। কথা বলে তিনি আমাকে জানালেন, এমডি বলেছেন, প্রয়োজনে হাসপাতাল বন্ধ করে দেবেন। তারপরও ক্ষতিপূরণ দেবেন না।


তারপর তাদের আমার ব্যাপারটা যতবারই বলেছি তারা রিজেক্ট করেছে। একপর্যায়ে মানবিক দিক বিবেচনার কথা বলে ২ লাখ টাকা দিতে চায় তারা। তখন আমি বললাম, এটা তো কোনো বিচার হতে পারে না। আপনারা আমার উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেবেন। এটা তো ভিক্ষার পর্যায়ে পড়ে। টাকা না নেয়ায় তখন তারা উল্টো থ্রেট দিয়ে বলেছে, স্কয়ারের বিরুদ্ধে বিচারও পাবা না। যা দিচ্ছি সেটা মেনে নাও। এর বাইরে গেলে কিছুই পাবা না।


এরপর এ বিষয়ে কোনো সমাধান না পেয়ে ক্ষতিপূরণের দাবিতে রিট করেন শামীম। এ রিটের পর আদালত রুলসহ আদেশ দিলেন।


বিবার্তা/রাসেল/উজ্জ্বল/রবি


আরো পড়ুন...


‘স্কয়ারে চিকিৎসায় আমার স্বপ্ন দূরে থাক, জীবন নিয়ে টানাটানি’

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com