শিরোনাম
সীরাতুন্নবী (সাঃ) মানবতার সমাধান
প্রকাশ : ০২ ডিসেম্বর ২০১৭, ১১:২৪
সীরাতুন্নবী (সাঃ) মানবতার সমাধান
বিবার্তা ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

হিজরি ১২ রবিউল আউয়াল আজ। বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা:-এর জন্ম ও ওফাত দিবস। ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দের এ দিনে মক্কার কুরাইশ বংশে মা আমেনার ঘরে জন্মলাভ করেন তিনি। নিরঙ্কুশ তৌহিদ ও সাম্য-মৈত্রীর শিক্ষা প্রদান শেষে ৬৩ বছর বয়সে ৬৩২ খ্রিষ্টাব্দে ১১ হিজরির ঠিক এ দিনেই তিনি আল্লাহ তায়ালার ডাকে সাড়া দিয়ে মাওলার সান্নিধ্যে গমন করেন।


রাসূল (সাঃ) যে বছর জন্ম গ্রহণ করেছেন সে বছরই হাতী যুদ্ধের ঘটনাটি হয়েছিলো। সে সময় সম্রাট নওশেরওঁয়ার সিংহাসনে আরোহণের চল্লিশ বছর পূর্ণ হয়েছিলো। জন্ম তারিখ ছিলো ২০ বা ২২ এপ্রিল। ৫৭১ ঈসায়ী সাল। সাইয়েদ সোলায়মান নদভী, সালমান মনসুরপী এবং মোহাম্মাদ পালা ফালকি গবেষণা করে এ তথ্য উদঘাটন করেছেন।


ইবনে সা’দ এর বর্ণনায় রয়েছে যে, রসূল্লাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মাতা বলেছেন, যখন তিনি জন্ম গ্রহণ করেন তখন দেহ থেকে একটি নূর বের হলো, সেই নূরের দ্বারা শামদেশের মহল উজ্জল হয়ে গেলো। ইমাম আহমদ হযরত এরবাজ ইবনে ছারিয়া থেকে প্রায় একই ধরণের একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন।


কোন কোন বর্ণনায় উল্লেখ রয়েছে যে, নবুয়তের পটভূমি হিসাবে আল্লাহ রসূলের জন্মের সময় কিছু কিছু ঘটনা প্রকাশ পেয়েছিলো। কেসরার রাজ প্রাসাদের চৌদ্দটি পিলার ধসে পড়েছিলো। অগ্নি উপাসদের অগ্নিকান্ডে নিভে গিয়েছিলো। বহিরার র্গীজা ধ্বংস গিয়েছিলো। এটি ছিলো বায়হাকির বর্ণনা। কিন্তু মোহাম্মদ গাযযালী এ বর্ণনা সমর্থন করেননি।


জন্মের পর তাঁর মা দাদা আবদুল মোত্তালেবের কাছে পৌত্রের জন্মের সুংসবাদ দিলেন। তিনি খুব খুশি হলেন এবং সানন্দভাবে তাঁকে কাবাঘরে নিয়ে গিয়ে আল্লাহর দরবারে দোয়া এবং শোকরেয়া আদায় করলেন। এ সময় তিনি তাঁর নাম রাখলেন মোহাম্মদ। এ নাম আরবে পরিচিত ছিলো না। এরপর আরবে নিয়ম অনুযায়ী সপ্তম দিনে খৎনা করলেন।


মায়ের পর তাঁকে আবু লাহাবের দাসী ছাওবিয়া দুধ পান করান। সে সময় ছাওবিয়ার কোলের শিশু নাম ছিলো মাছরুহ। ছাওবিয়া তাঁর আগে হামযা ইবনে আবদুল মোত্তালেব এবং তাঁর পরে আবু সালমা সামা ইবনে আবদুল আছাদ মাখজুমিকেও দুধ পান করিয়েছিলেন।


আল্লাহ ছাড়া মানুষকে প্রভু বানানো, আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে অন্যের বিধান মতো চলা শিরক। রাসূল সা:-এর নেতৃত্ব ছাড়া অন্য মানুষের নেতৃত্বের অধীনে থাকা ভ্রষ্টতা। রাসূল সা: বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের রাসূলদের নিয়মমতো চলা ছেড়ে দিলে গুমরাহ হয়ে যাবে।’


মানুষের ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির চেষ্টা করা, সব ভ্রান্ত মতবাদের ওপর ইসলামকে বিজয়ী করাই নবী জীবনের মিশন। ইসলামের বৈশিষ্ট্য হলো- ইসলাম মানুষকে সব ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করে। ইসলাম আল্লাহ প্রদত্ত এবং রাসূল সা: প্রদর্শিত পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান। সব নবী আ: এ পথেই আমরণ প্রাণপণ জিহাদ চালিয়ে গেছেন। নবীগণ আ: এভাবে দায়িত্ব পালন করার কারণে সমসাময়িক ধর্মীয় ও রাজনৈতিক কায়েমি শক্তির সাথে তাঁদের যুদ্ধ ও সঙ্ঘাত হয়েছে। নবীগণ আ: এভাবে দায়িত্ব পালনের সাথে সাথে তাঁদের অনুসারীদের আমাদের প্রিয় নবী সা:-এর আগমনি বার্তাও শুনিয়েছিলেন।



দুনিয়া যখন জাহিলিয়াতে ছেয়ে গিয়েছিল, তখন পৃথিবীর কেন্দ্র স্থান আরব ভূমিও অন্যায়-অবিচার আর বর্বরতায় পরিপূর্ণ ছিল। ঈসা নবীর আ: শিক্ষাও মানুষ ভুলে, খুনখারাবি, রাহাজানিসহ হাজারো অনাচারে নিমজ্জিত ছিল।


এমন এক ক্রান্তিকালে পুরো দুনিয়ার হেদায়াতের জন্য আল্লাহ আমাদের নবী সা:-কে রাহমাতুল্লিল আলামিন করে সর্বশেষ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হিসেবে, সারা বিশ্বের সব মানুষের ত্রাণকর্তাস্বরূপ পৃথিবীর কেন্দ্রীয় ভূমি মক্কায় প্রেরণ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরণ করেছি’। ৬৩ বছর নবুয়াতি দায়িত্ব সুনিপুণভাবে রাসূল সা: পালন শেষে তার অনুসারী এবং মুক্তিকামী, শান্তিপ্রিয় মানুষের জন্য বিরাট ইসলামি রাষ্ট্র এবং তার পরিচালনার জন্য কুরআন-সুন্নাহর সংবিধান ও গাইডলাইন রেখে, একাদশ হিজরি সনের ১২ রবিউল আওয়ালে উম্মতদের শোকসাগরে ভাসিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আর বলে যান, ‘আমি তোমাদের জন্য দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ এই দুটিকে আঁকড়িয়ে ধরে থাকবে, ততক্ষণ তোমরা (সুখ, শান্তি ও জান্নাতের) পথ থেকে বিচ্যুত হবে না। তার একটি হলো- আল্লাহর কিতাব, অন্যটি হলো- আল্লাহর রাসূলের সুন্নাহ (আল হাদিস)। প্রিয় নবী সা:-এর কথামতো কুরআন-সুন্নাহকে সংবিধান ও গাইডলাইন হিসেবে গ্রহণ না করার কারণেই আজ মুসলিম বিশ্বে অশান্তি। জর্জ বার্নার্ড শ বলেছিলেন, ‘মোহাম্মদ সা:-কে শাসক হিসেবে গ্রহণ করলে বিশ্ববাসী শান্তি পেতে পারে।’



প্রিয় নবী সা: কিভাবে ধর্মীয় কাজ সম্পাদন করেছেন, কিভাবে ইবাদতবন্দেগি করেছেন, সামাজিক বিষয় কিভাবে আনজাম দিয়েছেন, রাষ্ট্রীয় এবং রাজনৈতিক ব্যাপারে কী করেছেন এবং কী নির্দেশনা দিয়েছেন, তা জানা এবং মানা প্রতিটি উম্মতের জন্য ফরজ। সব ব্যাপারে প্রিয় নবী সা:-এর নীতিমালার বাস্তবায়নই মুসলমানদের কাছে নবী সা: দিবসের দাবি। এর উল্টা চলা, এর বিরোধিতা করা, এ পথে যারা চলে বা চলতে বলে, তাদের পথে অন্তরায় সৃষ্টি করা। এই অবস্থায় প্রিয় নবী সা:-এর ধর্মীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক নীতিমালাকে সর্বস্তরে, রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনিকভাবে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে মানবতার ইহকালীন সুখ শান্তি ও পরকালীন মুক্তির পথ সুগম করে, প্রিয় নবীর সা: নেতৃত্বকে যথাযথ মর্যাদা দিতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তিনি তার রাসূলকে সা: প্রেরণ করেছেন সব ধর্ম, মতবাদের ওপর ইসলামকে বিজয়ী আদর্শ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য, যদিও শিরককারীরা এটা পছন্দ করে না’ (সূরা ছফ, আয়াত নং-০৯)।


আল্লাহ বলেন, ‘তোমাদের জন্য আল্লাহর রাসূল সা:-এর জীবনে (সব ব্যাপারে) উত্তম আদর্শ আছে’। তিনি প্রিয় নবী সা:-কে আদেশ দিয়ে বলেন, হে নবী সা: আপনি তাদের বলে দেন, ‘তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবাস আমাকে অনুসরণ করো, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন’(আল-কুরআন)।


বিবার্তা/ইমদাদ

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com