কোরআন তেলাওয়াত না করলে যে শাস্তি
প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ১০:০১
কোরআন তেলাওয়াত না করলে যে শাস্তি
ধর্ম ডেস্ক
প্রিন্ট অ-অ+

পৃথিবীর সর্বাদিক পঠিত গ্রন্থ আল কোরআন। কোরআন আল্লাহর কিতাব। মহানবী হযরত মুহাম্মদ সা. এর উপর আল্লাহ তাআলা কোরআন অবতীর্ণ করেন। কোরআন শুধু আল্লাহর কিতবই নয়, এটিকে আরবি শাস্ত্রীয় সাহিত্যের সর্বোৎকৃষ্ট রচনা বলে মনে করা হয়।


মহাগ্রন্থ আল কোরআন আল্লাহ রব্বুল আলামিন পৃথিবীবাসীর জন্য সংবিধান হিসেবে প্রেরণ করেছেন। আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ সা.-এর উপর দীর্ঘ তেশ বছর যাবত এ কোরআন অবতীর্ণ করেছেন। যখনই প্রয়োজন হয়েছে আল্লাহ পথপ্রদর্শন করেছেন এ কোরআনের মাধ্যমে। এ কোরআন আল্লাহর বাণী। কোরআন পাঠে রয়েছে অগণিত পুরস্কার। এর ফজিলতও অনেক অনেক বেশি।


কোরআন তেলাওয়াত না করার শাস্তি


কোরআন আল্লাহর বাণী হওয়ায়, তা পাঠে রয়েছে অসংখ্য ফজিলত। যে পাঠ করবে না তার জন্য রয়েছে শাস্তি। কোরআন যে জানে না অন্ধ ও বধির বলে অবহিত করেছেন আল্লাহ তাআলা। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘কুরআন জানা ও না জানাদের উদাহরণ হলো এক লোক অন্ধ ও বধির আর অন্যজন চক্ষুষ্মান ও শ্রবণশক্তিসম্পন্য এরা দু’জন কি সমান হতে পারে? তবুও কি তোমরা শিক্ষা গ্রহণ করো না? (সুরা: হুদ ২৪)


মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আমার জিকির তথা কোরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে তার জন্য দুনিয়ায় হবে সংকীর্ণ জীবন আর কিয়ামতের দিন তাকে উঠানো হবে অন্ধ করে। সে বলবে, হে আমার পালনকর্তা! দুনিয়ায় তো আমি চক্ষুষ্মান ছিলাম কিন্তু এখনে কেনও অন্ধ করে উঠানো হলো? আল্লাহ তাআলা বলবেন, হ্যাঁ এভাবেই তো, আমার আয়াত যখন তোমার কাছে এসেছিল তুমি তাকে ভুলে গিয়েছিলে আজ আমি তোমাকে সে ভাবেই ভুলে গেলাম। (সুরা: ত্বহা আয়াত-১২৪-১২৬)


অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা কোরআন যারা পাঠ করে না তাদেরকে গাফিল বলে সম্মোধন করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি রহমানের স্মরণ (কোরআন) থেকে গাফিল থাকে আমি তার ওপর এক শয়তান চাপিয়ে দেই যা তার বন্ধু হয়ে যায়। এ শয়তান ঐ সব লোককে সঠিক পথে আসতে বাধা দেয়। কিন্তু ঐ লোকেরা মনে করে আমরাতো সঠিক পথেই চলছি। এমনিভাবে যখন ঐরূপ ব্যক্তি আমার নিকট আসবে তখন সে তার সঙ্গী (শয়তান) কে বলবে কী ভালো হতো যদি তোমার ও আমার মধ্যে পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্ত পর্যন্ত ব্যবধান হতো! কেননা তুমি ছিলে বড়ই নিকৃষ্ট সাথী।’ (সুরা: জুখরুফ ৩৬-৩৮)


কোরআন এর বানী
এ সম্পর্কে আরো অনেক কোরআনের আয়াত রয়েছে। আল্লাহ আরও বলেন, ‘আর সেদিন রসুল বলবে, হে আমার প্রতি পালক! আমার এ উম্মতেরা এ কোরআনকে হাসি ঠাট্টার লক্ষ্য বস্ততে পরিণত করেছিল।(সুরা: ফুরকান ৩০)


রসুল সা. এর কথা শুনে আল্লাহ তাআলা কোরআন থেকে বিমুখ ঐ বান্দাদের দিকে আর ফিরে তাকাবেন না, তিনি তাদেরকে ভুলে যাবেন। তাদের বলে দেয়া হবে, আজ আমি ও ঠিক তেমনি তোমাদের ভুলে যাচ্ছি যেমন তোমরা এই দিনের সাক্ষাত ভুলে গিয়েছিলে।


মাদের ঠিকানা এখন দোযখে এবং তোমাদের সাহায্যকারি কেউ নেই। তোমাদের এই পরিণতির কারণ হলো তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে ঠাট্ট বিদ্রূপের বিষয়ে পরিণতির করেছিলে এবং দুনিয়ার জীবন তোমাকে ধোঁকায় ফেলে দিয়েছিল। তাই আজ এদেরকে জাহান্নাম থেকেও বের করা হবে না। কিংবা বলা হবে না যে, ক্ষমা চেয়ে আল্লাহর সন্তষ্টি নাও।(সুরা: জাসিয়া ৩৪-৩৫)


জাহান্নামে কোরআন বিমুখীরা আফসোস করে বলবে, ‘হায় আফসোস! যদি আমরা ঐ কোরআনের বাণী শুনতাম ও সে অনুযায়ী আমল করতাম তা হলে আজ এ কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হতো না। (সুরা: মুলক ১০)


কোরআন শিক্ষা থেকে বিরত থাকার কারণে কোরআন তার বিপক্ষের দলিল হিসেবে উপস্থিত হবে। হযরত রসুলুল্লাহ সা. বলেন, ‘কোরআন তোমার পক্ষে কিংবা বিপক্ষের দলিল।’ (মুসলিম ৩২৮)


কোরআন তেলাওয়াত এর ফজিলত


কোরআন যারা পড়বে আল্লাহ তাআলা তাদের পরিপূর্ণ প্রতিদান দিবেন। তাদের প্রতি অনুগ্রহ বৃদ্ধি করতেই থাকবেন। মহান আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যারা আল্লাহর কিতাব তেলাওয়াত করে, নামাজ কায়েম করে এবং আমি তাদেরকে যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে (সৎকাজে) ব্যয় করে গোপনে ও প্রকাশ্যে, তাঁরা এমন ব্যবসায়ের আশাবাদী, যাতে কখনও লোকসান হয় না। যাতে আল্লাহ তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিফল দেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও বেশি দান করেন। নিশ্চয়ই তিনি অতি ক্ষমাশীল, অত্যন্ত গুণগ্রাহী। (সুরা: ফাত্বির ২৯-৩০)


যারা কোরআন পড়ে আল্লাহ তাদের মর্যাদা বহুগুনে বৃদ্ধি করে দিবেন। পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ তারাই। হযরত আলী ইবনে আবু তালিব রা. থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন তোমাদের মাঝে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি যে কোরআন শিখে এবং তা শেখায়। (তিরমিজি ২৯০৯)


প্রতি হরফে ১০ নেকি লাভ। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি কোরআনের একটি হরফ পাঠ করবে সে একটি নেকি লাভ করবে। আর প্রতিটি নেকিকেই ১০ গুণ বৃদ্ধি করে দেওয়া হয়। আমি বলি না যে, আলিফ-লাম-মীম মিলে একটি হয়ফ বরং আলিফ একটি হরফ, লাম একটি হরফ ও মীম আরেকটি হরফ। (তিরমিজি ২৯১০)


কোরআন পাঠকারীর দৃষ্টান্ত মিষ্টি কমলার মত। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, হযরত আবু মুসা আশআরি রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সা. বলেছেন কোরআন পাঠকারী মুমিনের দৃষ্টান্ত (মিষ্টি) কমলার ন্যায়, যার ঘ্রাণও উত্তম স্বাদও উত্তম। যে মুমিন কোরআন পাঠ করে না, তার দৃষ্টান্ত খেজুরের ন্যায়, যার কোন ঘ্রাণ নেই তবে এর স্বাদ আছে। আর যে মুনাফিক কোরআন পাঠ করে তার দৃটান্ত রায়হানা (ফুলের) ন্যায় যার ঘ্রাণ আছে তবে স্বাদ তিক্ত। আর যে মুনাফিক কোরআন পাঠ করে না তার দৃষ্টান্ত হানযালা(মাকাল) ফলের ন্যায়, যার সুঘ্রাণও নেই, স্বাদও তিক্ত। (বুখারি ৫৪২৭)


কোরআন এমন সুপারিশ কারী যার সুপারিশ (তেলাওয়াত কারীর পক্ষে) কবুল করা হবে। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে,‘হযরত জুবায়েদ রহ. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন কোরআন এমন সুপারিশ কারী যার সুপারিশ (তেলাওয়াত কারীর পক্ষে) কবুল করা হবে। এমন বিতর্ক কারী যার বিতর্ক (তেলাওয়াত কারীর পক্ষে) গ্ৰহণ করা হবে। অতএব যে কোরআনকে সামনে রাখবে (তেলাওয়াত করবে ও তদানুযায়ী আমল করবে) কোরআন তাকে জান্নাতের দিকে নিয়ে যাবে। আর যে পিছনে রাখবে (তেলাওয়াত করবেনা ও তদানুযায়ী আমল করবে না) কোরআন তাকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। (ইবনে হিব্বান ১২৪)


বিবার্তা/মাসুম

সর্বশেষ খবর
সর্বাধিক পঠিত

সম্পাদক : বাণী ইয়াসমিন হাসি

এফ হক টাওয়ার (লেভেল-৮)

১০৭, বীর উত্তম সি আর দত্ত রোড, ঢাকা- ১২০৫

ফোন : ০২-৮১৪৪৯৬০, মোবা. ০১৯৭২১৫১১১৫

Email: [email protected], [email protected]

© 2021 all rights reserved to www.bbarta24.net Developed By: Orangebd.com